বিগত দুই বছরে ভারতের তিন প্রতিবেশী দেশে গণঅভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছিল। এবার চতুর্থ দেশ হিসেবে বাংলাদেশও সেই তালিকায় নাম লেখালো। সোমবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাপে পড়ে পদত্যাগ করলেন এবং সেনা কপ্টারে চেপে দেশ ছাড়লেন। বাংলাদেশের ক্ষমতা এখন সেনাবাহিনীর হাতে। অবশ্য সেনাপ্রধান জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই বিএনপি, জামায়েত ইসলামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মতো বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করে তদারকি সরকার গঠন করা হবে। এই বক্তব্য থেকে পরিস্কার, বাংলাদেশে আওয়ামী লিগ নেত্রী শেখ হাসিনাকে হঠানোর পরিকল্পনাটি বেশ দীর্ঘমেয়াদী।
২০২২ সালের জুলাই মাসে এক গণবিক্ষোভ শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া রাজাপাক্ষেকে উৎক্ষাৎ করেছিল। রাষ্ট্রপতি ভবনের দখল নিয়েছিল জনগণ। দেশ ছেড়েছিলেন শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি। অবশ্য সেই সময় শ্রীলঙ্কা এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। ব্ল্যাকআউট, তীব্র খাদ্য সংকট, জ্বালানীর ঘাটতি, মুদ্রাস্ফিতির মতো সমস্যা শ্রীলঙ্কার জনগণকে বাধ্য করেছিল গণভ্যুত্থানে যেতে।
২০২২ সালের এপ্রিল মাসে পাকিস্তানেও ইমরান খান সরকারের পতন হয়েছিল প্রায় একই কারণে এবং একইভাবে। অনাস্থা ভোটে হারতে হয়েছিল পাকিস্তানের তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল তেহরিক-ই-ইনসানের নেতা প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। রাতারাতি নির্বাচিত সরকার পড়ে যায় তিনমাসের মধ্যে শেহবাজ খানের নেতৃত্বে জোট সরকার গঠিত হয়। এরপর ২০২৩ সালের মে মাসে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে হয় গণবিক্ষোভ। হামলা হয়েছিল সেনা এবং আইএসআই সদর দফতরেও।
২০২১ সালে অভ্যুত্থান হয় মিয়ানমারেও। সেই সময় মিয়ানমারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন অং সান সু চি। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান ঘটায়। মিয়ানমার সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং ক্ষমতাসীন দলের প্রধান এবং অন্যান্যদের গ্রেফতার করেন। যা ভারতের পড়শি দেশটিতে গণভ্যুত্থানের পরিস্থিতি তৈরি করে। শুরু হয়েছিল এক নির্মম গৃহযুদ্ধ। এবার প্রায় একই কায়দায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নির্বাচিত সরকারকে অপসারণে মদত দিল। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট আলাদা।
বিগত একমাস ধরে বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলন চালাচ্ছিলেন সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের ডাক দিয়ে। চলতি বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। রাস্তায় নামে লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রী। জায়গায় জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাঁধে। মৃত্যু হয় প্রায় ৩০০-র অধিক। সেই আন্দোলন সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের পর স্থিমিত হয়ে আসছিল। কিন্তু আচকাই ছাত্ররা হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। যার তীব্রতা অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই ভয়ানক আকার ধারণ করে। অহিংস আন্দলোন সহিংস হয়ে যায়। রবিবারই বাংলাদেশে বিভিন্ন সংঘর্ষে ১০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর আসে। আর সোমবারই হাসিনা সরকারের পতন হল। এই ধরণের ঘটনা একদিনে হয় না বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞমহল। কোটা আন্দোলনের সময় ছিল ৯ দফা দাবি। কিন্তু আন্দোলনকারীদের মাত্র এক দফা দাবি ছিল, সেটা হল হাসিনা সরকারের পতন। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, আওয়ামী লিগ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর তীব্র ক্ষোভ এই আন্দোলনকে বারুদে পরিনত করতে সাহায্য করেছে।
Discussion about this post