চড়া মূল্যবৃদ্ধি, বৈদেশিক বাণিজ্যে মন্দা, আমদানি খরচ বৃদ্ধি ও ঋণের চাপে বেসামাল বাংলাদেশ। যে দেশের প্রধান একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ, যিনি বিশ্ব শান্তির জন্য নোবেলজয়ী, সেই মুহাম্মদ ইউনূসের রাজত্বই বাংলাদেশ দ্রুত অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া হওয়ার অবস্থায় পৌঁছে গেছে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হল, ইউনূস সাহেবের মাত্র পাঁচ মাসের শাসনকালেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি পতন লক্ষ্য করা গিয়েছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাঙ্ক, এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল যে রিপোর্ট পেশ করেছে তাতেই পরিষ্কার হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভূমিধস পতন। চলতি আর্থিক বছরে দেশটির জিডিপি বৃদ্ধির হার নেমে যেতে পারে ৪ শতাংশের নিচে নেমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক ঋণ প্রদানকারী এই সংস্থাগুলি। যেখানে মাত্র পাঁচ মাস আগেও শেখ হাসিনার শাসনকালে বাংলাদেশের জিডিপি পৌঁছে গিয়েছিলে কাঙ্খিত ৮ শতাংশের কাছাকাছি। আর আজ সেই বাংলাদেশ পাশাপাশি এসে দাঁড়িয়েছে তাঁর নতুন দোসর পাকিস্তানের ঠিক পাশেই। বিশ্বব্যাঙ্ক, এডিবি ও আইএমএফ-এর পরিসংখ্যান বলছে এই দুটি দেশের গ্রোথ এই মুহূর্তে বিশ্বে সর্বনিম্ন। তাহলে মুহাম্মদ ইউনূস ঠিক কি করলেন বাংলাদেশের তদারকি সরকারের মাথায় বসে? এই প্রশ্নই এখন তুলতে শুরু করেছেন ছাত্র মহল ও সাধারণ মানুষের একাংশ।
শেখ হাসিনার শাসনে বাংলাদেশের ‘বিস্ময়কর’ আর্থিক বৃদ্ধির সাক্ষী থেকেছে গোটা বিশ্ব। কোভিড মহামারীর আগের দশকে সে দেশের গড় জিডিপি বৃদ্ধির হার ছিল ৭ শতাংশ। কোভিডের পরও সেই বৃদ্ধির হারে খুব একটা হেরফের হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী শাসকের যত অভিযোগই থাকুক, বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করে একতরফা ক্ষমতা দখলের যত অভিযোগই থাকুক, বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে একটা স্থিতিশীল নির্বাচিত সরকার ছিল। আর স্থিতিশীল সরকার প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের পক্ষে সবচেয়ে আদর্শ। ফলে বাংলাদেশে পোশাক শিল্পে বহু বিদেশী বিনিয়োগ আসে। আর বাংলাদেশের অর্থনীতি ও বৈদশিক মুদ্রাও ফুলে ফেঁপে ওঠে। ফলে বাংলাদেশ ক্রমশ উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হচ্ছিল। এতে ভাটা পড়ল জুন-জুলাইয়ের সহিংস আন্দোলন ও আগষ্টের গণ অভ্যেয়ুথানের পর থেকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত। এতে যোগ হয়েছে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ক্রমাগত টালবাহানা। ফলে সেদেশের অর্থনীতির গতি রোধ করেছে বলে জানাল বিশ্ব ব্যাঙ্ক। একটি রিপোর্টে তাঁরা জানিয়েছে, ২০২৪ সালের মাঝামাঝি বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতায় প্রভাবিত হয়েছিল অর্থনৈতিক বৃদ্ধি। ধাক্কা খায় লগ্নিকারীদের আস্থা। এছাড়া কম সরবরাহ, বিদ্যুতের ঘাটতি এবং আমদানি বিধিনিষেধ নিস্তেজ করে দিয়েছিল শিল্পক্ষেত্রের কর্মকাণ্ডকে। দাম বাড়তে থাকে জিনিসপত্রেরও। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রধান চালিকাশক্তি রেডিমেড পোশাকশিল্প। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের অর্ডার কমে যাওয়ায় ধাক্কা খেয়েছে বৈদশিক বাণিজ্য, হ্রাস পেয়েছে ডলার আমদানি।
বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন এমন যে বিদ্যুৎ আমদানি একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। ভারতের আদানি গোষ্ঠী, ত্রিপুরা সরকার ও এনটিপিসি সহ কয়েকটি সংস্থার কোটি কোটি ডলার বকেয়া। অপরদিকে অর্থসংকটে থাকায় বিল দিতে পারছে না পিডিবি ও পেট্রোবাংলার মতো সংস্থা। পিডিবি ও পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস খাতে বকেয়া বেড়ে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৭ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বা পিডিবি এবং বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন বা পেট্রোবাংলা এখন ধুঁকছে। এই পরিস্থিতিতে গ্রীষ্মের মরশুম শুরু হলেই ব্যাপক বিদ্যুতের চাহিদা হবে। তখন লোডশেডিং করা ছাড়া কোনও গতি থাকবে না। সবমিলিয়ে খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। এই পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস গিয়েছেন সুইজারল্যান্ড, সেখানে তিনি যোগ দিচ্ছেন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এল সভায়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং-এর তরফে দাবি করা হয়েছে, সুইজারল্যান্ডে তিনি বৈঠক করবেন বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে। মূলত বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্যই তিনি বিদেশ সফর করছেন। কিন্তু ওয়াকিবহাল মহলের একটি অংশের দাবি, মুহাম্মদ ইউনুস নিজের পালানোর পথ খুঁজতেই বিদেশ গেছেন। সেই পটভূমিকায় তৈরি হচ্ছে ধীরে ধীরে। এমনও জানা যাচ্ছে মুহাম্মদ ইউনুস ঘনিষ্ঠ মহলে দাবি করেছেন, তিনি আর টানতে পারছেন না। এমনকি তার পরিবারও চায় না যে তিনি বাংলাদেশে প্রধান উপদেষ্টা থাকুন। ফলে অচিরেই তাকে বাংলাদেশ থেকে নিজের স্থানে চলে যেতে দেখা গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
Discussion about this post