পাকিস্তানকে ধনেপ্রাণে মারার পরিকল্পনা করছে ভারত? গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার পর প্রথমে সিন্ধু জল চুক্তি বাতিল করা, এরপর বাণিজ্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত এবার আরও বড় পদক্ষেপের পথে ভারত। সূত্রের খবর, এবার পাকিস্তানের উপর জোড়া আর্থিক হামলার পরিকল্পনা করছে ভারত। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর পাকিস্তানকেই দায়ী করেছে ভারত। তাদের বিরুদ্ধে এর আগে একাধিক পদক্ষেপও করা হয়েছে। এবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে পাকিস্তানকে কোনঠাসা করার এবং আর্খিকভাবে আরও দুর্বল করার পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেলল মোদি সরকার। মূলত পাক মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদকে দমন করতে পদক্ষেপ বলে জানা যাচ্ছে।
ভারতের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা যেমন বিশ্বব্যাঙ্ক, আইএমএফ থেকে পাকিস্তান বিপুল পরিমান আর্থিক সাহায্য পেয়ে থাকে। কিন্তু সেই টাকার অপব্যবহার করে পাকিস্তান। কারণ আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে পাওয়া টাকা দেশের উন্নয়নের জন্য কাজে না লাগিয়ে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদকে মদতের জন্য খরচ করে বলে অভিযোগ নয়া দিল্লির। এই অভিযোগ আজকের নয়, বরং দীর্ঘ সময় ধরেই করে আসছে ভারত। দীর্ঘ দিনের এই দাবিকে এ বার আন্তর্জাতিক মঞ্চে আরও জোরদার করতে চাইছে নয়া দিল্লি। এ ক্ষেত্রে মূলত দু’টি পদক্ষেপের ভাবনা রয়েছে বলে সূত্রের দাবি। প্রথমটি হল, আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার বা আইএমএফে পাকিস্তান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করতে চলেছে ভারত। আইএমএফ থেকে ৭০০ কোটি ডলার যা ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫৯ হাজার কোটি টাকা অর্থসাহায্য পাচ্ছে পাকিস্তান। এর জন্য তিন বছরের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে। তিন বছর ধরে ওই পরিমাণ টাকা পাকিস্তানকে দেওয়া দেবে আইএমএফ। ভারতের অভিযোগ, এই টাকার অপব্যবহার করে সন্ত্রাসবাদের জন্য খরচ করছে পাকিস্তান। এই দাবীর সপক্ষে তথ্যপ্রমাণ দিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের উপর চাপ বাড়ানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে নয়া দিল্লি। আর দ্বিতীয় হল ফিনানশিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স বা এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকা বা গ্রে লিস্টে পাকিস্তানের নাম পুনরায় যোগ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপর চাপ বৃদ্ধি করা। উল্লেখ্য, এই তালিকায় আগেও ছিল পাকিস্তান। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমী দেশগুলির চাপে পাকিস্তানের নাম গ্রে লিস্ট থেকে বাদ যায়। ফলে পাকিস্তান আবার বিশ্বব্যাঙ্ক অথবা আইএমএফ থেকে ঋণ পাচ্ছে। এবার ভারত পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের মদতদাতা হিসেবে এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকায় নাম ঢোকাতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আর্থিক তছরুপ এবং সন্ত্রাসবাদে আর্থিক মদতের বিরুদ্ধে কাজ করে এই সংস্থা। যে সমস্ত দেশ এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকায় থাকে, সেই দেশগুলির কার্যকলাপের উপর আন্তর্জাতিক নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়। তাঁদের আর্থিক অনুদান বন্ধ থাকে। ভারত যদি এই কাজে সফল হয় তাহলে প্রবল চাপে পড়বে ইসলামাবাদ।
প্রসঙ্গত, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্স বৃহস্পতিবারই পাকিস্তানকে বড় বার্তা দিয়েছেন। এক বেসরকারি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “জঙ্গি হামলার প্রত্যাঘাত করবে ভারত। কিন্তু আমাদের আশা, সেই প্রত্যাঘাতের জেরে যেন বৃহত্তর এলাকায় সংঘাত তৈরি না হয়। আমরা মনে করি, পাকিস্তানেরও কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে। অনেক সময় পাকিস্তানের মাটি থেকেই নাশকতা চলে। তাই পাকিস্তানের উচিত সন্ত্রাসদমনে ভারতের পাশে থাকা এবং সহযোগিতা করা”। এরপরেই তাঁর সাবধানী মন্তব্য, পহেলগাঁও হামলার পালটা দেওয়া উচিত ভারতের। কিন্তু তার জেরে যেন বৃহত্তর যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি না হয়।
বাইট – জে ডি ভান্স, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট (টিসি –
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের আবহে ভারতের পাশেই দাঁড়িয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু তাঁরা চাইছে ভারত যেন কোনও ভাবেই যুদ্ধে না জড়িয়ে পড়ে। কারণ পাকিস্তান বারবার যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হচ্ছে ভারতকে প্রতিহত করতে। সেই মোতাবেক একের পর এক মার্কিন সচিব দুই তরফের সঙ্গেই টেলিফোনে কথা বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কারও ফোন ধরেননি। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা টেলিফোনে কথা বলছেন হয় জয়শঙ্কর না হয় রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে। যেমন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ টেলিফোনে কথা বলেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে। সূত্রের খবর, পাকিস্তান কীভাবে দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসে মদত দিচ্ছে সেই বিষয়টি হেগসেথের কাছে তুলে ধরেন রাজনাথ সিং। অপরদিকে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারত সরকার যে লড়াই করছে তার পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ। মার্কিন বিদেশ দযফতরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসও জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারতের পাশেই আছে।
বাইট – ট্যামি ব্রুস, মার্কিন মুখপাত্র (টিসি –
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব জানার পরই ভারত পাকিস্তানকে ধনেপ্রাণে মারতে জোড়া আক্রমণ করতে চলেছে কূটনৈতিকভাবে। যাতে এবার মার্কিন চাপে আইএমএফের ঋণ বন্ধ হয় এবং এফএটিএফ-এর ধূসর তালিকায় ফের নাম উঠে যায় পাকিস্তানের।
Discussion about this post