বাংলাদেশের ভূখণ্ডের অন্দরে ১০ কিলোমিটার ঢুকে উৎসব পালন করল মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। যা নিয়ে গোটা বাংলাদেশ তোলপাড় হচ্ছে। রোহিঙ্গা সংগঠনের মুখপত্র ‘রোহিঙ্গা খবর’ জানাচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার জনজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে অর্থাৎ, বাংলাদেশের ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছিল আরাকান আর্মির সশস্ত্র যোদ্ধারা। সেখানে তারা স্থানীয় জনজাতিদের নিয়ে ‘জলকেলি উৎসব’ বা ওয়াটার ফেস্টিভ্যাল পালন করেছে। এই খবর সামনে আসতেই ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি’ নিশানা করেছে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে। তাঁরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে কার্যত তুলোধনা করে ইউনূসের সরকারকে।
এখন প্রশ্ন হল, আরাকান আর্মি সীমান্ত পেরিয়ে ১০-১৫ কিলোমিটার ঢুকে পড়ল, অথচ বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বা বিজিবি কি করছিল? বাংলাদেশের অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীই বা কি করছিল? তাহলে কি বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী? গত ১৬ ও ১৭ এপ্রিল পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমা উপজাতি জলকেলি উৎসবের আয়োজন করে। সেখানেই উপস্থিত হয়েছিলেন আরাকান আর্মির কয়েকশো যোদ্ধা ও আধিকারিক। তাঁরা সেখানে নাচ-গানে মেতে ওঠেন এবং আরাকান আর্মির পতাকাও লাগিয়ে দেয়। এই উৎসবের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হতেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে নতুন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, আরাকান আর্মি কাদের বলে বলিয়ান হয়ে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছে?
কেউ কেউ বলছেন, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর লেফটান্যান্ট জেনারেল জোয়েল পি ভোয়েল দলবল নিয়ে ঢাকা সফরে এসেছিলেন। তাঁরা চারদিন ঢাকায় অবস্থান করে বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান ও কয়েকজন সেনাকর্তার সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। পরে জানা যায়, মার্কিন সেনা কর্তারা বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে মিয়ানমারে একটা মানবিক করিডোর তৈরির আলোচনা করেন। যাতে মিয়ানমারের সামরিক জুন্টা শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই চালানো আরাকান আর্মি সহ অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিকে সহায়তা করতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এও জানা যায়, বাংলাদেশ সেনা নাকি সেই সহায়তা করতে রাজি হয়েছে। এমনকি কক্সবাজারে একটা অস্থায়ী বেস তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশ সেনার তত্ত্বাবধানে। তাহলে মার্কিন বলেই বলিয়ান হয়ে বাংলাদেশ সেনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালো আরাকান আর্মি? নাকি এর পিছনে মদত রয়েছে ভারতের? সম্প্রতি ভারতও আরাকান আর্মি সহ মিয়ানমারের অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে আলোচনা করেছে। এবং তাঁদের একত্রিত করে একটা মঞ্চ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। যাতে মিয়ানমারে চলমান ভারতের কালাদান মাল্টি মোডাল প্রকল্প সুরক্ষিত থাকে। বিশেষ করে সিত্তেই সমুদ্র বন্দর এবং কালাদান নদীর জলপথ ও বন্দরগুলি। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ল্যান্ডলকড সেভেন সিস্টার্স মিয়ানমার হয়ে সহজেই বঙ্গোপসাগরে পৌঁছতে পারবে। কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূস চিনে দাঁড়িয়ে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে যে হুমকি দিয়েছিলেন, তারই বদলা হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ল আরাকান আর্মি? আসলে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন অবহেলিত পার্বত্য চট্টগ্রাম যদি বাংলাদেশ থেকে আলাদা হয়ে যায়, তাহলে লাভ ভারতেরই।
Discussion about this post