মাত্র একটি গুলি। এতেই স্তব্ধ হয়েছে বাংলাদেশ। গুলির আঘাতে মৃত্যু হয়েছে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান হাদির। এখনও পর্যন্ত তাঁর ঘাতকের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। হাদির আসল খুনিকে ইউনূসের সরকার কি ধরতে পারবে? নাকি অধরাই থেকে যাবে সত্যি? এত মানুষের আবেগ কি বৃথা যাবে? তিনি কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, দেশী বিদেশী অন্তত ৩০ টি নম্বর থেকে তাঁকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এমনকি হুমকি দেওয়া হয়েছিল তার মা, বোন, স্ত্রীকেও। এমনকি তার বাড়িতে আগুন দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এত হুমকির পরও, হাদির এই নিয়ে বারবার বলার পরও কেন কোনও পদক্ষেপ করতে পারল না ইউনূস প্রশাসন? আদেও কি ইউনূস প্রশাসন দোষীদের ধরতে পারবে?
ওসমান হাদির কন্ঠ ছিল দীপ্ত, বলিষ্ট। মূলত তার লড়াই ছিল ভারতের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সেই বিরোধীতা করতে গিয়ে ভারতকে শত্রু হিসাবে পরিচিতি করাতে চেয়েছিলেন। খুব অল্প দিনের মধ্যেই তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। তিনি বারবার বলতেন, বুলেট ছাড়া তাঁকে কেউ থামাতে পারবে না। আর সেটাই সত্যি হল। ১২ই ডিসেম্বর শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর রাস্তায় বেরোতেই গুলি চলে হাদির উপর। দুই আততায়ী বাইকে করে এসে হাদিকে টার্গেট করে গুলি চালিয়ে সুচারুভাবে বেরিয়ে যায়। ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ব্যাটারি চালিত রিক্সায় ছিলেন ওসমান হাদি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও একজন ব্যক্তি। ফকিরাপুলের দিক থেকে তাঁরা পশ্চিমে বিজয়নগরের দিকে যাচ্ছিলেন। তাঁদের অনুসরণ করছিল একটি বাইক। বেলা ২ টো ২৪ মিনিটে রিক্সা চলন্ত অবস্থায় পিছন থেকে বাইকে আসা আততায়ী হাদি কে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলি চালানোর মুহূর্ত ধরা পড়ে সিসিটিভি ক্যামেরাতে। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর এভার কেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় হাদিকে। আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার এম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গাপুর। কিন্তু শুরু আর হল না। ১৮ই ডিসেম্বর তিনি সিঙ্গাপুরে মৃত্যু বরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর অশান্ত হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ। ঝালকাঠি থেকে উঠে আসা একটি তরুণ বাংলাদেশের মানুষের কাছে আবেগ হয়ে উঠেছেন। ছাকার রাজপথ যেমন স্লোগান স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠেছে। ঠিক একইভাবে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। সংবাদমাধ্যমের দফতর পুড়েছে। সাংবাদিক থেকে সাধারণ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। এখনও পর্যন্ত কতজনের মৃত্যু ঘটেছে, তার সঠিক তালিকা পাওয়া যায়নি। অনেকে এটাকে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে তুলনা করছেন। তবে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে ভুগছে। হয়ত তাদের উপর খাঁড়ার ঘা নেমে আসতে পারে। পাশাপাশি একটি নির্বাচন হওয়ার যে আশা পাওয়া যাচ্ছিল, এই ঘটনার তালেগোলে সেটা পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে। তবে এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন, হাদির আসল ঘাতককে কি গ্রেফতার করতে পারবে মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার? তারা বলার চেষ্টা করছে, ঘাতক নাকি ভারতে পালিয়ে গিয়েছে। এখানেও প্রশ্ন, ভারতে পালিয়ে যাওয়ার যদি তারা খবর পায়, তবে ধরতে কেন পারল না ঘাতককে? অনেকে বলছেন, সাধারণ মানুষকে আরও একবার ভুল বোঝানো হচ্ছে। সেই কারণেই ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। তবে ,ভারত বিরোধীতার ঊর্ধ্বে উঠে হাদির ঘাততকে ধরতে পারে কিনা ইউনূসের প্রশাসন, সেটাই দেখার।












Discussion about this post