খলিস্তানি জঙ্গিদের হত্যার ষড়যন্ত্রে এবার নাম জড়াল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির। এর আগে এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর নাম সামনে এসেছিল। বুধবার কানাডার সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, নিজ্জরকে হত্যার ছক কষার কথা জানতেন ভারতের প্রধানমন্ত্রীও। যা নিয়ে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে এই খবরের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে নয়া দিল্লি। কিন্তু ভারতে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক গুঞ্জন। কারণ ইতিমধ্যেই ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে বড়সড় কেলেঙ্কারির অভিযোগ এনেছে আমেরিকার আদালত। যা নিয়ে বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেছেন। ফলে এই মুহূর্তে ঘরে ও বাইরে প্রবল চাপে নরেন্দ্র মোদি।
দীর্ঘদিন যাবৎ খলিস্তানি জঙ্গিদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে কানাডা। এই নিয়ে ভারতের সঙ্গে কানাডার দীর্ঘ ঘাত প্রতিঘাত চলছে। এই অবহেই কানাডায় বসবাসকারী হরদীপ সিং নিজ্জর-সহ বেশ কয়েক জন খলিস্তানি জঙ্গির হত্যার ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কে আরও অবনতি হয়। এমনকি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কও তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে। এর অন্যতম কারণ, কানাডার জাস্টিন ট্রুডো সরকার সরাসরি দাবি করে বসে, এই হত্যা ঘটনার সঙ্গে ভারত যুক্ত। যা নিয়ে ভারত তীব্র প্রতিবাদ জানায়। গত অক্টোবরে নিজ্জর হত্যার ঘটনায় নাম জড়ায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর। এবার খোদ প্রধানমন্ত্রী মোদির নাম জড়ানোয় তীব্র প্রতিবাদ জানাল দিল্লি। কিন্তু গত অক্টোবরে নিজ্জর হত্যায় নাম জড়ায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর। তারপর নরেন্দ্র মোদি-সহ এস জয়শঙ্কর ও অজিত ডোভালের নামও সামনে আসে। তবে গোটা অভিযোগ করেছে কানাডার এক সংবাদপত্র। এই বিষয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালের বক্তব্য, “সাধারণত সংবাদমাধ্যমের খবর নিয়ে আমরা মন্তব্য করি না। কিন্তু কানাডা সরকারের সূত্র উদ্ধৃত করে যখন একটি সংবাদমাধ্যম হাস্যকর মন্তব্য করে তখন তা অবহেলার সঙ্গেই খারিজ করা উচিত”।
অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক আদালতে গৌতম আদানির-সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। অভিযোগ, ভারতের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের বরাত পেতে ভারত সরকারের আধিকারিকদের ২৬৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘুষ দিয়েছে গৌতম আদানির সংস্থা। ভারতীয় মুদ্রায় যা ২২০০ কোটি টাকারও বেশি। এই মামলায় সরাসরি অভিযুক্ত ভারতের অন্যতম ধনী শিল্পপতি। জানা যাচ্ছে এই বরাত পেলে আগামী ২০ বছরে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার লাভের মুখ দেখত আদানি গোষ্ঠী। ফলে বিষয়টি যথেষ্টই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে মার্কিন আদালত। ব্লুমবার্গ প্রতিবেদন অনুসারে আমেরিকার গোয়েব্দা বিভাগের আধিকারিকরা গৌতম আদানির এই ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছেন। যাচাই করে দেখা হচ্ছে অভিযোগের বাস্তবতা। তবে এই বিষয়ে মুখ খুলেছে হোয়াইট হাউসও। মার্কিন প্রেসিডেন্টের দফতর দাবি করেছে, ভারতীয় শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যাই অভিযোগ উঠুক না কেন তাতে ভারত-আমেরিকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে অবনতি হবে না। কারণ দুই দেশের সম্পর্ক যথেষ্ট মজবুত।
সবমিলিয়ে ভারত-আমেরিকা ও ভারত-কানাডা সম্পর্ক নিয়ে এখন দলাচলে নরেন্দ্র মোদি সরকার। নয়া দিল্লি যদিও মনে করছে কানাডার যাবতীয় অভিযোগ ভিত্তিহীন। ভারতকে বদনাম করতেই এই ধরণের অভিযোগ করা হচ্ছে। অপরদিকে আমেরিকায় অভিযুক্ত গৌতম আদানি ও তাঁর ভাইপো। ফলে এর জেরে সরাসরি ভারত সরকার জড়িত নয়। তবে গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে ভারত। অন্যদিকে আসন্ন শীতকালীন অধিবেশণে বিরোধী ইন্ডিয়া জোট যে এই দুই ইস্যুতে মোদি সরকারকে ছেড়ে কথা বলবে না সেটা রাহুল গান্ধি বুঝিয়ে দিয়েছেন।
Discussion about this post