গত রবিবার নিজের ফেসবুকে ‘ফ্যাসিবাদের পুনরুজ্জীবন ও জুলাইবিরোধী শক্তি’ শিরোনামের একটি পোস্ট করেন বাংলাদেশের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। আগের বারের মতো এবারও তাঁর ফেসবুক পোস্ট ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র বিতর্ক। যদিও মাহফুজের আগের পোস্ট ঘিরে আপত্তি তুলেছিল ভারত সরকার, এবার তাঁর পোস্ট ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই। মাহফুজের পোস্টের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বিএনপি-সহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। বিএনপি নেতা মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর রীতিমতো ফোঁস করে উঠেছেন। সবমিলিয়ে বাংলাদেশে আবারও নতুন করে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। কি এমন লিখলেন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম? যা নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়ে গেল গোটা বাংলাদেশে।
নিজের ফেসবুকে আবারও লম্বা-চওড়া বাণী দিয়েছেন মাহফুজ। এবার তাঁর লক্ষ্য বিএনপি, সেটা ওই পোস্ট পড়েই বোঝা যাচ্ছে। মাহফুজ আলম লেখেন, ‘ফ্যাসিবাদের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা আবার সক্রিয় হচ্ছে। পুরানো ভাবাদর্শিক বন্দোবস্ত সক্রিয় হয়ে গেছে। সরকারের দায় দিন, অসুবিধা নেই। আমরা চেষ্টা করছি। কেন পারিনি বা আপনাদের প্রত্যাশা মতো পারছি না, সেসব ব্যাখ্যা আমরা দিব। কিন্তু, কালচারাল ফ্যসিজম এবং পুরাতন অর্থনৈতিক বন্দোবস্তের বিরুদ্ধে আপনাদের আমাদের নিরন্তর লড়াই প্রয়োজন। তিনি আরও লেখেন, ‘সামাজিক ফ্যাসিবাদ বনাম সেকুলারিস্ট শক্তির ছদ্ম খেলা নস্যাত করে দেওয়া দরকার। নইলে এ দুই শক্তি এ প্রজন্মকে হত্যাযোগ্য করে তুলবে। ফিফথ অগাস্ট ডিভিশনকে প্রশ্ন করুন। তিনি আরও বলেন, জুলাই একটা মিলনবিন্দু ছিল। ভাবাদর্শিক লড়াই নিয়ে আপনাদের সতর্ক করেছিলাম। পাঁচ মাস পরে তা সত্য হয়ে উঠছে। শাপলা- শাহবাগ ফেরত আনার চেষ্টা হচ্ছে। উল্লেখ্য, এখানে ফিফথ আগস্ট ডিভিশন বলতে তিনি বুঝিয়েছেন যারা পাঁচ তারিখে এসে আন্দোলনে অংশ নিলেন, কিন্তু জুলাইয়ের চেতনাকে ধারণ করেননি! মাহফুজের এই মন্তব্যেই ক্ষেপে লাল বিএনপি।
প্রশ্ন উঠছে, কোন চেতনার কথা বলছেন মাহফুজ আলম? জুলাইয়ের চেতনাটাই বা কি? মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাত্র নেতা তথা সমন্বায়ক যা মনে করছেন সেটা চেতনা, নাকি বাংলাদেশের অপামর নাগরিকরা এখন যা মনে করছেন সেটাই চেতনা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিস্মৃত করে বর্তমান ছাত্রসমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি বাংলাদেশে এখন জুলাইয়ের চেতনার নামে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে চাইছে। একটি মহল দাবি করছে, শুধুমাত্র শেখ হাসিনাকে মসনদ থেকে টেনে নামানোর জন্যই এই জুলাই বিল্পব হয়েছিল, ছাত্র-সমন্বায়করা যাকে নতুন বাংলাদেশের উত্থান বলছেন। ছাত্ররা বলেছিলেন, শেখ হাসিনার পতনের মাধ্যমে একটা সুষ্ঠ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের নতুন সরকার হবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, নির্বাচন দূরে ঠেলে নিজেরাই সংস্কারের নামে সময় কিনতে চাইছেন। এমনকি তাঁরা নতুন রাজনৈতিক দলও গঠন করার উদ্যোগী হয়েছেন। ফলে নিজেদের স্বার্থ এবং ক্ষমতার অলিন্দে থাকাটাই এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতাদের মূল উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলের একাংশ বিশেষ করে বিএনপি প্রশ্ন তুলছে, এই মাহফুজ আলমের মতো নেতারা, জুলাই বা আগস্ট মাসের আগে কোথায় ছিলেন? তাঁরা ৫ আগস্টের আগে একবারও বলেছিলেন বা দাবি করেছিলেন যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মোছা হবে, বাংলাদেশের সংবিধান নতুন করে লেখা হবে, বা তাঁরা নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করবেন? তাহলে জুলাইয়ের চেতনার ধারণা এল কোথা থেকে? এই চেতনার কথা আগে কেন আসেনি সেটাই এখন প্রশ্ন তুলছে বিএনপি। কারণ. ৫ আগস্টের আগে শুধুমাত্র এক দফা দাবিতেই আন্দোলন হয়েছিল, যা ছিল শেখ হাসিনার পদত্যাগ বা পতন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, মাঙফুজ আলমের মতো নেতারা এখন বিপাকে পড়েছেন। একদিকে বিএনপি-র চাপ, অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পুনরুত্থান। মাহফুজ আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, সারজিস আলমরা বুঝছেন, সাধারণ মানুষের মন ঘুরছে। তাই প্রচ্ছন্ন হুমকির মতো মাহফুজ আলম ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, কালচারাল ফ্যসিজম এবং পুরাতন অর্থনৈতিক বন্দোবস্তের বিরুদ্ধে আপনাদের আমাদের নিরন্তর লড়াই প্রয়োজন। সামাজিক ফ্যাসিবাদ বনাম সেকুলারিস্ট শক্তির ছদ্ম খেলা নস্যাত করে দেওয়া দরকার। নইলে এ দুই শক্তি এ প্রজন্মকে হত্যাযোগ্য করে তুলবে। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, আগামীদিনে আরও ভয়ঙ্কর আন্দোলন দেখা দিতে পারে বাংলাদেশে। এবার তা হবে এই ছাত্র নেতা, সমন্বায়ক ও উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধেই।
Discussion about this post