বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন উপলক্ষে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় নির্বাচন নিয়ে একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে। এটা আর থামবে না’। কিন্তু সেই বক্তৃতায় স্পষ্ট কোনও রোডম্যাপ ছিল না। প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্য একেবারেই খুশি করতে পারেনি বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি-কে। পাশাপাশি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টিও প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচন করানোর গড়িমসি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু গত ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে তাঁর ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস একটা স্পষ্ট রোডম্যাপ দিলেন। তিনি জানালেন, ‘আগামী বছর ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে দেশে জাতীয় নির্বাচন হবে’।
মুহাম্মদ ইউনূসের এহেন ঘোষণা থেকে স্পষ্ট, আরও এক-দেড় বছর তদারকি সরকার ক্ষমতায় থাকতে চলেছে। যা নিয়ে এবার বাংলাদেশে কার্যত গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার জোগাড়। কারণ, অন্তরবর্তীকালীন সরকারের তিনমাস পূর্ণ হতেই বিএনপি নির্বাচন নিয়ে চাপ দিতে শুরু করেছিল। কিন্তু তদারকি সরকার বাংলাদেশে নির্বাচন-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের অজুহাত দেখিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে উদ্যোগী হয়েছে। আর এর পিছনে মদত রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবি, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের মতো বিভিন্ন দলের। কিন্তু বিএনপি অনড় বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন করানো নিয়ে। এর পিছনে তাঁদের একটা উদ্দেশ্য আছে। কারণ এই মুহূর্তে বাংলাদেশ আওয়ামী লিগ কার্যত নেতৃত্ববিহীন। এমনকি নির্বাচন হলে তাঁরা হয়তো অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। ফলে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ বিএনপির আছে এই মুহূর্তে। ফলে প্রধান উপদেষ্টার এই ঘোষণায় একেবারেই খুশি হয়নি বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাহ্উদ্দিন আহমদ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সময় সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছেন। কিন্তু তাতে সুস্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই। প্রয়োজনীয় কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার করা হবে, সে জন্য কতটা সময় প্রয়োজন, তা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে স্পষ্ট নয়।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ নির্বাচন সংস্কার কমিশনের এক সদস্য দাবি করেছেন, ১৮ বছর বয়সী প্রত্যেক নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে, যার ভিত্তিতে নির্ভুল ভোটার তালিকা করতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। গত তিনটি নির্বাচনে যে মানুষ ভোট দিতে পারেননি, সেটা ভোটার তালিকার গরমিলের কারণে নয়, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ না হওয়ার কারণে। গত তিনটি নির্বাচনে প্রথম ভোটার হওয়া তরুণ-তরুণীরা ভোট না দিলেও তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে। ফলে নির্ভুল ভোটার তালিকা করার কাজটি খুব কঠিন বলে যাঁরা প্রধান উপদেষ্টাকে বুঝিয়েছেন, তাঁরা ঠিক পরামর্শ দেননি।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির নেতা আন্দালিব রহমান পার্থ নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণাকে তীব্র আক্রমণ করেন। তিনি কার্যত হুঁশিয়ারির সুরেই ছাত্রনেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, কোনও দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য নির্বাচনকে কোনও ভাবেই বিলম্বিত করা যাবে না। বিএনপি নেতা রাহুল কবীর রিজভীও নির্বাচন নিয়ে একহাত নিয়েছেন ছাত্রনেতা ও প্রধান উপদেষ্টাকে। তিনি বলেন, আজকাল নির্বাচন নিয়ে কথা উঠলেই একদল কেমন যেন হয়ে যান। এটা ঠিক নয়, বরং গণতন্ত্রের দিকে নির্বাচনই একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। ফলে বোঝাই যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবি, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের মতো বিভিন্ন দলগুলির প্রচ্ছন্ন মদতেই মুহাম্মদ ইউনূস ক্ষমতা আকড়ে ধরে নির্বাচন বিলম্বিত করতে চাইছেন। যা নিয়ে বিএনপি-র সঙ্গে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভেদ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যা আগামীদিনে আরও তীব্রতর আন্দোলনের দিকে নিয়ে যাবে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল।
Discussion about this post