বাংলাদেশের অন্তরবর্তী সরকারকে সরকারি ভাবে গুরুত্ব দিতে নারাজ ভারত সরকার। কারণ সেদেশে অন্তরবর্তী সরকার গঠনের অন্তত ৩-৪ মাসের মধ্যে ওই সরকারের সঙ্গে কমপক্ষে একটি পররাষ্ট্র নীতি নির্ধারণ বিষয়ক বৈঠক করতো ভারত সরকার এমবটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়াও বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশ যখন প্রাসঙ্গিক হওয়ার চেষ্টা করছে ভারতকে হুশিয়ারি দিয়ে উস্কে দেওয়ার চেষ্টা করছে তখন ভারত সরকার একেবারেই পাত্তা দিচ্ছেনা বাংলাদেশের ফাঁকা আওয়াজে, তার একটাই কারণ ইউনুস সরকারকে নির্বাচিত সরকারের গুরুত্ব দিতে চায়না মোদি সরকার। এটা একপ্রকার ভারতের চালও বলা যায়, এই ধারণার কারণ বাংলাদেশের অন্তরবর্তী সরকারকে যদি ভারত সরকার গুরুত্ব দিত তবে সেই সরকার আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতো আর সেই সুযোগটাই দিতে চাইছেনা ভারত।
বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে এক ধরনের উত্তেজনামূলক সম্পর্ক চলছে। একদিকে যেমন দুই দেশের সামাজিক মাধ্যমে পরস্পরের বিরুদ্ধে বিষোদগার চলছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে উত্তেজনাকর বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই ভারতে বাংলাদেশের উপ হাইকমিশনে হামলার মতো ঘটনাও ঘটেছে।
মূলত, ভারত বাংলাদেশের মধ্যকার সম্পর্কের এই টানাপোড়েন শুরু হয়েছে ভারত সরকার বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার পর থেকে।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতারা প্রকাশ্যে বাংলাদেশ বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। এমনকি, পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠানোর ব্যবস্থা করতেও বলেছিলেন। তার সেই বক্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মহলে চর্চাও হয়েছে।
বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ভারতের গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে ভিত্তিহীন নেতিবাচক খবর প্রকাশ করা হচ্ছে।
যদিও দুই দেশের সরকারের পক্ষ থেকেই এসব উত্তেজনা নিরসনের বক্তব্য দেয়া হয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান কী? দুই প্রতিবেশী দেশের এই উত্তেজনাকে কোন দল কীভাবে দেখছে?
বাংলাদেশ মিডিয়ার দাবি ছিল শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর ভারতীয় মিডিয়াগুলো বাংলাদেশ নিয়ে এত বেশি নেতিবাচক খবর পরিবেশন করছে।
সেই প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দল– বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর মতামত জানতে চাওয়া হলে, আওয়ামী লীগ বাদে বাকি দুই দলের নেতারাই বলেছেন যে ভারত নেতিবাচক প্রচার চালাচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানা কারণে ভারত বিরোধিতার বিষয়টি নতুন নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এটি আবার নতুন করে উস্কে দিচ্ছে কোনও কোনও রাজনৈতিক দলকে।
তবে এই দফায় দুই দেশের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি টানাপোড়েন তৈরি হয় ত্রিপুরার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার পর। ওই ঘটনার পর বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ও সরকার এক হয়ে জাতীয় ঐক্যের ঘোষণাও দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ বাদে বাদে দুটি বড় দলের নেতারাই বিবিসি বাংলাকে বলেছেন যে তারা চান– রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের, জনগণের সাথে জনগণের মাঝে বন্ধুত্ব হোক।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকারে বলেন “ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তো বাংলাদেশ কোনো মন্তব্য করছে না, তাহলে ভারত কেন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছে? যদি কোনো সংকট থেকে থাকে, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণ তার সমাধান করবে।”
Discussion about this post