বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবল অস্থিরতা অব্যহত। হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে সাধারণ আমজনতা। অন্যদিকে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ‘আওয়ামী লীগের দালালি করা’র অভিযোগ ছাত্রনেতাদের। এরপর এই অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় দীর্ঘ বৈঠক করে বাংলাদেশে সেনাবাহিনী।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সমস্ত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে জেনারেল ওয়াকার উজ জামান। তাঁর বিরুদ্ধে তোলা হয়েছিল গুরুতর অভিযোগ। অত্যন্ত কুরুচিকর অভিযোগ তুলেছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির দুই শীর্ষ নেতা। একজন হাসনাত আব্দুল্লাহ অন্যজন বাংলাদেশের তদারকি সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তাদের বক্তব্য ছিল বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে জায়গা করে দিতে হবে আওয়ামী লীগকে, তাঁদের এমন প্রস্তাব দিয়েছিলেন স্বয়ং সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান। অর্থাৎ, সেনাপ্রধান দেশের রাজনীতিতে সরাসরি নাক গলাতে চাইছেন। হাসনাত বা আসিফরা সেনাবাহিনীর মর্যাদায় আঘাত করে বসেছিলেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়, সদ্য গজিয়ে ওঠা এবি পার্টির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার ফুয়াদের কুরুচিকর ভাষায় সেনা প্রধান ও রাষ্ট্রপতিকে আক্রমণ। সবমিলিয়ে দেশের সেনাবাহিনীর একটা বড় অংশ ক্ষেপে যান।
সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান পরপর তিনদিন ধরে অনেকগুলো বৈঠক করলেন। তাঁর মূল লক্ষ্য ছিল, বাহিনীর মধ্যে অস্থিরতা দূর করা এবং বাহিনীর ঐক্য ফিরিয়ে আনা। তিনি গত রবিবার ঢাকা সেনা সদরে একটা বড় বৈঠক ডাকলেন, সেখানে সকল সেনা কর্তাদের সামরিক পোশাকে থাকতে বলা হল। ওই বৈঠকে ঠিক কি কি নিয়ে আলোচনা হয়েছে সবটা জানা যায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, সেনা প্রধান বাহিনীর সমস্ত বিভাগকে এবং অন্যান্য ডিভিশনগুলিকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। সেই সঙ্গে তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, কোনও ধরণের উস্কানিতে যেন বাহিনীর কোনও সদস্য পদক্ষেপ না করে। ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দিয়েছেন জেনারেল ওয়াকার উজ জামান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই কঠিন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রাখার যে পরামর্শ জেনারেল ওয়াকার উজ জামান দিলেন তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
উল্লেখ্য, সেনাবাহিনীর মধ্যে একটা বড় অংশ এখনো এই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাশে আছে। বিশেষ করে বাহিনীর তরুণ আধিকারিকরা। জুন জুলাইয়ের বিপ্লব এবং আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সেনাবাহিনীর এই অংশটিই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অমান্য করে আন্দোলন দমন করতে অস্বীকার করেছিলেন। যার ফলে কোটাবিরোধী আন্দোলন করে গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হতে পেরেছিল।
ওয়াকার উজ জামান জানেন যে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, কারণ জামাত বা হিজবুতের মত সংগঠন গুলি তার বিরুদ্ধেই সেনা বিদ্রোহ করার ষড়যন্ত্র করেছিল।এবং তা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছেন সেনাপ্রধান। ফলে সেনাপ্রধানের প্রথম উদ্দেশ্য ছিল বাহিনীর মধ্যে ঐক্য সৃষ্টি করা এবং সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে আসা। যেটা তিনি করতে সক্ষম হয়েছেন। আর এতেই ভয় পেয়ে গিয়েছে এই জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এবি পার্টির মতো সদ্য গজিয়ে ওটা রাজনৈতিক দলের নেতারা।
Discussion about this post