আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্রমাগত দাবি করে চলেছেন তিনিই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংগর্ষবিরতি করিয়েছেন। এবার ইজরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধ তিন দিনে খতম হলেও এই যুদ্ধ পাঁচ দিনে পড়েছে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প রোজই হাঁকডাক করলেও, ইজরায়েল মানতে নারাজ, ইরানও মানতে নারাজ। উল্টে ইরান, মার্কিন সামরিক ঘাঁটি দূতাবাস ও মার্কিন যুদ্ধ বিমানেও হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে চরম অস্বস্তিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প। কার্যত বাধ্য হয়েই তিনি এবার চরম হুঁশিয়ারি দিলেন। এবার যুদ্ধ থামানোর থেকেও বড় কিছু করতে চলেছেন তিনি। তবে কী পদক্ষেপ, তা স্পষ্ট করেননি ট্রাম্প। তাঁর পদক্ষেপের দিকে সকলকে নজর রাখার পরামর্শও দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।
কানাডায় জি৭ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতির জন্যই জি৭ সম্মেলনের সূচি সম্পূর্ণ না-করেই ফিরতে হচ্ছে ট্রাম্পকে। মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতেই ওয়াশিংটনে ফিরছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতিমধ্যে জি৭ বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছেন তিনি। কী উদ্দেশ্য নিয়ে ট্রাম্প সফরসূচিতে কাটছাঁট করে আমেরিকায় ফিরছেন, তা এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। যদিও হোয়াইট হাউসের প্রেসসচিব ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছিলেন, পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতির জন্যই তিনি আমেরিকায় ফিরছেন। তবে পরবর্তী সময়ে স্বয়ং ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া একাউন্ট ট্রুথে পোস্ট করে জানিয়েছেন, বড় কিছু হতে চলেছে।
উল্লেখ্য, ইজ়রায়েল এবং ইরানের মধ্যে সংঘর্ষ মঙ্গলবার পঞ্চম দিনে পড়ল। দু’পক্ষই একে অন্যের উপর হামলা চালাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই পরিস্থিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কানাডা ছাড়ার পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ দাবি করেছিলেন, তিনি ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে গিয়েছেন। যা সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ার ফরাসি প্রেসিডেন্টকে বোকা বলে একটি পোস্টে লিখেছেন, মাক্রোঁ ‘ভুল’ কথা বলছেন। আমি কেন ওয়াশিংটনে ফিরছি, সে বিষয়ে কোনও ধারণাই নেই তাঁর। আর যা-ই হোক, এর সঙ্গে সংঘর্ষবিরতির কোনও সম্পর্ক নেই। বিষয়টি এর থেকেও অনেক বড়। জানি না ইচ্ছাকৃত ভাবে কি না, কিন্তু ইমানুয়েল সবসময় বাজে বকেন। নজর রাখুন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এহেন পোস্টের পরই বিশ্ব জুড়ে হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে কি ইরানের ওপর এবার মার্কিন ক্ষেপনাস্ত্র আক্রমণ শুরু হবে? অনেকেই বলছেন, জি-৭ সম্মেলনে তাঁর সফরসূচি কাটছাঁটের খবর প্রকাশ্যে আসার কিছু সময় আগেই ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে আরেকটা পোস্ট করেছিলেন। সেখানে তিনি লেখেন, তেহরান থেকে সকলকে অন্যত্র সরে যেতে। যা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ। ওই পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, “আমি যে ‘চুক্তি’তে ইরানকে সই করতে বলেছিলাম, তা ইরানের করে নেওয়া উচিত ছিল। কী লজ্জার বিষয়, মানুষের জীবন কী ভাবে নষ্ট হচ্ছে! সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ইরান পরমাণু অস্ত্র রাখতে পারে না। আমি বার বার বলেছি!” এর পরের বাক্যেই তিনি লেখেন, “প্রত্যেকের অবিলম্বে তেহরান থেকে সরে যাওয়া উচিত”।
সূত্রের খবর, মাত্র দিন তিনেক আগে ইরানের নবনিযুক্ত সেনাপ্রধান আলি শাদমানি ইজরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। সোমবার রাতভর হামলায় নিহত হয়েছেন ইরানের নবনিযুক্ত সেনাপ্রধান। এর আগে, ইরান সেনাবাহিনীর কমান্ডার হোসেন সালামি এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান বা চিফ অফ স্টাফ মহম্মদ হোসেন বাগেরির মৃত্যুর পর তাঁকে ওই পদে বসানো হয়েছিল। এবার তাঁরও মৃত্যু হল ইজরায়েলের হামলায়। এই পরিস্থিতিতেইরানে বসবাসকারী ভারতীয়দের তেহরান ছাড়ার পরামর্শ দিল ভারতও। মঙ্গলবার বিদেশ মন্ত্রকের তরফে ইরানে বসবাস সংক্রান্ত নয়া নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়। সেখানে জানানো হয় যে, তেহরানের ভারতীয় দূতাবাসের সহায়তায় তেহরান থেকে ভারতীয় পড়ুয়াদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ভারতীয় দূতাবাসের তরফে তিনটি হেল্পলাইন নম্বর দেওয়া হয়েছে। নম্বরগুলি হল +৯৮ ৯০১০১৪৪৫৫৭, +৯৮ ৯১২৮১০৯১১৫ +৯৮ ৯১২৮১০৯১৯০। যে কোনও পরিস্থিতিতে ওই নম্বরগুলিতে ফোন করতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, ইরানের ওপর ‘অপারেশন রাইজ়িং লায়ন’ শুরুর চার দিনের মাথাতেই ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়ে দিয়েছিলেন ইরানে ক্ষমতার পালাবদলই তাঁর মূল লক্ষ্য। পাশাপাশি তিনি এও জানান, ইরান প্রেসিডেন্ট নন, তাঁর নিশানায় যে শিয়া মুসলিম রাষ্ট্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেই। তাঁকেই ক্ষমতা থেকে সরাতে চান ইজরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পেরও একই অভিসন্ধি। ফলে বড় কিছু হতে চলেছে ইরানে। এমনটাই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞরা।
Discussion about this post