বাংলাদেশ থেকে হাসিনা বিদায়ের পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘটছে বড় রদবদল। এমনকি এই বদল দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও। যা নিঃসন্দেহে ভারতের ঘুম কেড়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশ এবার পাকিস্তান থেকে বিপুল পরিমান অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনছে। ভারতের প্রথমসারির কয়েকটি সংবাদমাধ্যমও এই খবর প্রকাশ করেছে। পাকিস্তান থেকে কিনতে চাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের তালিকায় চোখ বোলালেই বোঝা যাবে বাংলাদেশের তদারকি সরকারের উদ্দেশ্য আসলে কী?
শেখ হাসিনার বিদায়ের পর বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নতুন তদারকি সরকার গঠিত হলেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর আক্রমণ এখনও কমেনি। বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে হিংসা এখনও অব্যাহত। বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্তে ভারতের সঙ্গেও টেনশন কমেনি। ইতিমধ্যেই গোটা সীমান্ত সিল করেছে বিএসএফ। এই অবহেই পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা আমদানির উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ভারতের।
পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে উত্তেজনাপূর্ণ হলেও, বর্তমানে সেই বৈরিতা অনেকটাই প্রশমিত। এই সম্পর্কে অনুঘটকের কাজ করেছে শেখ হাসিনার পতন। যিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বরাবরই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে, পাকিস্তানের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছিলেন। যার ফলে হাসিনার বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সব ধরণের সম্পর্ক প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। কিন্তু হাসিনার বিদায়ের পর সেই সম্পর্ক আবার নতুন করে পরিণতি লাভ করছে। পাকিস্তানের সঙ্গে শুধু বন্ধুত্বের সম্পর্ক নয়, এবার প্রতিরক্ষা চুক্তিতেও এগিয়েছে বাংলাদেশের ইউনূস সরকার।
এবার জেনে নেওয়া যাক, পাকিস্তানের থেকে কি কি ধরণের অস্ত্র এবং গোলাবারুদ কিনছে বাংলাদেশ
সূত্রের খবর, পাকিস্তানের অর্ডিনান্স ফ্যাক্টরি থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্য, বখতার শিকান অ্যান্টি ট্যাঙ্ক গাইডেড মিশাইল বা এটিজিএম কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভারতের ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পাকিস্তানের অর্ডিনান্স ফ্যাক্টরি থেকে প্রায় ৪০ হাজার রাউন্ড রাইফেলের গুলির বরাত দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ২০০০ ট্যাঙ্কের গোলা এবং ৪০ টন আরডিএক্স অর্ডার দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ২,৯০০ মতো রকেটের অর্ডারও দেওয়া হয়েছে। আরও জানা যাচ্ছে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে তিন ধাপে পাকিস্তানের অর্ডিনান্স ফ্যাক্টরি বাংলাদেশকে এই গোলাবারুদ ও অস্ত্র সরবরাহ করবে। আপনাদের আরও জানিয়ে রাথি, এর আগে গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানকে মাত্র ১২ হাজার রাউন্ড গুলি অর্ডার দিয়েছিল।
বাংলাদেশ ভারতকে বাদ দিয়ে পাকিস্তানকে গোলাবারুদ এবং অস্ত্রশস্ত্রের বরাত দিতেই পারে। এতে ভারতের চাপে পড়ার কি আছে। আসলে যা যা বরাত দেওয়া হল তার তালিকাই চিন্তার কারণ। আসলে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে পাকিস্তান থেকে বখতার শিকান অ্যান্টি ট্যাঙ্ক মিসাইল কিনছে। এই মিসাইল মূলত চিনের তৈরি নরিনকো এইচজে-৮ মিসাইলের একটি সংস্করণ বলা যায়। যা পাকিস্তানের অর্ডিনান্স ফ্যাক্টরি তৈরি করার লাইসেন্স পেয়েছে। এই ধরণের মিসাইল অপটিক্যাল ও ইনফ্রারেড ট্র্যাকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্ভুলভাবে লক্ষ্যে আঘাত করতে পারে। যা একটি ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী কামান। এই ধরণের ট্যাঙ্ক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যুক্ত হলে তাঁদের শক্তি বাড়বে বলেই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ইতিমধ্যেই ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তারপরই বাংলাদেশের ইউনূস সরকার পাকিস্তান থেকে অস্ত্রশস্ত্র এবং গোলাবারুদ কেনার সিদ্ধান্ত যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ভারতের বিএসএফ এমনিতেই যথেষ্ট শক্তিশালী। সেই তুলনায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি অনেকটাই দূর্বল। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের অভিমত, বাংলাদেশের নতুন তদারকি সরকার পাকিস্তানের পরামর্শেই বিজিবি-কে ভারতের সমতুল করতে উদ্যোগী হয়েছে। যাতে আগামীদিনে ভারতকে চাপে রাখা যায়।
Discussion about this post