তপ্ত কড়া থেকে আগুনে ঝাঁপ। দুটোই ভয়ংকর। কিন্তু ‘ফ্রাইং প্যান’ আর ‘ফায়ার’-য়ের মধ্যে যখন আর তৃতীয় বিকল্প থাকে না, তখন মানুষ বাধ্য হয়ে আগুনে ঝাঁপ দেয়। এটা জেনেও যে ওই আগুনে পুড়ে তাঁকে মরতে হবে।
পদ্মপারের রাজনীতি বর্তমানে ঠিক ওই তপ্ত কড়া আর আগুন। তপ্ত কড়ায় পা রাখা সম্ভব হচ্ছে না, তাই আগুনে ঝাঁপ দেওয়া ছাড়া দ্বিতীয় কোনও রাস্তা নেই। গত জুলাই অগাস্ট আন্দোলনের পর থেকে কিন্তু কড়া তপ্ত হতে শুরু করে। আর হাদির মৃত্যু কার্যত গোটা দেশে আগুন লাগিয়ে দিল। বৃহস্পতিবার রাতে যেই মূহূর্তে সিঙ্গাপুর থেকে খবর এল হাদির প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর চিরকালের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে, বাংলাদেশের একাংশ মানুষ ক্ষোভে ফুঁসতে শুরু করল। হাদিকে যেদিন গুলি করা হয়, সেদিন থেকে তাদের মধ্যে ক্ষোভ জমতে শুরু করে আর বৃহস্পতিবার রাতে গোটা বিশ্ব দেখল ক্ষোভের উদগিরণ। শুরু কিন্তু ক্ষমতা থেকে হাসিনার সরে যাওয়ার মধ্য দিয়ে।
গত বছর জুলাই-অগাস্টে বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। তখন ইস্যু ছিল একটাই হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে অবিলম্বে সরে যেতে হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা একপ্রকার নিঃশব্দে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। পদ্মাপারের একাংশ বাসিন্দার মধ্যে একটা ধারণা তৈরি হয়ে যায় যে সময়ের হাত ধরে সব কিছু থিতিয়ে যাবে। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হবে রুল অব ল্য। হয়েছে ঠিক উল্টো। তদারকি সরকার হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের কণ্ঠ রোধ করার প্রচেষ্টা চালায়। দলের নেতাদের গ্রেফতার করে জেলে পাঠাতে শুরু করে। আর সেনা শুরু হয় পেশি প্রদর্শন করতে থাকে। আর জুলাই-অগাস্ট আন্দলনের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িতদের অনেকে মন্ত্রী করা হয়। পরে তারা স্বীকার করেন সরকারে সামিল হওয়াটা তাদের উচিত হয়নি। কিন্তু ততদিনে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। কারণ, ইউনূস সরকার বিশ্বমঞ্চে দেশটিকে ভারত-বিরোধী, ভারত-বিদ্বেষী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলে এবং সেটা অত্যন্ত সুনিপুনভাবে। আর মাথাচাড়া দিতে থাকে মৌলবাদী শক্তি। আন্তর্জাতিকমহল থেকে একাধিকবার ঢাকাকে সংযত আচরণ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু দুধ-কলা দিয়ে ইউনূস যে সব কালসাপ পুষেছিলেন, তারা তো আর তাঁর কথা মানতে নারাজ। তাঁরা যাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে, এখন তারাই তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেশ শাসন করতে। একদিকে চলছিল তদারকি সরকারের সঙ্গে এই মৌলবাদী গোষ্ঠীর অদৃশ্য লড়াই, ওপর দিকে সরকারের তরফে ক্রমাগত আসতে শুরু করে ভারত বিরোধী কথাবার্তা। ঢাকার সঙ্গে ইসলামাবাদের সখ্য গড়ে ওঠে। একসময় যে সেনা তদারকি সরকারের পাশে ছিল, তাদের সঙ্গে তৈরি হয় দূরত্ব। এর ফলে যে শূন্যস্থান তৈরি হয়েছিল, সেই শূন্যস্থান পূরণ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। অত্যন্ত কৌশলে। সেই শূন্যস্থান দখল করে হাদি। দেড় বছরে উল্কা উত্থান হাদির। চলতি বছর জুলাইতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে সে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে করছিল। সেখানে এই ছাত্রনেতাকে বলতে শোনা যায় ‘বিএনপি যদি পুরনো ধারার রাজনীতি করে ক্ষমতায় আসে, সে ক্ষেত্রে তাঁরা দু বছর ক্ষমতায় টিকতে পারবে না।’
এই বক্তব্য কিন্তু অন্য ইঙ্গিত বহন করে। সেই ইঙ্গিত হল সরাসরি আগুন নিয়ে খেলা। বিপ্লবের আগুন। দূর থেকে সেই আগুনের তাত নেবে জেন এক্স। দরকার হলে তারা আগুন ঝাঁপিয়ে পড়তে দ্বিধা করবে না। সেই আগুনে শুধু তারা জ্বলেনি। তারা জ্বালিয়ে দিয়েছে প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের অফিস। যে দলের নেতা গত দেড় বছরে গণতন্ত্রের জন্য সওয়াল করেছিল, চেয়েছিল ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন, তারা গণতন্ত্রের চতুর্থস্তম্ভে হাতুড়ির ঘা দিল। বীবীন্দ্র-নজরুলের সংস্কৃতি এবং বাংলা সঙ্গীতের পীঠস্থান ছায়ানটে হামলা চালিয়ে তছনছ করে দেওয়া হল। বাংলাদেশ এখন তপ্ত কড়া থেকে ভয়ংকর আগুনে পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশে সমস্ত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছৌঁয়া, শুধু সস্তা হল লাশ। তৌহিদি জনগনকে খুশি করতে হলে শুধু টাকা পয়সা এবং...
Read more












Discussion about this post