৫ অগাস্ট গণভ্যয়ুত্থানের জেরে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে হয়েছিল শেখ হাসিনাকে, তারপর বাংলাদেশে তৎপরতার সঙ্গে গঠন করা হয়েছিল তদারকি সরকার। নতুন সরকার গঠনের পর থেকেই ওপার বাংলায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে সংখ্যালঘু বিদ্বেষ। ভারত বিরোধী স্লোগান প্রতিনিয়ত ধেয়ে আসছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের তরফ থেকে। কখনও বাংলা- বিহার – ওড়িষ্যা দখলের কখনও আবার ৪দিনেই কলকাতা দখলের হুমকি দিচ্ছেন বাংলাদেষের বিরোধীরা। এর মাঝেই বাংলাদেশে গৃহযুদ্ধের আঁচ পাওয়া গেল। এবার ইউনূসের দলের বিরুদ্ধেই প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেল বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি-জামাত নেতাদের।
ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন নোবেলজয়ী মহম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশের বিভিন্ন সামাজিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েই অন্তরবর্তী সরকারের পদে বসেন তিনি। তবে এই সরকারের ১০০ দিন পেরোতে না পেরোতেই বাংলাদেশে দিকে দিকে উঠে এলো সংখ্যালঘু হামলা, নির্যাতন ও সংঘর্ষের ছবি। এই আবহেই ইউনুসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ্যে আসছে বিএনপি শিবিরে। কটাক্ষ শোনা যাচ্ছে, এক চোরকে সরিয়ে আরেক চোরকে এনেছি। উপদেষ্টা সরকারের নীতির তীব্র বিরোধিতা করতে দেখা যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলিকে। বিএনপি চাইছে সেদেশে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনের মাধ্যমে স্থায়ী সরকার গঠন হোক।
রাজনৈতিক দল গুলির দাবিতে পাল্টা ইউনূস সরকারের বক্তব্য, যে গুলিতে তিনি প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হয়েছিলেন জনগণের কাছে আগেসেগুলি দেশ সংষ্কার হবে, তারপর নির্বাচন। কিন্তু বিএনপি জামাত এর মত দল গুলি চাইছে বিপরীতটা। সেই প্রসঙ্গেই অন্তরবর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের ‘অকর্মণ্য’ বলে কটাক্ষ করে তাদের প্রশ্ন, কোথায় দেশের সংষ্কার ? চাল আলু পেঁয়াজের মত খাদ্যদ্রবের দাম নিয়ন্ত্রণ থেকে রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, এমনকি পুলিশের ভূমিকা কী স্পষ্ট? সব কিছু নিয়েও সরকারের কাছে সরাসরি জবাব চাইল বিএনপি। এরকম যাবতীয় উপদেষ্টাদের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়াতে দেখা যাচ্ছে বিএনপি নেতাদের। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফাখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন , এই সরকারের ব্যর্থতা জনগণ ব্যর্থতা। ৫৩ বছর ধরে কথায় ছিলেন তিনি? সরাসরি প্রশ্ন বিএনপির, এই প্রশ্নেরও পালটা জবাব দিতে দেখা গিয়েছে ইউনূস সরকারকে।
আর এই সংঘর্ষের মাঝে এখনও বাংলাদেশে বহাল ভারত বিদ্বেষী মনোভাব। তবে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পর থেকে কিছুটা হলেও সুর নরম হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বাংলাদেশে গিয়েছিলেন ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রি। দেশে ফিরে তিনি জানান, ভারতে বসে শেখ হাসিনা যে রাজনৈতিক মন্তব্য করে চলেছেন, তা পছন্দ করছে না দিল্লি। বিদেশ সচিবের কথায়, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কোনও একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কের ওপর দায়বদ্ধ ভারত।
তিনি আরও জানান, ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশি সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন তিনি। দিল্লি যে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন, তা স্পষ্ট করে ঢাকাকে জানিয়েছেন বিক্রম। এই আবহে বাংলাদেশ সরকার যে হিন্দুদের ওপর হামলার সব ঘটনা স্বীকার করছে না, তা নিয়ে ভারত সরকার এখনও চিন্তিত। তবে সম্প্রতি বাংলাদেশ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেটির প্রশংসা করেন বিক্রম।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ নিয়ে লোকসভায় ভারতের বিদেশ মন্ত্রী এস জয়শংকর বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে যা হচ্ছে, তা আমাদের কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের ওপর হামলার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। আমরা আমাদের উদ্বেগ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আমরা আশা করছি যে বাংলাদেশ তাদের নিজস্ব স্বার্থেই ব্যবস্থা নেবে যাতে সেখানকার সংখ্যালঘুরা নিরাপদে থাকে।’
এদিকে আবার সরকার পতনের পর মাস কয়েক যেতেই ফের সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগকে। ঢাকা, চট্টগ্রামে ফের রাজপথ দখল করছেন হাসিনার অনুগামীরা। সর্বত্র এই নতুন সংঘর্ষ ও উত্তপ্ত পরিস্থিতি কী ভাবে সামাল দেয় ইউনূস সরকার সেদিকেই নজর গোটা রাজনৈতিক মহলের।
Discussion about this post