ডায়াবেটিস বা মধুমেহ ভারতে একটি বহুল প্রচলিত রোগ। একটি রিপোর্টে জানা যাচ্ছে, ভারতবর্ষের প্রায় ১১.৪ শতাংশ মানুষই ডায়াবেটিস বা মধুমেহতে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস হলে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়, এবং ইনসুলিন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। ইনসুলিন হরমোন ঠিকঠাক তৈরি হতে পারেনা শরীরে, ফলে তখনই হয় ডায়াবেটিস।
ডায়াবেটিস বা মধুমেহতে আক্রান্ত হলে আমাদের শরীরে নানা রকম রোগের আক্রমণ ঘটে। তাই রক্তে সুগারের লেভেলকে সবসময় নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। দীর্ঘদিন একটানা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে, অত্যাধিক ক্লান্তি, ঘুম ঘুম ভাব, জল খেলেও সব সময় তৃষ্ণার্ত ভাব, ওজন হ্রাস ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাছাড়াও ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর ক্ষতস্থান সহজে শুকায় না। ঘন ঘন প্রস্রাব পাওয়া এবং দাঁতের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। রক্তে সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি আমাদের শরীরের বড়সড় সমস্যা সৃষ্টি করে, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল করে দিতে পারে। যদি আমরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের রক্তে সুগারের লেভেলকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি। বহুদিন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর হৃদযন্ত্র, কিডনি, স্নায়ু ও ইন্টারনাল সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীকে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা সব সময় নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। কারণ রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলেই বাড়ে নানান রকম সমস্যা। তাই সব সময় নিয়ম মাফিক কড়া ডায়েট ও ডায়াবেটিস নিরামিয়কারী ওষুধ সেবন করতে হয়। কারণ আমরা সবাই জানি, রক্তে সুগারের মাত্রা কখনো বাড়ে আবার কখনো কমে। একেবারে একে নিঃশেষ করা যায়না। সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। কিন্তু সেই ধারণাকেই অনেকাংশে বদলে দিল চীনের একদল গবেষক। তাদের গবেষণায় প্রমাণিত হল, ডায়াবেটিস নামক দীর্ঘকালীন রোগকেও নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া সম্ভব। তাঁদের দাবি, ডায়াবেটিস নির্মূল হওয়ার বছর দুয়েক অবধি কোনও ইনসুলিন বা ওষুধ খেতে হয়নি রোগীকে। তাছাড়া রক্তে শর্করার পরিমাণ ছিটেফোঁটা ও বাড়েনি।
চীনের সাংহাই চ্যাংঝেং হাসপাতালের চিকিৎসক ইন হাও এবং তাঁর টিম ডায়াবেটিস সারানোর নতুন এক উপায় আবিষ্কার করেছেন। গবেষকরা দাবি করছেন, নতুন একটি পক্রিয়ায়, কোষ প্রতিস্থাপন পদ্ধতিতে এই রোগ পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব। এই গবেষণায় একটি টাইপ ২ ডায়াবেটিক রোগীর দেহে ‘ আইলেট কোষ ‘ প্রতিস্থাপন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।
আইলেট কোষ ‘ কি?
আইলেট কোষ হল অনেক গুলি কোষের সমষ্টি বা কোষপুঞ্জ। আইলেট কোষে তিন ধরনের কোষ থাকে অর্থাৎ আমাদের শরীরে তিন প্রকার আইলেট কোষ থাকে।
১. আলফা
২. বিটা
৩.ডেল্টা
এই তিন কোষের মধ্যে বিটা কোষ থেকেই নির্গত হয় ইনসুলিন হরমোন। আমাদের শরীরের গ্লুকোজকে, দেহ কোষের মধ্যে প্রবেশ করতে সাহায্য করে ইনসুলিন হরমোন। অন্যদিকে আলফা কোষে গ্লুকাগন থাকে, যা গ্লুকোজকে ভাঙতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের শরীরে শক্তি উৎপন্ন হয়। যদি আইলেট কোষ ভেঙে যায়, তাহলে এই পক্রিয়া গুলো সম্পন্ন হতে পারেনা। ফলে আমাদের শরীরের কোষে গ্লুকোজ জমা হতে না পেরে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। তখন বাইরে থেকে ইনসুলিন বা ওষুধের মাধ্যমে রক্তের শর্করার পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।
চিনা গবেষকরা, বাইরে থেকে শরীরের নষ্ট হয়ে যাওয়া আইলেট কোষপুঞ্জকে সরিয়ে নতুন কোষ প্রতিস্থাপন করছে। নতুন কোষ প্রতিস্থাপন হওয়ায় শরীর নিজে থেকে তার শারীরিক ক্রিয়া-পক্রিয়া সম্পন্ন করছে। ফলে শরীরে উৎপন্ন গ্লুকোজ রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি না করে কোষে গিয়ে জমছে। ফলে রোগী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আগে যেমন স্বাভাবিক ছিল তেমনি স্বাভাবিক থাকছে। অর্থাৎ চিকিৎসার পর দীর্ঘদিন অতিক্রান্ত হলেও তার শরীরে বিন্দু মাত্র ডায়াবেটিসের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। চীনের, চিকিৎসা বিজ্ঞানের এ এক অনন্য সফলতা। এতদিন এই গবেষণা চলছিল, এখন এই পদ্ধতি রোগীর শরীরে প্রয়োগ করে সফলতা মিলেছে। ফলে ডায়াবেটিসকে নিশ্চিহ্ন করতে সফল হয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞাপনের এই অনন্য পদ্ধতি। এখন আমাদের দেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় কিনা, এবং প্রয়োগ করা হলেও তা কতটা সারা ফেলবে সেটাই দেখার। তবে এই আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি প্রতিটা দেশে সফল ভাবে প্রয়োগে হলে, এবং তা সফলভাবে কার্যকর হলে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশাল সাফল্য আসবে সেটি বলাই যায়। সাথে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রতিটা রোগী নতুন করে বাঁচার আলো দেখতে পাবেন।
Discussion about this post