বেলুচিস্তান, যা দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানের একটি প্রদেশ। ভৌগলিক দিক থেকে এটি পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ। মূলত বালুচ জাতির মানুষদের বাস এই প্রদেশে, আর এই জাতির থেকেই এই প্রদেশের নাম বেলুচিস্তান। বেলুচিস্তান উত্তরে আফগানিস্তান এবং পশ্চিমে ইরাণের সঙ্গে এই প্রদেশ আন্তর্জাতিক সীমানা ভাগ করে নেয়। বর্তমানে এই প্রদেশ পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। বেলুচিস্তান লিবারেশন ফ্রন্ট বা বিএলএফ, একটি “স্বাধীনতাপন্থী” সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা পাকিস্তানি সেনার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই লড়াই চালাচ্ছে। সম্প্রতি আফগানিস্তানের তালিবান সেনার সঙ্গে পাকিস্তানি সেনার একটা বড়সড় সংঘর্ষ হয়ে গেছে। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া এলাকায় আফগান-পাক সীমান্তে এখনও উত্তেজনা কমেনি। এই আবহেই বেলুচিস্তান নিয়ে পাক সরকারের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, বিগত কয়েকদিন ধরে বেলুচিস্তানে পরপর কয়েকটি বড়সড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে। এমনও খবর পাওয়া যাচ্ছে, বালুচ লিবারেশন ফ্রন্টের হামলায় বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ পাক সেনাকর্তার মৃত্যু হয়েছে। ফলে এই সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সক্রিয়তায় রাতের ঘুম উড়েছে পাকিস্তানের সেনাকর্তাদের।
যদিও পাক বাহিনীর আফগানিস্তানে হামলার ঘটনা সামনে এসেছিল কয়েকদিন আগে। এবার জানা যাচ্ছে, আফগানিস্তানের চিকেন নেক নামে পরিচিত ওয়াখান করিডোরের দিকে নজর দিয়েছে পাক সরকার। সেখানে সেনাসম্ভার করছে পাকিস্তান। আফগানিস্তানের এই ওয়াখান করিডোরের এক দিকে চিন, ভারত ও অন্যদিকে তাজাখস্তান ও পাকিস্তান। ফলে সামরিক ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই করিডোরে আধিপত্য বিস্তার করতে মরিয়া পাকিস্তান। যাতে আফগানিস্তান ও ভারতকে চাপে রাখা যায়। যদিও হাত গুটিয়ে বসে নেই ভারতও। জানা যাচ্ছে, তাজাখস্তানের গিসার ও ফারখোর এলারবেসে ভারতের একাধিক যুদ্ধবিমান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য ওয়াখান করিডোরের দশ কিমি দূরেই অবস্থিত গিসার এয়ারবেস। যেটি তালিবানের হাতে কাবুলের পতনের পর ভারত ব্যবহার করেছিল আফগানিস্তানে আটক্ থাকা ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার জন্য।
এই এয়ারবেসেই নেমেছিল ভারতের গ্লোবমাস্টার বিমান। তাজাখস্তানের এয়ারবেসগুলিতে ভারতের সুখোই, মিগ যুদ্ধবিমান স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়, সেই সঙ্গে ভারতের অ্যাটাক হেলিকপ্টারও মজুত থাকে। সম্প্রতি বালুচ লিবারেশন ফ্রন্ট এক পরিসংখ্যান দিয়ে দাবি করেছে, ২০২৪ সালে ২৮৪টি সশস্ত্র অভিযান চালিয়ে ৩১৬ জন শত্রু-কর্মীকে খতম করেছে তাঁরা। বলাই বাহুল্য এই শত্রু-কর্মীরা হলেন মূলত পাক সেনা ও পাক আধিকারিকরা। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, পাকিস্তান যতই বালুচিস্তানে অভিযান চালাক, বালুচ লিবারেশন ফ্রন্টও কম যায় না। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে পাকিস্তান ভেঙে টুকরো টুকরো হতে বেশি সময় লাগবে না। অপরদিকে আফগানিস্তানও এখন পাকিস্তানকে চোখ রাঙিয়ে চিন ও ভারতের দিকে সম্পর্ক স্থাপনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, এই পরিস্থিতি আঁচ করেই বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করার কথা বলেছেন।
অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে এমন কেউ নেই যিনি বা যারা আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলি উপলব্ধি করতে পারেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের উপদেষ্টামণ্ডলী ও প্রধান উপদেষ্টা নিজেও সেভাবে রাজনীতির লোক নন। আবার বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জামায়তে ইসলামী এবং পাকিস্তানের আইএসআই মাথাদের কথায় ওঠে-বসে। ফলে তাঁরা পাকিস্তানের সার্বিক পরিস্থিতি আঁচ করতে পারছেন না। যেটা বাংলাদেশের সেনাপ্রধান আঁচ করেছেন। কারণ, তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান এবং একসময় দীর্ঘসময় রাষ্ট্রসংঘের হয়ে কাজ করেছেন। তাই তিনি পাক-আফগান সীমান্ত বিবাদ থেকে পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। ফলে তিনি জানেন, এই মুহূর্তে যে দেশ নিজেদের ভূখণ্ডই বাঁচাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে, সেই দেশ অন্য দেশকে কিভাবে সাহায্য করবে। এর ওপর তদারকি সরকার যে জানিয়েছে, এবার পাকিস্তানি সেনাকর্তারা বাংলাদেশের সেনা অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেবে, সেটা মেনে নিতে পারেননি সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান। এখন দেখার কার্যত ভঙ্গুর পাকিস্তান কি বাংলাদেশকে উদ্ধার করতে পারবে?
Discussion about this post