বাংলাদেশ যে দিনে দিনে কট্টরপন্থী ইসলামী মৌলবাদীদের দখলে চলে যাচ্ছে তা ভারত বহু আগেই বুঝতে পেরেছিল। জামায়তে ইসলামী, হিজবুত তেহরী, জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ বা জেএমবি বা অন্যান্য কিছু কট্টরপন্থী ইসলামিক সংগঠন এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। মুহাম্মদ ইউনূস হলেন সামনের পর্দা, আর পর্দার আড়ালে বসে নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে জামাত ও হিজবুতের প্রধানরা। গত বছরের জুন-জুলাইয়ের বাংলাদেশের পড়ুয়াদের যে আন্দোলন হয়েছিল জামায়তে ইসলামী ও হিজবুত তেহরী সেটাকে কার্যত হাইজ্যাক করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। ইতিমধ্যেই বহু তথ্য সামনে এসেছে শেখ হাসিনাকে হঠানোর পরিকল্পনা যে একটা গভীর ষড়যন্ত্র ছিল তার প্রমানে। আমেরিকার ডিপ স্টেট ও তাঁদের সহযোগীরা যেমন এই ষড়যন্ত্রের অন্যতম কুশীলব, তেমনই বড় ভূমিকা নিয়েছিল পাক গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই। মুহাম্মদ ইউনূসও তাঁদের একটি অংশ, বলা ভালো মার্কিন ডিপ স্টেটের একজন রাজনৈতিক মুখ। ফলে সফলভাবেই বাংলাদেশে একটা গণঅভ্যুত্থান সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু জামায়তের একটা পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়। সেটা হল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেইজ্জতি বা নৃশংস হত্যার পরিকল্পনা। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী গত ৫ আগস্ট গণভবনে যে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যেই বেশ কয়েকজন জিহাদি ছিল। যাদের টার্গেট ছিল শেখ হাসিনা। ওই জমায়েতকে কাজে লাগিয়ে হাসিনাকে গণভবন থেকে টেনে বের করে প্রকাশ্যেই ফাঁসি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সেটা আঁচ করতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তাই তিনি চটজলদি ভারতের সাহায্য পার্থনা করেন এবং সেনা কপ্টারেই শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। প্রাণে বাঁচেন হাসিনা, কিন্তু এর জন্য সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জামায়তে ইসলামী ও হিজবুত তেহরীর চিরশত্রুতে পরিণত হন।
এর পরেই বাংলাদেশে আরও একটা অভ্যুত্থানের প্লট নির্মান শুরু হয় এবং সেটা সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে। আমরা জানি দিন কয়েক আগেই বাংলাদেশ সেনায় একটা ক্যু বা অভ্যুত্থানের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে সরিয়ে দিয়ে আরেকজনকে ওই পদে বসানোর পরিকল্পনা হয়েছিল। তবে তা সফল হয়নি। কিন্তু কেন বাংলাদেশ সেনায় ক্যু সফল হল না, কে বা কারা এই পরিকল্পনা করেছিল, কিভাবেই বা ঠেকাতে পারলেন ওয়াকার-উজ-জামান? আসুন এই প্রশ্নগুলির উত্তর জানার চেষ্টা করি আমরা। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করায় তাঁর প্রতি ক্ষেপে লাল হয়ে যায় ইসলামী কট্টরপন্থীরা। সেই থেকেই তাঁকে হঠানোর পরিকল্পনা শুরু হয়। পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই জামাতের সঙ্গে এই পরিকল্পনায় অংশ নেয়। ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা র-এর আধিকারিকরা এই পরিকল্পনার কথা টের পেয়ে যান অনেকটা আগেই। ফলে তাঁরাও কড়া নজর রাখতে শুরু করে পরিস্থিতির দিকে। সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানকেও এই বিষয়ে সতর্ক করে ভারত সরকার।
ভারতীয় মিডিয়াগুলি দাবি করেছিল, বাংলাদেশের সেনা অভ্যুত্থানের মাস্টারমাইন্ড হল লেফটান্যান্ট জেনারেল ফইজুর রহমান। তাঁর সঙ্গে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান আব্দুল করিম ভূঁইয়া। বাংলাদেশের ৫৬ জন মেজর জেনারেলের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ জনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফেলেছিলেন ফইজুর রহমান। এমনকি বায়ুসেনা ও নৌসেনাবাহিনীরও বেশ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু পরবর্তী সময় এদের মধ্যে অনেকেই পিছিয়ে আসেন ক্যু করা থেকে।
কিন্তু এই অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে বর্তমান সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান এই দুজনকেই নজরবন্দি করে ফেলেন। এবার আসি ফইজুর রহমানের পরিকল্পনা প্রসঙ্গে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যে কয়েকটা সেনা ডিভিশন আছে তার মধ্যে ঢাকা এবং তার আশেপাশের দুটি বড় ডিভিশন মূলত সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। লেফটান্যান্ট জেনারেল ফইজুর রহমান পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের খুব ঘনিষ্ট এবং জামাতপন্থী হিসেবে পরিচিত। ফলে তাঁকেই সামনে রেখেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ক্যু করার পরিকল্পনা করে পাকিস্তান। পরিকল্পনা অনুযায়ী ফইজুর রহমান অতি গোপনে বাংলাদেশের সেনা ডিভিশনগুলির কম্যান্ডান্টদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। যেমন, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের ৬৬ রংপুর ডিভিশন, পশ্চিমাঞ্চলে ৩৩ কুমিল্লা ডিভিশন, দক্ষিণাঞ্চলে চট্টগ্রামে ২৪ ডিভিশন এবং কক্সবাজারে ১০ ডিভিশন, বরিশালে ৭ ইনফ্র্যান্টি ডিভিশন, পূর্বাঞ্চলের যশোরে ৫৫ ডিভিশন ইত্যাদি। কিন্তু বাংলাদেশের সেনা অভ্যুত্থানের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় বরাবর যে ডিভিশনগুলি সবচেয়ে উল্লেথযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে সেগুলি হল উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বগুড়ায় ১১ ডিভিশন এবং ঢাকার সাভার ক্যান্টনমেন্টে ভিতর ৯ ইনফ্র্যান্টি ডিভিশন ও মীরপুরের ৪৬ ইনডিপেন্ডেন্ট ইনফ্র্যান্টি ডিভিশন। গোয়েন্দা সূত্র বলছে ফইজুর রহমান এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ডিভিশনকে বাগে আনতে অসমর্থ হন। জানা গিয়েছে ঢাকার সাভার ক্যান্টনমেন্টে ভিতর ৯ ইনফ্র্যান্টি ডিভিশনের জিওসি ফইজুর রহমানের পরিকল্পনার বিষয়টি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানকে জানিয়ে দেন। অপরদিকে ভারতও ওয়াকারকে সাবধান করেছিল। ফলে দেরী না করে ওয়াকার-উজ-জামান ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কিন্তু যেহেতু বিদ্রোহীরা সেনাপ্রধানের প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর নজরদারি করছিল তাই সেনাপ্রধান মধ্য আফ্রিকা সফরে চলে যান ভারতের পরামর্শে। সেখানে গিয়ে তিনি বৈঠক করেন ভারতীয় গোয়েন্দা কর্তা এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এজেন্টদের সঙ্গে। অপরদিকে ভারতের তরফেও ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তাঁদের বোঝানো গিয়েছিল, যদি ১ লক্ষ ৬০ হাজারের সেনাবাহিনীর রাশ যদি জামাত ও আইএসআইয়ের হাতে চলে যায় তাহলে ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে যাবে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পেরেই পেন্টাগন থেকে ফোন যায় মুহাম্মদ ইউনূসের দফতরে। আর মার্কিন হুঁশিয়ারি পেতেই ব্যাকফুটে চলে আসেন ইউনূস। এই বিষয়ে একটা কথা বলা যায়, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ঢাকার সাভার, মীরপুর এবং বগুড়ার মতো তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ডিভিশন এবং বরিশালের বরিশালে ৭ ইনফ্র্যান্টি ডিভিশনের সমর্থন পেয়েছিলেন। ফলে এ যাত্রা বেঁচে যান ওয়াকার-উজ-জামান। মধ্য আফ্রিকা থেকে ফিরেই তিনি নজরবন্দি করেন ফইজুর রহমান, কামরুল হাসান, আব্দুল করিম ভূঁইয়া-সহ বেশ কয়েকজন জিওসিকে। তবে তাঁদের এখনও গ্রেফতার করা হয়নি বলেই খবর, কিন্তু তাঁদের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ-সহ কাজকর্মেও রাশ টানা হয়েছে বলে খবর।
Discussion about this post