বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিভাজন ধীরে ধীরে দৃঢ় হচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে এখন সেটি পরস্পর বিরোধী অবস্থান নিচ্ছে। এই প্রসঙ্গে এনসিপির প্রধান আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম একটি বক্তব্য রেখেছেন। জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা অধরা থেকে যাচ্ছে দাবি এনসিপি নেতা নাহিদ ইসলামের।
ছাত্রদের নেতৃত্বে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপির নেতারা সাম্প্রতিককালে, বিভিন্ন দাবি নিয়ে সড়ক হচ্ছে রাজপথ দখল করে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। আর সেদেশের বর্তমান অন্তবর্তী সরকার ছাত্রদের সেই সমস্ত দাবি পূরণ করতে সদা প্রস্তুত থাকছে। এবার জাতীয় নাগরিক পার্টির দাবি জুলাই আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা অধরা থেকে যাচ্ছে। এই দাবিতেই এবার জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক না হাদিস ইসলাম তিনি বলছেন, বিচার এবং সংস্কার বাদ দিয়ে শুধু নির্বাচনের দিকে এগোলে, সেটিং দেশের সাধারণ জনগণ ও গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে প্রতারণা করা হবে। আর এই প্রতারণায় কাউকে সামিল হতে আমরা দেব না। অর্থাৎ তাদের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে এখন সব থেকে বড় বাধা হলো নির্বাচন। দেশে নির্বাচন হলে বিচারও হবে না সংস্কার হবে না।
কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দিচ্ছেন অন্য ব্যাখ্যা। তারা বলছেন দেশে নির্বাচনের পর ইউনুস সরকার না থাকলে, এখন যেসব দলগুলি বিশেষ সুবিধা পাচ্ছে তখন তারা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকবে। এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করছে, দেশজুড়ে মব সৃষ্টি করছে আর এত কিছুর পর বর্তমান সরকার থেকে বিশেষ সুবিধা বুঝে নিচ্ছে। কিন্তু দেশের নির্বাচনের মাধ্যমে কোন স্থায়ী সরকার আসতে সেই শাসক দলের কাছে এই সমস্ত সুবিধাভোগী সংগঠনগুলি আর জায়গা করে নিতে পারবে না। আসলে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের কোন নির্বাচিত সরকার নেই অর্থাৎ সে দেশে এখন সকলেই রাজা। তাই যার যেমন ইচ্ছা তেমনভাবেই সুবিধা ভোগ করছে তারা দেশের অভ্যন্তরে। পাশাপাশি নির্বাচনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু দার্শনিক যুক্তি তুলে ধরে নাহিদ ইসলাম বলছেন,”কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলকে সুবিধা বা ক্ষমতা দিতে কেউ রাজপথে নামেনি, কেউ জীবন দেয়নি। গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে যদি সরকার ব্যর্থ হয়, যদি কোনো রাজনৈতিক পক্ষ সেখানে বাধা তৈরি করে, তাহলে জনগণ আবারও রাজপথে নেমে আসবে। আমরা জীবন দিতে আবার প্রস্তুত থাকব।”
কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন এই জুলাই আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষা আদৌ কি ছিল? প্রথমে ছাত্ররা কোটা সংস্কার নিয়ে পথে নামল এরপর এই আন্দোলনটি যখন সরকার পতনের দাবিতে বৃহত্ত আকার ধারণ করল তখন জনগণও এই আন্দোলনে নামলো, এবং একটি দাবির মাধ্যমে তাদের দীর্ঘদিনের যে সরকারের বিরুদ্ধে আকাঙ্ক্ষা অর্থাৎ তারা এ সরকারকে আর চায় না সেই সমস্ত দাবি নিয়ে আন্দোলন তীব্র হল। গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হলো এবং শেষমেষ সরকার পতন হলো বাংলাদেশে। কিন্তু সেই আন্দোলনে কখনোই শোনা যায়নি এনসিপির তরফ থেকে যে দাবি করা হচ্ছে সেই দাবিগুলিতে কথা। কারণ বিচার দাবী সার্বিকভাবে থাকতেও সরকার পতনের পর একটি অন্তর্বর্তী সরকার দেশটিকে গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, অর্থাৎ সাধারণ মানুষ দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বেঁচে ছিল এবং শেষমেষ সরকারের পতনের পর তারা চেয়েছিল নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নতুন স্থায়ী সরকার দেশে নিয়ে এসে, সে সরকার সাধারণ জনগণের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া পূরণ করতে সক্ষম হবে। কিন্তু বাস্তবে থাকা কেন অন্য চিত্র সরকার পতনের পর নির্বাচন ছাড়াই দেশে অনির্বাচিত সরকার শাসন কার্য চালাচ্ছে, আর এটাই বছরের পর বছর চললে সেটা কি কোন বাস্তবতা? উঠছে প্রশ্ন। আর এখন এই ছাত্র নেতাদের সবথেকে বড় আতঙ্কের বিষয় হলো দেশের নির্বাচন, নির্বাচন হলেই তাদের সমস্ত ক্ষমতা শেষ হয়ে যাবে, গন অভ্যুত্থানের সময় তাদের যে শক্তি ও ক্ষমতা তৈরি হয়েছিল সেটাকে ধরে রাখতে সাহায্য করছে সে দেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিন্তু পরবর্তীতে স্থায়ী কোন সরকার, সরকারের মাথায় বসলে এই সমস্ত ছাত্র নেতারা যে প্রথমেই তাদের শক্তি হারাবে, তার বলার অপেক্ষা রাখে না।
Discussion about this post