মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা মহাপরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড ভারতে বসে বাংলাদেশ সম্পর্কে কড়া বিবৃতি দিলেন। যা নিয়ে বাংলাদেশি মিডিয়ায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বেশিরভাগ মিডিয়া দাবি করছে, ভারতের ভুল তথ্যের ভিত্তিতেই মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান এহেন মন্তব্য করেছেন। সোমবার রাতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার দফতর থেকেও তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যকে বিভ্রান্তিকর এবং বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ও সুনামের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করা হয়েছে। ফেসবুকে একটি পোস্ট করে প্রধান উপদেষ্টার দফতর লিখেছে, “বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ইসলাম চর্চার জন্য সুপরিচিত এবং চরমপন্থা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে”। পাশাপাশি গ্যাবার্ডের মন্তব্য কোনও নির্দিষ্ট প্রমাণ বা অভিযোগের ওপর ভিত্তি করে করা হয়নি বলেও বাংলাদেশ সরকার ওই বিবৃতিতে দাবি করেছে। যেমনটা বলা হয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের করা ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মন্তব্য নিয়েও। সেবারও বাংলাদেশ সরকার সরাসরি ট্রাম্পের মন্তব্য খারিজ করে একই ভাষায় বিভ্রান্তিকর ও মিথ্যা বলে দাবি করেছিল। এবারও তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যকে একই ভাষায় খারিজ করলো বাংলাদেশ সরকার। এখন দেখার মার্কিন প্রশাসন সত্যিই কোনও পদক্ষেপ নেয় কিনা।
এবার আসি আসল প্রসঙ্গে। আগে জেনে নেওয়া যাক বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ঠিক কি কি বলেছেন তুলসী গ্যাবার্ড। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এএনআই ও এনডিটিভি-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বেশ কয়েকটি মন্তব্য করেন। যেখানে তিনি বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের “নিপীড়ন ও হত্যা” করা হচ্ছে বলে যেমন অভিযোগ করেন তেমনই ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তৎপরতা এবং খিলাফত স্থাপনের প্রচেষ্টা সম্পর্কেও বলেছেন। বাংলাদেশী মিডিয়ার একাংশ এবং ইউটিউবারদের একটা বড় অংশ দাবি করছে, তুলসী গ্যাবার্ড ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সুরেই এই বক্তব্য রেখেছেন। অর্থাৎ ভারত তাঁকে যে তথ্য দিয়েছে, তার ভিত্তিতেই তুলসী এই মন্তব্য করেছেন। কিন্তু আদৌ কি তাই? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী দেশের গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড, তাঁর অধীনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ১৮টি গোয়েন্দা সংস্থা। ফলে তাঁর কাছে যে যা তথ্য দেবে আর তিনি সেই অনুযায়ী কথা বলবেন এটা কিভাবে সম্ভব? তুলসী গ্যাবার্ড ও অজিত ডোভালের মধ্যে যে একান্ত বৈঠকে হয়েছে, জানা যাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট তিনটি ইস্যু নিয়ে তথ্য আদান প্রদান হয়েছে এবং তা নিয়েই সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে।
এই তিনটি ইস্যুর প্রথমটি হল বাংলাদেশের জঙ্গি ও ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠনগুলির ব্যাপক উত্থান। দ্বিতীয়টি হল এই ধর্মীয় উগ্রবাদী সংগঠনগুলি এবং জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে বিদেশী জঙ্গি সংগঠনের যোগাযোগ। সেই সঙ্গে কিছু বিদেশী রাষ্ট্রের ইন্ধন ও মদত। তৃতীয়টি হল ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ও হত্যার বিষয়। জানা যাচ্ছে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এই তিনটি ইস্যুতে বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ-সহ বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সার্বিকভাবে তুলে ধরেন। অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিরেক্টর অফ ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স তুলসী গ্যাবার্ডও তার গোয়েন্দা সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য ভারতের হাতে তুলে দেন। সূত্রের খবর, সূত্র বলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঢাকায় অবস্থিত তাদের দূতাবাস থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট হাতে পেয়েছে। গত ৭ মার্চ ঢাকায় হিজবুত তেহেরির ডাকে মার্চ ফর খিলাফত মিছিল নিয়ে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস উদ্বেগজনক রিপোর্ট দিয়েছে। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বয়ং ডোনাল্ড ট্রাম্প। পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশও যে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে এই বিষয়ে সহমত প্রকাশ করেন দুই দেশের গোয়েন্দা প্রধানরা। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে, ২০ দেশের গোয়েন্দা প্রধানদের যে সম্মেলন হল তাতে অজিত ডোভাল ছাড়াও ভারতের তরফে উপস্থিত ছিলেন র-এর প্রধান এবং ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর ডিরেক্টর। ইউনূসের সরকার যতই দাবি করুক বাংলাদেশে এখন আর সংখ্যালঘুদের উপর কোনও নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে না, কিন্তু আদতে প্রকৃত সত্য অজিত ডোভাল উন্মোচন করেছেন তুলসী গ্যাবার্ডের সামনে। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি ঘটনার পুংখানুপুঙ্খ বিবরণ ও প্রমান দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা প্রধানকে। অপরদিকে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসও বেশ কয়েকটি উদ্বেগজনক রিপোর্ট দিয়েছে। ফলে তুলসী গ্যাবার্ড যে ভারতের কথায় নাচলেন সেটা বলা যাবে না। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, ইসকন সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর গ্রেফতার ও বিনা বিচারে জেলে থাকার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয় ডোভাল ও তুলসীর মধ্যে। ইসকনের ভক্ত তুলসী এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েই বিচার করবেন এটা বলাই বাহুল্য। ফলে খুব শীঘ্রই মুহাম্মদ ইউনূসের ঘাড়ে বড় ধরণের বিপদ নেমে আসতে পারে। জানা যাচ্ছে, অতি শীঘ্র ঢাকায় যাবেন ট্রাম্প প্রশাসনের দক্ষিণ এশিয় বিষয়ক ক্যাবিনেট সদস্য পল কাপুর। অন্যদিকে খবর পাওয়া যাচ্ছে সোমবার রাতেই শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা হয়েছে মার্কিন গোয়েন্দা মহাপরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের। ফলে দ্রুতই বড় কোনও পদক্ষেপ দেখা যাবে বাংলাদেশের ওপর, এমনটাই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
Discussion about this post