রবিবার থেকেই বোঝা যাচ্ছিল বাংলাদেশ কোন দিকে যাচ্ছে। একমাস ধরে চলা কোটা সংস্কার আন্দোলনে এমনিতেই অশান্ত ছিল বাংলাদেশ। মৃত্যু হয়েছিল ৩০০ জনের বেশি মানুষের। যদিও কোটা বাতিল নিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রায় এবং আওয়ামী লিগ সরকারের সেই রায় মেনে নেওয়ায় আন্দোলন কিছুটা স্থিমিত হয়েছিল। কিন্তু গত দুই তিন ধরে আচমকাই ফের ছাত্র আন্দোলন মাথা চারা দেয় বাংলাদেশে। বৈষ্যম্য বিরোধী অহিংস আন্দোলনের ডাক দেওয়া হলেও রবিবার থেকে তা সহিংস হয়ে যায়। রবিবারই গোটা বাংলাদেশে হিংসার বলি হয়েছেন শতাধিক মানুষ। বাংলাদেশ সেনাও প্রধানমন্ত্রীর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ফলে সোমবার প্রবল চাপে পড়ে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশ সেনা কপ্টারে বাংলাদেশ ছাড়েন। সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে শেখ হাসিনা নয়াদিল্লিতে রয়েছেন। এবং তিনি লন্ডন বা অন্য কোনও নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে চাইছেন।
বর্তমানে প্রচুর বাংলাদেশী আটকে রয়েছেন ভারতে। যারা ব্যবসায়ীক বা চিকিৎসাজনিত কারণে ভারতে এসেছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমান্ত বন্ধ থাকায় তাঁরা দেশে ফিরতে পারছেন না। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছিল নিউজ বর্তমান। বাংলাদেশের সরকার পতন, হাসিনার দেশত্যাগ প্রসঙ্গে তাঁদের মতামত ভিন্ন ভিন্ন হলেও বঙ্গবন্ধু মুজিবরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে সকলেই গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশী যুবক শিমুল এই মুহুর্তে পড়াশোনা করতে কলকাতায় আছেন। দেশের পরিস্থিতি নিয়ে সেও উদ্বিগ্ন। এরমধ্যেই তিনি জানালেন, দেশের খবর সেভাবে পাচ্ছেন না। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকার জন্য তিনি ছাত্র আন্দোলনে সামীলও হননি। তবে শেখ মুজিবরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন বাংলাদেশী ছাত্রটি। আরেক বাংলাদেশী ছাত্র রাকিব হুসেন রাব্বি এই মুহূর্তে কলকাতায়। তিনি অবশ্য বাংলাদেশের অভ্যুত্থান সমর্থন করছেন না। তাঁর দাবি, দেশের জনগণ যদি শান্তিতে না থাকে, দেশে শান্তি না থাকে তবে যে পরিস্থিতিই তৈরি হোক সেটাই খারাপ। ব্যবসায়ীক কাজে কলকাতায় আসা এক বাংলাদেশী নাগরিক অবশ্য শেখ হাসিনার পদত্যাগে খুশি। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। তিনি এও দাবি করেন, নতুন যে সরকার আসবে তাঁরা ভালোই কাজ করবে।
পরিবার নিয়ে ভারতে বেড়াতে আসা জাহাঙ্গির আলম কলকাতায় আটকে রয়েছেন। যদিও শেখ হাসিনার পদত্যাগে তিনি বেজায় খুশি। তাঁর দাবি, এটা দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল। তিনি বলেন, এবার ন্যায় বিচার হবে। প্রসঙ্গত বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরেই হাসিনা বিরোধী একটি শিবির মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিল। হাসিনা সরকারি ক্ষমতা প্রয়োগ করে তা দমিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশে জামায়তে ইসলামের মতো কট্টরপন্থী সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেও তিনি জনগণের একটা অংশের বিরাগভাজন হয়ে পড়েছিলেন। এরসঙ্গে বিরোধী বিএনপি ছাত্র আন্দোলনের নেপথ্যে থেকে সমর্থন করছিল। সবমিলিয়ে বাংলাদেশে দীর্ঘকালীন হাসিনা সরকারের পতন অনিবার্য হয়ে পড়ল।
Discussion about this post