গত বছর সরকার পতনের পর ডঃ মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের শাসন শুরু হয় পদ্মাপাড়ের দেশে। এরপরই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পরে ভারত বিরোধিতা। পাকিস্তানকে সাথে নিয়ে ভারতকে চাপে ফেলতে মরিয়া বাংলাদেশের অন্তরবর্তী সরকার। এবার পাল্টা চাল দিতে প্রস্তুত ভারত। ভারত আগেই বাংলাদেশকে বাণিজ্যিক দিক থেকে চাপে ফেলেছে। প্রথমেই বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল। আর এবার স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল ভারত। এই বহুমুখী চাপ সামলাতে না পেরে এবার ভারতের শরণাপন্ন সে দেশের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনুস।
সম্প্রতি,ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে একাধিক বাংলাদেশি পণ্যের আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে ভারত সরকার। এই আবহে সমস্যার সুরাহা করতে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইঙ্গিত দিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ভারতের এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে আসার পর বলেন, “ভারতের পদক্ষেপের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানি না। বিষয়টিতে অবগত হলে আমরা পদক্ষেপ করতে পারব।” তিনি আরও বলেন, “যদি কোনও সমস্যা দেখা দেয়, তবে দু’পক্ষ আলোচনা করব এবং তা মেটানোর চেষ্টা করব।”
বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, পোশাকসহ প্রায় সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত সরকার।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় সুতা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের এক মাসের মাথায় ভারতের এই পাল্টা নিষেধাজ্ঞা এল, যা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করার কথা বলেছে ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
উল্লেখ্য,ভারতের এই পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং প্লাস্টিক সামগ্রীসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পণ্য শুধু নির্দিষ্ট সমুদ্রবন্দর দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে অথবা কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে স্থলপথে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যেমন বাংলাদেশি তৈরি পোশাক এখন শুধু কলকাতা ও মুম্বাই সমুদ্রবন্দর দিয়ে আমদানি করা যাবে।
তবে মাছ, এলপিজি, ভোজ্যতেল, চুনোপাথরের ক্ষেত্রে অবশ্য স্থলপথে বাণিজ্যে কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করেনি ভারত। তা ছাড়া, ভারতের মাধ্যমে নেপাল বা ভুটানে বাংলাদেশের যে পণ্য যায়, তার ক্ষেত্রেও কোনও বিধিনিষেধ থাকছে না বলে জানিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারত সরকারের নির্দেশিকা মেনে এখন থেকে পোশাক, তেল, ফল বা সুতো এ দেশে রফতানি করতে হলে বাংলাদেশের একমাত্র ভরসা জলপথ। তা ব্যবহার করা হবে। কিন্তু এতে রফতানির পরিমাণ কমতে বাধ্য। ফলে বাংলাদেশ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছিল। স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানিতে ভারত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় । যার প্রভাব পড়বে আনুমানিক ৭৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্যের ওপর। এটি মোট দ্বিপাক্ষিক আমদানির প্রায় ৪২ শতাংশ। এমন তথ্য জানিয়েছে গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বা জিটিআরআই।
জিটিআরআই জানিয়েছে, ভারতের এই পদক্ষেপ এককভাবে নেওয়া নয় বরং বাংলাদেশ কর্তৃক ভারতীয় রপ্তানির ওপর আরোপিত নানা বাধা এবং চীনের প্রতি ঢাকার কূটনৈতিক ঝোঁকের প্রতিক্রিয়ায় এসেছে।
ভারত সরকার উদ্বিগ্ন বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। সেই আবহেই বেশ কিছুদিন আগে মোঃ ইউনূস চিন সফরে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলি সম্পর্কে তিনি বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ। এর মাঝেই সম্প্রতি ভারত থেকে স্থলপথে সুতো আমদানি বন্ধ করে দেয় ঢাকা। তার পরেই ভারতের এই পাল্টা পদক্ষেপ।
Discussion about this post