বাংলাদেশের রাজনৈতিক পালাবদলের পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান পারতেন সব ক্ষমতা নিজের হাতে তুলে নিতে। কিন্তু তিনি সেই লোভ সম্বরণ করেছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতৃত্ব, বিএনপি ও জামাত নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে ওয়াকার উজ জামান বাংলাদেশে তদারকি সরকার গঠন করে দিয়েছিলেন। হয়তো তিনি বুঝেছিলেন এটা কাঁটার মুকুট, তাই বাড়তি বোঝা মাথায় তোলেননি। এরপর মুহাম্মদ ইউনূসের শাসনামলে বাংলাদেশ ক্রমশ পিছিয়েছে। অর্থনীতি, বিদেশনীতি ও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকেছে। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান দেখেও না দেখার ভান করে বসেছিলেন। কিন্তু অচিরেই তিনি বোঝেন বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধেই গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। আর তাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ফলে দুজনের মধ্যে বিরোধ বাড়লো, দূরত্ব বাড়লো, এমনকি কথাবার্তা ও মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ হল। প্রথম দিকে দুজনে প্রতি মাসেই একটা করে বৈঠক করতেন। কিন্তু গত বছরের নভেম্বর মাসের পর থেকে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি আরও জটিল হল যখন জানা গেল ওয়াকার উজ জামানকে সেনা প্রধানের পদ থেকে উৎখাত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যেই একটা ক্যু বা সেনা অভ্যুত্থান ঘটানোর পরিকল্পনা প্রায় পাকা। এরপর ভারতের সহায়তায় বাংলাদেশের সেনাপ্রধান সেই অভ্যুত্থান বা বিদ্রোহ ঠেকিয়ে দিলেন। এই পর্যন্ত গল্পটা প্রায় সকলেরই জানা। কিন্তু সেনা প্রধান কি এবার কোনও পদক্ষেপ নেবেন? তা নিয়েই এখন জোর চর্চা ওয়াকিবহাল মহলে।
বুধবার বিকেল বেলা বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান আচমকা পৌঁছে যান ঢাকায় অবস্থিত প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবনে যমুনায়। তিনি বৈঠক করেন মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে। যা নিয়ে জল্পনা কল্পনা আরও বেড়ে গিয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জনসংযোগ বিভাগ অবশ্য ওই বৈঠকের একটা রূপরেখা জানিয়েছে বিবৃতি দিয়ে। কিন্তু তা মানতে নারাজ সংশ্লিষ্ট মহল। কারণ ওয়াকার উজ জামান এবং মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যেকার সম্পর্ক ঠিক এমন পর্যায়ে ছিল যে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে বিগত সাড়ে চার মাস কোনও কথাই বলেননি। কয়েকটি অনুষ্ঠানে তাঁরা একই মঞ্চে থাকলেও সমান দূরত্ব বজায় রাখতেন। সেই সেনাপ্রধান আচমকা কেন দেখা করলেন মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে? কি কারণে এই সাক্ষাৎকার? নানারকম জল্পনা কল্পনা চলছে এই নিয়ে। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জনসংযোগ দফতর যে বিবৃতি দিয়েছে সেটা হাতির দাঁতের মতো। আসলে অন্য কোনও বার্তা বা নির্দেশ নিয়ে ইউনূস সকাশে গিয়েছিলেন সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা মহাপরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড ভারত সফরে এসে বাংলাদেশ নিয়ে বেশ কয়েকটি অভিযোগ এনেছিলেন। এরমধ্যে যেমন ছিল সে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও অত্যাচারের অভিযোগ, তেমনই ছিল জঙ্গিবাদ ও খিলাফতের প্রচারের গুরুতর অভিযোগ। যার কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ইউনূস প্রশাসন। এমনকি তুলসী গ্যাবার্ডকে কার্যত মিথ্যাবাদীও বলে ফেলেছেন তাঁরা। স্বভাবতই এই ধরণের সাহসিকতার প্রতিদানও একটা আছে, বিশেষ করে বিপক্ষে যখন পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অনেকের ধারণা, সেনাপ্রধান সেই বিষয়েই মুহাম্মদ ইউনূসকে অবগত করাতে গিয়েছিলেন যমুনায়। আবার একটা অংশের ধারণা, ওয়াকার উজ জামান ভারতের বিশেষ বার্তা পৌঁছে দিলেন প্রধান উপদেষ্টার কাছে। সেই বার্তাটি হল দ্রুত পদত্যাগ করে বাংলাদেশ ছেড়ে বিদায় নেওয়ার। না হলে এর পরিণতি ভুগতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত এবার আরও চাপ বৃদ্ধি করতে পারে বাংলাদেশের ওপর। মুহাম্মদ ইউনূসের এই অবৈধ সরকারকে আর বেশিদিন ক্ষমতায় রাখতে নারাজ ট্রাম্প ও মোদি। তুলসী সেই ইঙ্গিতই করে গিয়েছেন। এমনটাও হতে পারে ওয়াশিংটন থেকে কোনও বিশেষ বার্তা এসে পৌঁছেছে সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামানের কাছে। একই বার্তা তিনি পেয়েছেন ভারত থেকেও। ফলে ইউনূসের বিদায় যে কার্যত পাকা, সেটা বোঝাই যাচ্ছে। সেটাই কি জানিয়ে এলেন ওয়াকার উজ জামান? উত্তর মিলবে অচিরেই।
Discussion about this post