২৪ জুলাই নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌর্য এয়ারলাইন্সের একটি বিমান আকাশে ওডার কিছুক্ষণের মধ্যেই আছড়ে পড়ে মাটিতে। তাতে পাইলট ছাড়া মারা যান ১৮ জন যাত্রী এবং ক্রু সদস্য। নেপালের রাজধানী কাটমান্ডু শহরের ব্যস্ততম ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি খুবই বিপজ্জনক বলে পরিচিত। এখানে বিমান টেকঅফ এবং ল্যান্ড করানো দুইই খুবই চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। চারদিকে পাহাড়ে ঘেরা এই বিমানবন্দরে এখনও পর্যন্ত ১৮টি বিমান দুর্ঘটনার মুখে পড়েছে। তবে এর থেকেও বিপজ্জনক আরও কয়েকটি বিমানবন্দর রয়েছে পৃথিবীতে। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেরকম কয়েকটি বিমানবন্দর সম্পর্কে। যেখানে বিমান নিয়ে যেতে বুক কাঁপে দূঁদে পাইলটদেরও।
বাররা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, স্কটল্যান্ড
স্কটল্যান্ডের এই বিমানবন্দর পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক বিমানবন্দের মধ্যে অন্যতম। কারণ এর রানওয়ে সমুদ্রপৃষ্ট থেকে মাত্র পাঁচ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। সমুদ্রের পাশেই এর অবস্থান হওয়ায়, মাঝেমধ্যেই বড় ঢেউ এসে বাররা বিমানবন্দরের রানওয়ে ভাসিয়ে দেয়। ফলে সেই সময় এখানে বিমান ওঠানামা অসম্ভব হয়ে যায়।
কুরশেভল বিমানবন্দর, ফ্রান্স
সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ৬,৫৮৮ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত ফ্রান্সের কুরশেভল বিমানবন্দর। এখানকার রানওয়ে মাত্র ১,৭৬১ ফুট লম্বা এবং বেশ খাঁড়া ও নিম্নমুখী ঢাল বিশিষ্ট। এই বিমানবন্দরে বিমান অবতরণের আগে বেশ উঁচু কয়েকটি পাহাড় ডিঙিয়ে আসতে হয় পাইলটদের। শুধুমাত্র দিনের বেলা আবহাওয়া ভালো থাকলেই এখানে বিমান অবতরণের অনুমতি মেলে।
মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, মালদ্বীপ
মালদ্বীপের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হওয়ায় মালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সারাদিন অসংখ্য বিমান ওঠানামা করে। কিন্তু এই বিমানবন্দরের রানওয়ে এতটাই ছোট যে এটি একটি আস্ত দ্বীপের সমান দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট। প্রায় চারদিকে সমুদ্র বেষ্টিত হওয়ায় এখানে বিমান অবতরণের সময় খুব সতর্ক থাকতে হয় পাইটলদের। একটু ভুলচুক হলেই বিমান সোজা সমুদ্রে গিয়ে পড়বে।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বিমানবন্দর, পর্তুগাল
পর্তুগালের রত্ন তথা গোটা বিশ্বের নয়নের মণি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর নামে এই বিমানবন্দর কিন্তু ইজ্ঞিনিয়ারিং বিস্ময়ের এক অনন্য নজির। এই বিমানবন্দরের এলাকা এতটাই ছোট যে সমুদ্রের উপর ব্রিজ বানিয়ে রানওয়ে লম্বা করতে হয়েছে। রানওয়েটি দাঁড়িয়ে রয়েছে ব্রিজের ১৮০টি স্তম্ভের উপর। যথেষ্ট সরু রানওয়েতে বিমান অবতরণ করানো এমনিতেই যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের। তার ওপর আবার সবসময় এখানে সামুদ্রিক হাওয়া চলে, ফলে পাইটলদের কাজ আরও কঠিন হয়ে যায় পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বিমানবন্দরে।
জিব্রাল্টার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, যুক্তরাজ্য
ব্রিটিশদের দখলে থাকা জিব্রাল্টারের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিও যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। এই বিমানবন্দরে অবতরণের সময় সামনেই একটি একশিলা পর্বত পড়ে। যা এড়িয়ে নামতে হয় পাইলটদের। রানওয়েটিও শহরের মধ্যিখানে অবস্থিত এবং পাথরের খাঁড়া দেওয়ালে ঘেরা। এই বিমানবন্দরের রানওয়েটির আরেকটি চমক রয়েছে। তা হল রানওয়েটি একটি ব্যস্ত সড়কের মাঝখান দিয়ে গিয়েছে। ফলে এখানে বিমান ওঠানামার সময় ওই সড়কে গাড়ি দুই পাশে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয় লেভেল ক্রশিংয়ের মতো।
পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ভূটান
ভূটান এমনিতেই হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এক দেশ। এখানকার বিমানবন্দরগুলিও তাই বেশ বিপজ্জনক। তবে পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি সবচেয়ে বিপজ্জনক। কারণ, এই বিমানবন্দর এতটাই বিপজ্জনক যে বিশ্বে মাত্র ২৪ জম পাইটল রয়েছেন যারা পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান অবতরণের অনুমতি পান। চারদিকে খাঁড়া পাহাড় ডিঙিয়ে এখানে বিমান নামানো সত্যিই বড় চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি এথানকার রানওয়েও যথেষ্ট ছোট।
তেনজিং হিলারি বিমানবন্দর, নেপাল
যারা এভারেষ্ট বেস ক্যাম্প ট্রেকিংয়ে যান, তাঁদের কাছে অতি পরিচিত নেপালের তেনজিং-হিলারি বিমানবন্দরটি। তবে এই বিমানবন্দর প্রায়ই ঘন কুয়াশা এবং খারাপ আবহাওয়ার জন্য দৃশ্যমানতার মান উত্তীর্ণ করতে পারে না। এছাড়া এখানে সারা বছরই প্রবল হাওয়া চলে। ফলে মাঝেমধ্যেই এখানে বিমান অবতরণ করতে গিয়ে বিপদে পড়েন পাইলটরা। চারদিকে উঁচু পাহাড় বিশিষ্ট ২,৮৪৬ মিটার উচ্চতায় এই বিমানবন্দরে অনেক সময়ই অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়। পাশাপাশি অসমান রানওয়ের এই বিমানবন্দরে বিমান অবতরণ যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ।
Discussion about this post