বাংলাদেশের পুলিশের হাতে কোনও মারণাস্ত্র থাকবে না। সমস্ত মারণাস্ত্র জমা দিতে হবে সরকারের কাছে। বাংলাদেশ সংবাদ মাধ্যম সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। তবে প্রশ্ন উঠছে, অস্ত্র ছাড়া কাজ করবে কি করে পুলিশ বাহিনী? অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্তে দেশে তো হু হু করে বাড়তে থাকবে অপরাধ? তখন লাগাম টানতে পারবেন তো বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূস? হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত কেন নেওয়া হল? নেপথ্যে কি জোরালো কারণ রয়েছে।
এই প্রশ্নগুলো উঠতে শুরু করেছে বাংলাদেশের অন্দরে। জানা যাচ্ছে, মারণাস্ত্র থাকবে এপিবিএন বা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অর্থাৎ সশস্ত্র পুলিশ ব্যাটেলিয়ানদের হাতে।
২০২৪ কোটা সংস্কার আন্দোলনে উত্তাল হয়েছিল গোটা বাংলাদেশ। সেই সময় পুলিশের ছোড়া রবার বুলেটে মৃত্যু হয়েছিল ছাত্র আবু সাইদের। শেখ হাসিনার জামানার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। ছাত্রদের ওপর কিভাবে গুলি চালায় পুলিশ? উঠে এসেছিল প্রশ্ন। শেষমেষ শেখ হাসিনার সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হবার পর সমস্ত পুলিশের থেকে অস্ত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি উঠেছিল। এমনকি জানা যাচ্ছে, জেলাশাসকের সম্মেলনেও কয়েকজন জেলাশাসক পুলিশের হাতে অস্ত্র না থাকার পক্ষেই মতামত পোষণ করেছিলেন। এরপরই জানা যায় সোমবার বৈঠকে বসেন বাংলাদেশ সরকারের আইনশৃঙ্খলার উপদেষ্টা কমিটি। বৈঠক শেষ হবার পর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়ে দেন, পুলিশের কাছে কোন রকম মারণাস্ত্র থাকার প্রয়োজন আমরা দেখছি না। কাজেই মারণাস্ত্র শুধুমাত্র থাকবে সশস্ত্র পুলিশ ব্যাটেলিয়ান এর কাছে। অর্থাৎ একমাত্র আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের কাছে। তবে এখন শুধু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাস্তবায়ন হতে সময় লাগবে।
তবে কোন কোন অস্ত্রগুলোকে মারণাস্ত্র বলা হচ্ছে? যেগুলি সাধারণ পুলিশের কাছে থাকবে না? বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমের দাবি, সব মেশিন গান, ৯ এমএম পিস্তল, রাইফেল পুলিসের হাতে থাকবে না। এর পাশাপাশি পুলিশের কাছে কি ধরনের অস্ত্র থাকবে সেটা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এর জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি পরবর্তীকালে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে কোটা বিরোধী আন্দোলনের প্রথম সারির অন্যতম মুখ আবু সাইদের মৃত্যুতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল বাংলাদেশে। এমনকি খবর, রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনের এক রিপোর্টে আবু সাইদের মৃত্যুর প্রসঙ্গ ওঠে। এখানে উল্লেখ করা হয় স্পষ্ট করে, এটা পুলিশের ইচ্ছাকৃত কাজ। এছাড়াও এই ঘটনা বিচার বহির্ভূত হত্যাও বলা যায়।
উল্লেখ্য, আবু সাইদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। কোটাবিরোধী আন্দোলনের প্রথম সারির মুখ ছিলেন আবু সাইদ। পুলিশের সঙ্গে যখন চরম সংঘর্ষ তৈরি হয়, তখন দু হাত ছেড়ে পুলিশের বন্দুকের সামনে নিজের বুক পেতে দিয়েছিলেন। আর সেই সময়ই পুলিশ নিজ দ্বিধায় গুলি চালাতে থাকে আবু সাইদের ওপর। পুলিশের ছোড়া রবার বুলেটে মৃত্যু হয় ছাত্রনেতার। তার মৃত্যুর পরই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কোটা সংস্কার আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করে। পুলিশের এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা ছড়ায়। শুধু তাই নয়, এতগুলো মাস কেটে যাবার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের এই সিদ্ধান্ত। পুলিসের হাত থেকে ইউনূস মারণাস্ত্র কেড়ে নিলেন, বলছেন অনেকে। স্বাভাবিকভাবেই একাধিক জল্পনার জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশের তদারকি সরকারের এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে।
Discussion about this post