বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্রনাথের স্মৃতি বিজরিত বাড়ি ভাঙচুর! এই নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বৃহস্পতিবার চিঠি দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই চিঠিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কঠোর ভাবে কথা বলার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে নোবেলজয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কাছারি বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর হয়ে গেল। অভিযোগ, ওই বাড়ির ভিতরে ঢুকে তাণ্ডব চালায় কয়েক জন দুষ্কৃতী। বিশ্বকবির বাড়ির আসবাবপত্র, জানলা ভাঙচুর করা হয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বাড়ির নিরপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে এক দলের বচসা থেকে এই কাণ্ড। সামান্য সাইকেল রাখার টোকেন দেওয়া নিয়ে ঝামেলার সূত্রপাত। তা বচসা থেকে মারামারিতে গড়ায়। এক কর্মীকেও মারধরের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এটাই কি কারণ? বাংলাদেশ ছাত্র লিগের দাবি ভিন্ন। তাঁদের বক্তব্য, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই এই কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। আর এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বাংলাদেশ বিরোধী অপশক্তি। মূলত, কট্টরপন্থী ইসলামিক সংগঠনগুলিই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের নাম পরিবর্তন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অস্বীকার, ধানমন্ডি-৩২ নম্বর বাড়ি ভাঙা, জাতীয় সংগীত ও পতাকা পরিবর্তনের দাবি, মাজার ভাঙা, নাটক-সিনেমা বন্ধ করে দেওয়া, পহেলা বৈশাখ ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বাধা দেওয়া, নারীকে ঘরের বাহিরে বের হতে না দেওয়ার মতো ফতোয়া জারি করার ধারাবাহিকতায় রবীন্দ্রনাথের কাছারিবাড়িতে এই হামলা। যার চূড়ান্ত পরিণতি হবে বাংলাদেশকে একটি জঙ্গিরাষ্ট্র বানানো। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ভারত সরকারও। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ দিক হল এই নিয়ে ক্ষোভ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বৃহস্পতিবার চিঠি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই চিঠিতে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে কঠোর অবস্থান নেওয়ার আর্জিও জানান।
বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সরাসরি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকেই চিঠি লিখলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, জীবৎকালে সিরাজগঞ্জের ওই বাড়িতে বহু বার গিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। সেখানে বসে বহু সাহিত্যরচনা করেছেন তিনি। যা ভাঙা হয়েছে, তা শুধু বাড়ি নয়, ‘সৃজনশীলতার ঝর্ণা’। পাশাপাশি এই ভাঙচুরের ঘটনা শুধু ‘বিস্ময়কর নয়, দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়ে তিনি নরেন্দ্র মোদির কাছে আর্জি জানান, প্রতিবেশী দেশের সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কঠোর ভাবে কথা বলার জন্য আমি আপনাকে আর্জি জানাচ্ছি। যাতে এই জঘন্য কাজ যাঁরা করেছেন, তাঁদের বিচার হয়। ইতিমধ্যেই অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের কাজ না হয়, সে জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিবাদ হওয়া উচিত। চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু দুই বাংলায় নয়, গোটা পৃথিবীতেই বিখ্যাত।
ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলনে কাছারি বাড়িতে হামলার ঘটনাকে ‘জঘন্য’ আখ্যা দিয়ে এর তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, ‘ওই হিংসাত্মক ঘটনা গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্তর্ভুক্তিমূলক দর্শন ও শিক্ষার পরিপন্থী। কবিগুরু সেই দর্শনের কথাই বারবার বলে এসেছেন। এই বিষয়ে ভারত সরকারের মনোভাব বলতে গিয়ে তিনি বলেন, উগ্রপন্থীরা’ বাংলাদেশের সহনশীলতা ও সমন্বয়মূলক সংস্কৃতির প্রতীকগুলো যেভাবে পরিকল্পিত উপায়ে ধ্বংস করে চলেছে, এই আক্রমণ তারই অংশ। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত, এই ‘সন্ত্রাসীদের’ বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে না পারে।
যদিও সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। জানা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, বাংলাদেশে যে ভাবে দিন দিন জঙ্গি ও জিহাদিদের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠছে। তাতে ভারত কোনও ব্যবস্থা নিতেই পারে। এদিন ভারতের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল যেমন এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, উগ্রপন্থীরা’ বাংলাদেশের সহনশীলতা ও সমন্বয়মূলক সংস্কৃতির প্রতীকগুলো যেভাবে পরিকল্পিত উপায়ে ধ্বংস করে চলেছে, এই আক্রমণ তারই অংশ। আবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও এই ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ হয়ে ভারতকে কঠোর অবস্থান নিতে অনুরোধ করেছেন। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ অন্যদিকে মোড় নিচ্ছে।
Discussion about this post