মানুষ একটাই। সেই মানুষ কারও কাছে অনুপ্রেরণা শক্তি। আবার সেই মানুষ কারও কাছে চূড়ান্ত ঘৃণার। সেই মানুষটিকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ নিজেদের বেঁচে থাকার অক্সিজেন পেয়ে এসেছে। প্রতিবাদ করার সাহস পেয়ছে। ওদিকে আবার সেই মানুষটি কোনও একটি পক্ষের কাছে হিংসা, অস্থিরতা, বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরির হোতা। একটা গুলি তাঁকে যেমন গণমাধ্যমের আলোকে আলোকিত করে তুলেছিল, ঠিক বিপরীত দিকে সেই গুলি কারও কারও মনকে উৎফুল্ল করে তোলে। তারা যেন এই দিনটার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে এসেছে, শুরু গত জুলাই অগাস্ট আন্দোলনের পরবর্তী সময় থেকে। যে কথা নিয়ে কোনও তর্ক হতে পারে না, একটি মৃত্যু কিন্তু সে দেশের রাজনীতির অভিমুখ ঘুরিয়ে দিয়েছে। পাকিয়ে দিয়েছে তালগোল। সব হিসেব দিয়েছে উলটে। কে করল, কেন করল, কারা এর পিছনে – সব কিছুই রহস্যময়।
সব কিছুর একটা যেমন সলতে পাকানোর পর্ব থাকে, এ ক্ষেত্রেও সেটা হয়েছিল। গত বছর জুলাই-অগাস্টে গোটা দুনিয়া দেখল বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকার প্রধানকে তাঁর পদ থেকে সরে যাওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়েছে। তিনিও বুঝতে পেরেছিলেন, স্বেচ্ছায় সরে না গেলে তাঁকে বেঘোরে মরতে হবে। মরতে হবে তাঁর সমর্থকদের। জুলাই-অগাস্টে বাংলাদেশের রাজপথ তাজা রক্তে ভিজে গিয়েছিল। সেই রক্তের দাগ শুকিয়ে যাওয়ার আগেই ফের রক্ত। এই দুইয়ের মাঝে বাংলাদেশ দেখেছে বেশ কয়েকজন তরুণ তুর্কি নেতার উত্থান। প্রথম দিকে, তাদের ঘিরে দেশবাসীর একাংশের মধ্যে একটা আশা তৈরি হয়েছিল। তাঁরা বিশ্বাস করতে শুরু করেন, তরুণ নেতারা বাংলাদেশকে সব দিক থেকেই উন্নতির শিখরে পৌঁছে দেবে। কিন্তু বিগত দিনে বাংলাদেশ সব দিক থেকে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। আর সে দেশের মাটি হয়ে উঠেছে ভারত-বিদ্বেষের ভরকেন্দ্র। যে ছাত্রনেতারা পদ্মাপারে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন, ধীরে ধীরে তাদের স্বরূপ প্রকাশিত হতে শুরু করে। এমনকী তারাও ভারত-বিরোধী শক্তি হিসেবে নিজেদের জাহির করতে কুণ্ঠাবোধ করেনি। তাদের বলার ধরন, শরীরের ভাষা ছিল অত্যন্ত রূঢ়। আর সব বক্তব্যের লক্ষ্য ছিল ভারত।
ওসমান হাদিকে ওপর গুলি করার পর থেকে বাংলাদেশে শোনা গিয়েছিল টার্গেট কিলিংয়ের তত্ত্ব। অর্থাৎ যাকে সরিয়ে দিলে বিশেষ একটি গোষ্ঠীর লাভ, তাকে আগে সরাতে হবে। আর সেটা করতে পারলে গোষ্ঠীর লোকেরা কোনওভাবেই দুঃসাহস দেখাবে না। বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগ –বিরোধী রাজনীতির যারা মুখ, তাদের এবার নিশানা করা হচ্ছে। এটা একটা ধারণা। রাসেদ খান, হাসনাত আবদুল্লা, ব্যারিস্টার ফুয়াদ সহ অনেকেই বলছে, একটা তালিকা করে রীতিমতো টার্গেট কিলিং শুরু হয়েছে। হাদির মৃত্যুর খবর যেদিন এলো সেদিন সকালে হাজারীবাগ থেকে এক বিএনপি নেত্রীর দেহ উদ্ধার হয়। মৃতের নাম জান্নাত আরা রুমি (৩২)। উদ্ধার হয়েছে জিগাতলা জান্নাত নারী হস্টেলের পঞ্চম তলা ভবনে। তবে তিনিও কি টার্গেট কিলিংয়ের শিকার। এই লাশ পাওয়ার ঘটনাটি সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক গুরুত্ব পেয়েছে। ঘটনাটি আরও একটি কারণে গুরুত্ব পেয়েছে। কারণ, আওয়ামী লীগ যেদিন লকডাউন কর্মসূচির ঘোষণা করে সেদিন জান্নাতকে দেখা গিয়েছিল ধানমন্ডীর ৩২ নম্বর বাড়ির সামনে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে। উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগের কোনও নেতাকর্মী সেখানে গেলে তাঁকে লাঠিপেটা করবেন। দেখা যায় এক সালমা ইসলাম নামে এক গৃহিনী ওই বাড়ির সামনে উপস্থিতল হেল এই জান্নাত তাকে লাঠি দিয়ে মারধর করে। তাই, তার লাশ উদ্ধার প্রশ্ন তুলছে – তিনিও কি টার্গেট কিলিংয়ের শিকার হলেন?











Discussion about this post