বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের দূরত্ব নিয়ে সাধারণ মানুষের একটি ধারণা রয়েছে। আর এই ধারণা যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত। খলিলুর রহমানকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ও সেনাপ্রধানের দ্বন্দ্ব গভীর হয়েছে সে কথা সকলেরই জানা। আর এই আবহে নতুন গুঞ্জন সামনে আসছে নতুন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। জানা যাচ্ছে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু তোয়েব মোহাম্মদ জহিরুল আলমকে এই পদে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বর্তমান সরকার।
গতবছর হাসিনা সরকারের পতনের পর মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসন শুরু হলে সেই সময় থেকেই ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের পাকিস্তান প্রীতি এবং ভারত বিরোধিতা ছিল চোখে পড়ার মত। আর এবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পাকিস্তানের আইএসআইয়ের সাথে সম্পর্ক আরো জোরালো করতে এবং ভারতবিরোধী মনোভাবকে উস্কে দিতে নয়া পরিকল্পনায় শামিল হলেন। পাকিস্তানি আইএসআই পন্থি কুখ্যাত লেফটেন্যান্ট জেনারেল আবু তৈয়ব মোঃ জহিরুল আলমকে উপ-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করার সম্ভাবনা এবার জোরালো হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের অভ্যন্তরে।
জহিরুল আলমের ইউনূসের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে মোহাম্মদ ইউনুসের তিনি ইউনূসের জন্মস্থান চট্টগ্রামের বাসিন্দা। এটি তাকে ডেপুটি এনএসএ হিসেবে নিয়োগের পিছনে বড় ব্যাখ্যা হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা-ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নিয়োগ নয়াদিল্লির সাথে ঢাকার সম্পর্ককে আরও অবনতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এছাড়াও এই নিয়োগের সম্ভাবনাআঞ্চলিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে পাকিস্তানের আইএসআই এর সাথে জহিরুল আলমের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ইতিহাস এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারত-বিরোধী মনোভাব প্রচারে তার ভূমিকার কারণে। জহিরুল আলম বর্তমান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাই প্রয়াত সাঈদ ইস্কান্দারের সহপাঠী, যারা উভয়ই পাকিস্তানপন্থী প্রবণতার জন্য পরিচিত।
উল্লেখ্য ২০০১ সালে বিএনপির নির্বাচনী বিষয় পরিচালনাকারী ইস্কান্দার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে, বিশেষ করে মিজোরাম এবং আসামে সক্রিয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলিকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ প্রদানের সাথেও জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০১২ সালে তার মৃত্যু এই নেটওয়ার্কগুলির উত্তরাধিকারকে খুব একটা হ্রাস করতে পারেনি। ফলে সহযোগী জহিরুল আলম উপজাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের সম্ভাবনাকে এমন একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে যা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং ভারতের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন মনোভাবকে আরও জাগিয়ে তুলবে , যা ঢাকা ও নয়াদিল্লির মধ্যে বছরের পর বছর ধরে চলমান কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতাকে সম্ভাব্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। আঞ্চলিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করছেন, এই ধরনের ঘটনা কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপরই চাপ সৃষ্টি করতে পারে না বরং এই অঞ্চলে চরমপন্থী ও বিদ্রোহী শক্তি গুলিকে জাগ্রত করতে পারে যা দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
এই আবহেই সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বেইজিং সফর এখন বাতিল করা হয়েছে। জেনারেল জামানকে পিপলস লিবারেশন আর্মির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা চীন সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন বলে খবর।
আর এই মুহূর্তেই বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূসের মুখ্য সচিব মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন মিয়া ২৭ জুন চীন সফর করবেন, ঠিক যেদিন কিংডাওতে সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার বৈঠক শেষ হবে। খলিলুর রহমান, যিনি বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন, তিনি ২৯ জুন পর্যন্ত চীনে থাকবেন এবং ঢাকা-বেইজিং সহযোগিতার বিষয়ে পরামর্শ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থাৎ এখানেও কি সেনাবাহিনীর সফরে বাধা হয়ে দাঁড়ালো বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রাহমান? যে দ্বন্দ্ব সকলের কাছেই আজ স্পষ্ট সেই দ্বন্দ্বের জেরেই চীন সফর বাতিল বাংলাদেশ সেনা প্রধানের।
Discussion about this post