আর জি কর কাণ্ড নিয়ে যখন রীতিমতো কোনঠাসা তৃণমূল নেত্রী ঠিক সেই সময়ই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মঞ্চে ভাষণ দিলেন তিনি। সেখানে তিনি কখনও অভিযোগের তির ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন অন্যদিকে। কথনও তিনি বিজেপিকে নিশানা করলেন পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশ বানানোর ষড়ষন্ত্র করার কথা বলে। আবার সব ধর্ষকদের দ্রুত বিচার করে ফাঁসি দেওয়ার আইন আনার কথাও বললেন। তাঁর দাবি, “১০ দিনের মধ্যে ধর্ষকদের ফাঁসি চাই। স্পিকারকে বলে বিধানসভায় বিল আনবো। তারপর রাজ্যপালের কাছে পাঠাব”। আবার কলকাতা পুলিশের ভূয়সী প্রশংশাও শোনা গেল তাঁর গলায়। গত ১৫ আগস্টের পর থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রকাশ্যে কিছুই বলতে শোনা যায়নি, বা সামনা-সামনিও আসেননি। ফলে সকলেরই কৌতুহল ছিল, টিএমসিপি প্রতিষ্ঠা দিবসে তিনি কি বার্তা দেন সেটা শোনার। তবে এদিন অনেকটাই অগ্রাসী মনোভাব দেখা গিয়েছে তাঁর ভাষণে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধর্ষকদের ফাঁসি চেয়ে বিল আনার কথা বললেও রাজ্যের রাজ্যপাল কিন্তু দুষছেন শাসকদলকেই। রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস বলেছেন, বাংলার মানুষ বিচার চাইছে। কিন্তু রাজ্য প্রশাসন তাঁদের ওপরই লাঠিচার্জ করছে, অত্যাচার করছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা উদ্ধৃতি করে তিনি বলেন অবিলম্বে এই ঘৃণ্য খেলা বন্ধ করতে হবে।
যদিও এদিন কলকাতায় গান্ধি মূর্তির পাদদেশে তৃণমূলের ছাত্র সমাবেশ থেকে মুখ্যমন্ত্রী আরও মারাত্মক দাবি করেন। তাঁর দাবি, কেউ কেউ মনে করছেন এটা বাংলাদেশ। আমি ওদের ভালোবাসি। কিন্তু মনে রাখবেন, বাংলাদেশ একটা আলাদা রাষ্ট্র, ভারতবর্ষ একটা আলাদা রাষ্ট্র। তিনি এই ব্যাপারে বিজেপিকেই নিশানা করলেন, সেটা বুঝিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মোদিবাবু আপনার পার্টিকে দিয়ে আগুন লাগাচ্ছেন। মনে রাখবেন, বাংলায় যদি আগুন লাগান, অসমও থেমে থাকবে না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী বাংলার সাধারণ মানুষের স্বতস্ফূর্ত আন্দোলন দেখে ভয় পেয়েছেন? বঙ্গ বিজেপির সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার এই বিষয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। তাঁর দাবি, আজ মুখ্যমন্ত্রীর মুখে বাংলাদেশের জামাতের ভাষা শোনা গেল।
যদিও এদিন টিএমসিপি প্রতিষ্ঠা দিবসের দিনটি মুখ্যমন্ত্রী নির্যাতিতাদের এবং তাঁদের পরিবারের লোকজনদের উৎসর্গ করার কথাও বলেন। তিনি এখনও বলছেন, কলকাতা পুলিশ তদন্ত করলে সাতদিনের মধ্যেই প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে সাজা দিতেন। কিন্তু সিবিআই এখনও ব্যর্থ। তাই আগামী শুক্রবার গোটা বাংলায় ছাত্র-ছাত্রীদের নিজেদের কলেজের গেটে ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন করার আহ্বান জানান। এই বিষয়ে বিরোধীদের বক্তব্য, একই দাবিতে ছাত্র সমাজের নবান্ন অভিযান পুলিশ দিয়ে দমিয়ে দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজনৈতিক মহলের অভিমত, আর জি কর কাণ্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এখনও চাপে।
Discussion about this post