কোন পথে চলেছে বাংলাদেশ? পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হওয়া বাংলাদেশ এখন ফের পূর্ব পাকিস্তানের পথে যেতে চায়। এখন প্রশ্ন হল, এই ইচ্ছা বাংলাদেশের সকল জনতার? নাকি ক্ষুদ্র একটি জনগোষ্ঠী এটা চাইছে, আর তাঁরাই বিশাল একটি জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে বাংলাদেশকে অশান্ত করতে চাইছে। গত কয়েকদিনের ঘটনাবলী অনেক প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখে শুনে মনে হচ্ছে তাঁরা কোনও কিছু ভাবতে নারাজ। অনেকটা বহ্নিপতঙ্গের মতো আগুনে ঝাঁপ দিতে চাইছে তাঁরা। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সঙ্গে যে মানুষটার নাম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে, তিনি হলেন শান্তির নোবেলজয়ী প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ডঃ মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর নামের আগে অনেকগুলি অলঙ্করণ যুক্ত রয়েছে। বিশ্ব তাঁকে একজন উদারপন্থী, সংস্কারপন্থী মানুষ হিসেবে চিনতো। কিন্তু বর্তমান বাংলাদেশে তিনিই কট্টরপন্থী ইসলামিক শক্তিগুলির মসীহা হয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন। তাঁকে সামনে রেখেই বাংলাদেশ এখন কট্টর ইসলামিক দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। এখানে কথায় কথায় জীবন্ত মানুষকে জ্বালিয়ে দেওয়া, সংখ্যালঘুদের উপাসনালয় ভাঙচুর, অগ্নীসংযোগ আর মব নামে এক উগ্র মানসিকতার জটলাকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। সরকারি স্তরেই তাঁদের প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছিল। ফলে যা হওয়ার তাই হল, এক উগ্র কট্টরপন্থী যুব নেতার মৃত্যুর পর গোটা বাংলাদেশে কার্যত আগুন জ্বলল। আর সরকার, সেনাবাহিনী তা বসে বসে দেখলো। তবে এখানে একটা ট্যুইস্ট আছে।
শরিফ ওসমান হাদি। কয়েকমাস আগেও তাঁকে কেউ চিনতো না। সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ছিল না, এনসিপি নামের রাজনৈতিক দলেও নেই। তবে গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে তাঁর উল্কার মতো উত্থান। ওসমান হাদির একমাত্র হাতিয়ার ছিল আওয়ামী লীগ ও ভারত-বিরোধিতা। যে ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙার ঘটনা হোক, বা সাংস্কৃতিকি কেন্দ্রে ভাঙচুর। ওসমান হাদিকে প্রথমসারিতে দেখা গেল। আবার প্রতিটি সভাতেই তাঁর আগুন ঝড়া বক্তৃতা। সে শেখ হাসিনার মা-মাসি উদ্ধার করা ভাষণ হোক বা ভারতের গুষ্টি উদ্ধার করা বচন। সেই সঙ্গে প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে কথায় কথায় অশালীন শব্দ বা গালিগালাজ প্রয়োগ করা ছিল ওসমান হাদির ইউএসপি। ফলে বিকৃতকাম যুব সমাজে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করে নেয় ওই কট্টরপন্থী নেতা। মূলত ভারত-বিরোধিতাকে আশ্রয় করেই তাঁর উল্কার গতিতে উত্থান। পতন হল এক মর্মান্তিক পরিণতিতে।
হাসিনা সরকারের পতনের পরে থেকেই একাধিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরেও সংখ্যালঘুদের উপর একাধিক হামলার ঘটনা সামনে এসেছে। কিন্তু হাদির মৃত্যুর পর যা ঘটল সেটা কার্যত নজিরবিহীন। চারিদিকে শুধু আগুন আর আগুন। কথায় কথায় ভারতকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেওয়া বা সেভেন সিস্টার্স দখল নেওয়ার হুমকি দেওয়া বাংলাদেশিরা এবার তাঁদের দেশেই আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের কার্যালয় থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ, বিএনপি নেতাদের বাড়িতে আগুন জ্বালাচ্ছে একদল মানুষ। শুক্রবার রাতে দরজায় তালা লাগিয়ে বিএনপি নেতার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা সামনে এল। সেই আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয়েছে ওই বিএনপি নেতার সাত বছরের কন্যার। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই বিএনপি নেতা এবং তাঁর দুই নাবালিকা কন্যা। তার আগে ‘ময়মনসিংহের ভালুকায় সনাতন ধর্মের অনুগামী দীপুচন্দ্র দাস নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করে গাছের সঙ্গে বেঁধে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। একাধিক ভি়ডিওতে দেখা গিয়েছে আশেপাশের জনতার উল্লাস। যা সত্যিই গভীর চিন্তার উদ্রেক করে। প্রশ্ন উঠছে, কেন নিজেদের দেশেই আগুন জ্বালছে বাংলাদেশিরা?
আসলে মুহাম্মদ ইউনূস চাইছেন, যে কোনও মূল্যে বাংলাদেশের নির্বাচন পিছিয়ে দিতে। আন্তর্জাতিক ও দেশের একটি অংশের চাপে তিনি নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছেন ঠিকই, কিন্তু সেটা কার্যত অনিচ্ছার বশবর্তী হয়ে। তিনি চান আরও কিছু সময় মসনদে বসে থাকতে। তার আগে জামাত ও এনসিপির মতো কট্টরপন্থী দলগুলিকে রাজনৈতিক জমি তৈরির সুযোগ করে দিতে। যাতে পরবর্তী নির্বাচনে তাঁরাই ক্ষমতায় আসতে পারে। তখনই নিরাপদ আশ্রয় পাবেন মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর ইচ্ছা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হয়ে আরও পাঁচ বছর বাংলাদেশে থাকতে। আর এই ব্যবস্থা কার্যকর করতেই বাংলাদেশে কার্যত জরুরি অবস্থার মুখোমুখী দাঁড় করিয়ে দিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু কেউ কেউ বলছেন, এটাই তাঁর ইতির সূচনা। যে জাতি নিজেদের দেশকেই ধ্বংস করতে চায়, সেই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব কতদিন?












Discussion about this post