স্বাধীনতার আগে ‘লিজেন্ড্রি’ দার্জিলিং মেল চলাচল করতো অধুনা বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে। সেই ১৮৭৮ সালে প্রথম যাত্রা শুরু করেছিল দার্জিলিং মেল। সেই সময় শিয়ালদা থেকে ছেড়ে ট্রেনটি বর্তমান ভারতের ব্যারাকপুর, রানাঘাট হয়ে বর্তমান বাংলাদেশের দর্শনা, চুয়াডাঙা, পোড়দহ হয়ে দামুকদিয়া ঘাটের কাছে যাত্রা শেষ করতো। এরপর যাত্রীদের ট্রেন থেকে নেমে ফেরিতে পদ্মানদী পেরিয়ে ফের মিটারগেজ লাইনে দাঁডিয়ে থাকা অন্য দার্জিলিং মেল ধরতে হতো। সেটি নাটোর, হিলি, পার্বতীপুর, নীলফামারি হয়ে বর্তমান ভারতের হলদিবাড়ি, জলপাইগুড়ি হয়ে শিলিগুড়ি ঢুকতো। ফিরতি পথেও এভাবে আসতো দার্জিলিং মেল। পরবর্তী সময় পদ্মানদীতে হার্ডিঞ্জ সেতু নির্মান এবং সাঁড়াঘাট-শিলিগুড়ি ব্রডগেজ লাইন হয়ে যাওয়ায় বিরতিহীনভাবে দার্জিলিং মেল শিয়ালদা-শিলিগুড়ি যাতায়াত করে। ফলে উত্তরবঙ্গে যাওয়ার জন্য দার্জিলিং মেল ভারতের স্বাধীনতার পরও বেশ কয়েক বছর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হয়ে যাতায়াত করেছে। কিন্তু ১৯৬৫ সালে ভারত-পাক যুদ্ধের পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় দার্জিলিং মেলের চলাচল। ভারত-বাংলাদেশ মিলিয়ে দার্জিলিং মেলের এই রুটটিকে বলা হতো গোল্ডেন রুট। এবার সেই রুটেই ভারত থেকে বাংলাদেশ হয়ে উত্তরবঙ্গ অভিমুখে ট্রেন চালাতে চায় ভারতীয় রেল।
সাম্প্রতিক খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে উত্তরবঙ্গ অভিমূখে ট্রেন চালানোর জন্য প্রস্তাব দিয়েছে ভারতীয় রেল। সূত্রের খবর, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার গেদে সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের দর্শনা হয়ে ইশ্বরদী, আব্দুলপুর, পার্বতীপুর, চিলাহাটি পর্যন্ত রেললাইন ব্যবহার করে উত্তরবঙ্গ পর্যন্ত ট্রেন চালাতে চায় ভারতীয় রেল। এতে একদিকে যেমন সময় বাঁচবে, তেমনই রেলের খরচও বাঁচবে বলে দাবি একাধিক রিপোর্টে। সম্প্রতি এই সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব বাংলাদেশ রেলওয়ে বোর্ডের কাছে পাঠিয়েছে ভারতীয় হাইকমিশন। ভারতের এই প্রস্তাব গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে মন্ত্রক।
বিগত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের রেল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ভারতীয় রেল ট্রেন চালাতে কয়েকটি প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানা গিয়েছিল। যেমন, ভারত থেকে গেদে এবং বনগাঁ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্য ত্রিপুরা পর্যন্ত ট্রেন চালানোর মতো প্রস্তাব রয়েছে। এর জন্য ভারতের আগরতলা স্টেশন থেকে বাংলাদেশের আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত নতুন রেলপথের কাজ ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। এবার আরেকটি প্রস্তাবের খবর সামনে এল। সেটি হল নদিয়া জেলার গেদে সীমান্ত হয়ে আলিপুরদুয়ার জেলার ডালগাঁও স্টেশন পর্যন্ত চলাচলকারী ট্রেন এবার বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে চালাতে চায় ভারতীয় রেল। ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশ রেলওয়ে বোর্ডের কাছে যে প্রস্তাবটি পাঠিয়েছে সেটি হল, ভারতের গেদে সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের দর্শনা হয়ে ইশ্বরদী, আব্দুলপুর, পার্বতীপুর, চিলাহাটি হয়ে ট্রেনগুলি ভারতের হলদিবাড়ি সীমান্ত স্টেশনে ফের ভারতে প্রবেশ করবে। এরপর নিউ জলপাইগুড়ি, ধুপগুড়ি, হাসিমারা হয়ে ট্রেন ভূটান সীমান্তের ডালগাঁও স্টেশন পর্যন্ত যাবে। ভারতের প্রস্তাব খতিয়ে দেখা শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে মন্ত্রক।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় সংবাদপত্র কালের কণ্ঠ এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে, বাংলাদেশের জমি ব্যবহার করে ভারতীয় ট্রেন চালানোর প্রস্তাবের আগে সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনের ইন্টারচেঞ্জ বা সীমান্ত এলাকায় ট্রেনের পরিচয় পরিবর্তনের জায়গা ঘুরে দেখেছেন ভারতের প্রতিনিধি দল।
ভারতীয় রেল সূত্রে খবর, এই গোল্ডেন রুটে ট্রেন চালালে অন্তত ১০০ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। তবে ভারতীয় হাইকমিশন এবং রেলমন্ত্রক বাংলাদেশ হয়ে যাত্রীবাহী নাকি মালবাহী ট্রেন চালাবে সেটা জানায়নি। তবে মনে করা হচ্ছে. বাংলাদেশ এই প্রস্তাবে রাজি হলে, আপাতত মালবাহী ট্রেনই বাংলাদেশ হয়ে উত্তরবঙ্গের দিকে চালানো হবে। যদিও বাংলাদেশ রেলমন্ত্রক সূত্র খবর, ইতিমধ্যেই ভারতের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করছে সেই দেশের ট্যারিফ কমিশন।
Discussion about this post