সামরিক শক্তির দিক থেকে কোন দেশ কতটা শক্তিশালী, তা নিয়ে প্রতি বছর একটা সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স’ শিরোনামে একটি তালিকাও প্রকাশিত হয়, যা দেখে বোঝা যায় কোন দেশ সামরিক শক্তির নিরিখে কোথায় অবস্থান করছে। তবে ২০২৫ সালের যে তালিকা প্রকাশ করেছে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স’, তা কিন্তু চমকে দেওয়ার মতোই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চিন ও ভারত নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে বিশ্বের সর্বোত্তম চার শক্তিশালী দেশ হিসেবে। তবে রাশিয়া ও চিনের পয়েন্ট কমেছে, অপরদিকে ভারতের পয়েন্ট গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। আবার পরমাণু শক্তিধর দেশ পাকিস্তান পিছলে বেরিয়ে গিয়েছে তালিকার প্রথম দশ স্থান থেকে। অপরদিকে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে ভারতের প্রতিবেশী বাংলাদেশ। তাঁরা গত বছরের তুলনায় আরও দুই ধাপ এগিয়ে এসেছে। আসুন এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স’ অনুযায়ী কোন দেশের সামরিক শক্তি কতটা এগোলো বা পিছিয়ে গেল।
জানা যায়, মোট ৬০টি আলাদা আলাদা বিষয়কে বিচার-বিশ্লেষণ করে এই তালিকা তৈরি করে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইনডেক্স’। মূলত দেখা হয়, সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সামরিক বাজেট, জিডিপি, কি কি অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে, সৈন্য সংখ্যা কত, পরমাণু হাতিয়ার, যুদ্ধের সাজ-সরঞ্জাম ইত্যাদি। সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’ নামে ওই সংস্থার গবেষকরা একটা পয়েন্ট দেন সংশ্লিষ্ট দেশটিকে। ওই সংস্থার বক্তব্য, যে দেশের পয়েন্ট শূন্যের সবচেয়ে কাছে থাকবে, তাঁরাই সামরিক শক্তিতে সবচেয়ে উপরের দিকে থাকবে। সেই দিক থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে এগিয়ে। ২০২৫-এ ওয়াশিংটনের ঝুলিতে ০.০৭৪৪ পয়েন্ট। যদিও ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’-এর তালিকায় প্রথম দিন থেকেই এক নম্বর স্থানটি ধরে রেখেছে আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রের ধারেকাছে নেই অন্য কোনও দেশ। বিশ্বের ১০০-টির বেশী স্থানে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক ঘাঁটি তৈরি করেছে। ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’-এর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া। যদিও পয়েন্ট কিছুটা কমেছে পুতিনের দেশের। সামরিক শক্তির নিরিখে মস্কোর ঝুলিতে ০.০৭৮৮ পয়েন্ট। বিশ্লেষকদের মতে, ২০২২ সাল থেকে চলা ইউক্রেন যুদ্ধে রুশ ফৌজের সুনাম কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে কমিউনিস্ট চিন। যদিও রাশিয়ার সঙ্গে তাঁদের পয়েন্ট এক। তবুও তাঁরা তৃতীয় স্থানে রয়েছে। তবে চিন ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান উড়িয়ে তাক লাগিয়েছে, রণতরীর নিরিখে তাঁরা বিশ্বের একনম্বর। এদিকে বিগত বছরগুলির মতো ২০২৫ সালেও ভারত সামরিক শক্তিতে বিশ্বের চতুর্থ স্থানে রয়েছে। ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’-এর সমীক্ষকেরা নয়াদিল্লিকে দিয়েছেন ০.১১৮৪ পয়েন্ট। তিন বাহিনী মিলিয়ে ভারতের মোট সৈন্যসংখ্যা ৫১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫৫০ জন। ২০২৪-’২৫ আর্থিক বছরে ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট বরাদ্দ ছিল ৬ লক্ষ ২১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। যা বাংলাদেশের মূল বাজেটের বেশি। আসন্ন অর্থবর্ষে এই অঙ্ক আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। এই তালিকায় পাঁচ, ছয় এবং সাত নম্বর স্থানে রয়েছে যথাক্রমে দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স।
অনেকেই কৌতুহলি দৃষ্টিতে খুঁজছেন, এই তালিকায় ভারতের দুই দেশ পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়। পাকিস্তান এই তালিকায় পেয়েছে ১২তম স্থান। গত বছরের তুলনায় তিন ধাপ পিছিয়ে গিয়েছে শাহবাজ শরীফের দেশ। ইসলামাবাদের প্রাপ্ত ০.২৫১৩ পয়েন্ট। পরমাণু শক্তিধর এই দেশের অধঃপতন কেন? বিশ্লেষকদের মতে, গত বছরের শেষ দিকে আফগানিস্তানের তালিবান সরকারের সঙ্গে চলা সীমান্ত সংঘর্ষ পাক সেনার র্যাঙ্কিংয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। পাশাপাশি তীব্র আর্থিক সংকটের জেরে পাকিস্তানের সামরিক বরাদ্দও কমেছে। পাশাপাশি আবার আমেরিকা তাঁদের ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ফলেও পাকিস্তান ক্রমশ নিচের দিকে নামছে। অপরদিকে সামরিক শক্তিতে আরও দুই ধাপ এগোল বাংলাদেশ! গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার ইনডেক্সের তথ্য অনুযায়ী ২০২৫ সালে বিশ্বে সামরিক শক্তির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫ তম। ওই প্রতিষ্ঠানের তথ্যে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৩৭ তম, ২০২৩ সালে ছিল ৪০তম। অর্থাৎ গত এক বছরে বাংলাদেশের সামরিক শক্তি অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার তাঁরা পাকিস্তান, চিন ও তুরস্কের থেকে সামরিক অস্ত্র ও যুদ্ধবিমান কিনতে আগ্রহী।
বিশ্বে ১৪৫টি দেশের সামরিক শক্তির বিচার করে ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার’ যে তালিকা তৈরি করেছে তাতে ভারতের অবস্থান সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য। কারণ, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ভারত ক্রমশ আত্মনির্ভর হয়ে উঠছে। প্রতিনিয়ত দেশীয় প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান ও রণতরী যুক্ত হচ্ছে ভারতের সামরিক সম্ভারে। পাশাপাশি খুব শীঘ্রই ভারতের হাতে চলে আসবে সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র। ফলে আগামী কয়েক বছরে ভারত আরও উন্নতি করবে বলেই মেনে নিচ্ছেন বিশেষজ্ঞমহলের একাংশ। অপরদিকে বাংলাদেশ উন্নতি করলেও এখনও অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। কারণ তাঁদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আমদানি নির্ভর।
Discussion about this post