গত বছর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অস্থির হতে শুরু করেছিল। ভারত-বিদ্বেষী যুব নেতা ওসমান হাদির মৃত্যুর পর সেই সম্পর্ক কার্যত শেষ বিন্দুতে এসে ঠেকেছে। ভারতে থাকা বাংলাদেশের সমস্ত ভিসা সেন্টার বন্ধ করে দিয়েছে ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। ভারত আপাতত দুটি উপ দূতাবাসের ভিসা সেন্টার বন্ধ রেখেছে। তবে শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশের সমস্ত কূটনৈতিক মিশন বন্ধ করে দেওয়ার তোড়জোর করছে নয়া দিল্লি। খুব শীঘ্রই হয়তো এই ঘোষণা করা হবে। বাংলাদেশে যেভাবে হিন্দুদের উপর নৃশংশ ঘটনা বাড়ছে, সেটা নিয়েই হয়তো এবার কড়া অবস্থান নিতে চলেছে ভারত। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই পরিস্থিতিতে মুখ খুললেন ভারতে অবস্থানরত বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার এক অডিও বার্তায় হাসিনা জানান, দীপু দাস ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা কোনও মন্তব্য করেছে, এমন প্রমাণ মেলেনি। পাশাপাশি তিনি দাবি করেন, আমি বেঁচে থাকতে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করবই।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের তরফে যে দায়মুক্তি অনুষ্ঠান হয় সেখানে নিহত দীপু দাসের পরিবারের সাথে কথা বলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীপু দাসের দাদা এবং বাবা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বললেও হাসিনার অডিও শোনা গিয়েছে যথারীতি। সেখানেই বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দাবি করেন, “এরা কি সেইসব মানুষ যাদের খাদ্য, শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলাম?” এর আগে বাংলাদেশে লাগাতার চলতে থাকা হিংসার ঘটনায় শেখ হাসিনা সে দেশের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উপরেই যাবতীয় দায় চাপিয়েছিলেন। এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ভারত-সহ গোটা দক্ষিণ এশিয়ার জন্যও বিপদের বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। পাশাপাশি ইউনুস জমানায় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন হাসিনা। তিনি বলেন, ইউনুস প্রশাসন লাগাতার ভারত বিরোধী বয়ান দিচ্ছে। সংখ্যালঘুদের রক্ষা করতে ওরা পুরোপুরি ব্যর্থ, চরমপন্থীদের খোলা ছাড় দেওয়া হয়েছে। তাঁরাই বিদেশনীতি ঠিক করে দিচ্ছে। এক অডিও বার্তায় তিনি জামাতকেই ইউনূসের সবচেয়ে বড় দোসর বলে উল্লেখ করেন।
এই আবহে সংবাদসংস্থা এএনআইকে ইমেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হাসিনা বলেন, চরমপন্থীরা ভারত বিরোধী মনোভাবকে দিনের পর দিন উস্কানি দিচ্ছে। তাতে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। ইচ্ছাকৃতভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরি করছে এই সরকার। কারণ এই সব মৌলবাদীদের বাড়বাড়ন্ত তো ইউনুসের সরকারের আমলেই। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে শেখ হাসিনার ব্যাখ্যা, মুহাম্মদ ইউনুসই চরমপন্থীদের হাতে দেশটা ছেড়ে দিয়েছেন। তার পরিণতি সাধারণ মানুষকে ভোগ করতে হচ্ছে। তবে সবচেয়ে যে প্রশ্নটা এখন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনে জেগে উঠছে যে তিনি বাংলাদেশে কবে ফিরবেন, সেটা নিয়েও মুখ খুলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, যখন বাংলাদেশের একটি বৈধ সরকার এবং একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ থাকবে, তখন আমি আনন্দের সঙ্গে সেই দেশে ফিরে যাব। আমি তো সেই দেশের মানুষেরই সারা জীবন সেবা করেছি। অর্থাৎ এর থেকেই বোঝা যায়, আওয়ামী লীগ বিহীন নির্বাচন তিনি মেনে নেবেন না। আর যদি বাংলাদেশে সুষ্ঠ, অবাধ ও অন্তর্ভূক্তিমূলক একটা নির্বাচন হয় তারপর যে সরকার ক্ষমতায় আসবে তাঁরা যদি ইউনূসের আমলের বিচারকে দূরে রেখে আলোচনার টেবিলে আসে তাহলেই তিনি দেশে ফিরবেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই বক্তব্য ভারতেরও।












Discussion about this post