একদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদে পুনরায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন, অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদির সফল কূটনীতি। দুইয়ে মিলে ভারত-চিন সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চিনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং মুখোমুখি বৈঠকে বসেছিলেন। এর পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে সংঘাতের আবহ কমতে শুরু করে। এবার রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াই ই আলোচনায় বসেছিলেন। এখান থেকেই দুই পড়শি দেশের সম্পর্কে জমাট বাঁধা বরফ গলতে শুরু করে। সম্প্রতি, পূর্ব লাদাখের দুটি বিতর্কিত অঞ্চল দেপসাং এবং ডেমচোক থেকে দু-দেশের সেনাবাহিনী সরানো হয়েছে। যারা দীর্ঘদিন মুখোমুখী ছিলেন। ওই বিতর্কিত অঞ্চল ছাড়াও সিকিম ও অরুণাচলের কয়েকটি অংশ থেকেও চিনা সেনা পিছু হঠেছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছিল, চিন-ভারত কাছাকাছি আসছে। এবার দুই দেশের মধ্যে বিমান পরিষেবা চালু হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হল। সেই সঙ্গে বন্ধ থাকা কৈলাস মানস সরোবর যাত্রাও চালু হবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, চিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রক এটাকে ভারত-চীন সম্পর্ক একটি “নতুন সূচনা পয়েন্ট” হিসেবে উল্লেথ করেছে।
জানা যাচ্ছে, সম্প্রতি রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং চিনা বিদেশমন্ত্রী ওয়াই ই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। সেখানে মূলত দুটি বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছিল। একটি হল দু-দেশের মধ্যে বিমান পরিষেবা পুনরায় চালু করা এবং দ্বিতীয়টি হল, কৈলাশ মানস সরোবর যাত্রা চালু করা। যা খুব শীঘ্রই শুরু হতে পারে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক মহলের অনেকে। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে কোভিড মহামারীর কারণে ভারত ও চীনের মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ঠিক হয়ে গেলেও চিনের সঙ্গে বিমান পরিষেবা আর চালু হয়নি। কারণ, ২০২০ সালে পূর্ব লাদাখের গালওয়ানে দুই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে মুখোমুখী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। তাতে ভারতের ২০ জন জওয়ান শহীদ হন এবং বেশ কয়েকজন জওয়ান আহত হয়েছিলেন। অপরদিকে চিনের তরফেও হতাহতের সংখ্যা অনেক ছিল, কিন্তু চিনা প্রশাসন সে বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি। ফলে তাঁদের হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়নি। তবে এই ঘটনার পর থেকে ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছে গিয়েছিল।
কিন্তু বর্তমানে চিনা অর্থনীতি খুব একটা ভালো জায়গায় নেই। বিশ্ব বাজারে ভারতের কাছে এঁটে উঠছে না চিন। অপরদিকে মার্কিন মসনদে ফের বসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি যে চিনকে প্যাঁচে ফেলতে ভারতকে পাশে নিয়ে জোরদার দৌত চালাবেন সেটা একপ্রকার নিশ্চিত। সবমিলিয়ে শি জিংপিন খুব একটা সুখে নেই। তাই বাধ্য হয়েই ভারতের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে বেজিং। রিও ডি জেনেইরিও-তে দুই দেশের বিদেশমন্ত্রীর বৈঠকের পর থেকেই এই বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল। এই আবহেই দেওয়ালির সময় ভারতে অবস্থিত চিনের রাষ্ট্রদূত জু ফেইহং বলেন, তিনি তাকিয়ে রয়েছেন ভারত ও চিনের মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবা চালুর ইঙ্গিত দেন। আবার ভারতের বিদেশমন্ত্রকের জারি করা এক নোটেও উল্লেখ করা হয়েছে দুই দেশের মধ্যে বিমান পরিষেবা পুনরায় শুরু করা এবং কৈলাশ মানস সরোবর তীর্থযাত্রার পাশাপাশি আন্তঃসীমান্ত নদী এবং দুদেশের গণমাধ্যমের তথ্য আদান-প্রদানের বিষয়ে জয়শঙ্কর এবং ওয়াই আলোচনা করেছেন। কূটনৈতিক মহলের মতে, এস জয়শঙ্করের সফল দৌতের কাছেই মাথা নত করেছে চিন। ফলে তীর্থযাত্রীদের পাশাপাশি সাধারণ পর্যটক ও ব্যবসায়ীদের জন্য খুব শীঘ্রই খুশির খবর আসতে চলেছে।
Discussion about this post