২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ভারতের সাথে আফগানিস্তানের বাণিজ্য ৮৯০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি পৌঁছেছে। এমনটাই দাবি করেছিলেন তালিবান আফগান সরকারের মুখপাত্র আব্দুল সালাম জাওয়াদ। তিনি আরও জানিয়েছিলেন আফগানিস্তান ভারতে ৬২৭ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রফতানি করেছে এবং দেশ থেকে ২৬৩ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। এই তথ্য দেখে একটা দিক পরিষ্কার আফগানিস্তান ভারতের সঙ্গে দৃঢ়তার সঙ্গে বাণিজ্য করছে। যা তাদের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সাহায্য করছে। এখানেই শেষ নয়, ভারত সরকার তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে বেশ কয়েকটি প্রকল্প রূপায়িত করছে যা সেই দেশের উন্নয়নের স্বার্থে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মুহূর্তে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে পুরোদস্তুর যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়ে রয়েছে। পাকিস্তানের আশঙ্কা ভারত যে কোনও সময়, যে কোনও ভাবে ও যে কোনও দিক থেকে আক্রমণ করতে পারে। এই আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন কূটনৈতিক মহলের একটা বড় অংশ। এই পরিস্থিতিতে ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে চলা বাণিজ্য প্রবল অনিশ্চিয়তার মধ্যে পড়েছে। গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছিলো। ২৫ এপ্রিল ভারত ওয়াঘা-আটারি সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। পাল্টা চাল হিসেবে পাকিস্তানও সীমান্ত বন্ধের নির্দেশ দেয়। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানে আটকে পড়ে আফগানিস্তানের ১৫০-টির বেশি পণ্যবাহী ট্রাক। যা আফগানিস্তান থেকে বাণিজ্যক পণ্য নিয়ে ভারতে আসছিল। আফগান ট্রাকগুলি পাকিস্তানে আটকে যাওয়ার পরই তৎপরতা শুরু হয় কাবুলে। শেষ পর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হল পাকিস্তান, প্রায় এক সপ্তাহ পর পাকিস্তান জানিয়ে দিল, যে সমস্ত আফগান ট্রাক পণ্য নিয়ে ২৫ এপ্রিলের পর পাকিস্তানে ঢুকেছিল, সেগুলি নিয়ম মেনে ছেড়ে দেওয়া হবে। এটা আফগানিস্তানের বড় কূটনৈতিক জয় হিসেবে দেখছে।
ওয়াকিবহাল মহলের মতে গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলার পরদিনই আফগানিস্তানের তালিবান সরকার কড়া বার্তা দিয়ে এই হামলার নিন্দা জানায়। সেই সঙ্গে তাঁরা ভারতের পাশে দাঁড়ানোর বার্তাও দিয়েছে। যা পাকিস্তান একেবারেই হজম করতে পারছিল না। ফলে আফগানিস্তানের ট্রাক আটকে বার্তা দিতে চেয়েছিল ইসলামাবাদ। কিন্তু আচমকাই খেলা ঘুরে যায় ভারতের এক কূটনৈতিক চালে। কাবুলে পৌঁছে যায় ভারতের বিদেশমন্ত্রকের এক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। আফগান তালিবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতীয় কূটনীতিক এম আনন্দ প্রকাশের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল। তালিবান সরকারের বিদেশ মন্ত্রক জানিয়েছে, দু’পক্ষের মধ্যে ‘সাম্প্রতিক আঞ্চলিক পরিস্থিতি’ নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। সেই সঙ্গে এও জানানো হয়, ভারত আফগানিস্তানে থমকে থাকা কয়েকটি প্রকল্পও চালু করতে চায়। এরপরই প্রমোদ গুণতে শুরু করে পাকিস্তান। কারণ, আফগানিস্তান বহুদিন ধরেই ভারতের সাহায্য নিয়ে কাবুল ও কুনার নদীতে বাঁধ নির্মান করতে চাইছে। এবার সেই উদ্যোগ দ্রুততার সঙ্গে নিতে চাইছে ভারত। আফগানিস্তানে যদি ওই দুই নদীবাঁধ তৈরি হয়ে যায়, তাহলে পাকিস্তানে জল আটকে দিতে পারে তালিবান সরকার। এই আশঙ্কাই করছে ইসলামাবাদ। ফলে তরিঘড়ি পাকিস্তানে আটকে থাকা পণ্যবাহী ট্রাকগুলি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসলামাবাদ। এই মুহূর্তে পাক-আফগান সীমান্তের পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত। ভারতের সঙ্গে আফগানিস্তানের বাণিজ্যের পরিমান দেখে নিশ্চিই বোঝা যাচ্ছে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কের বুনিয়াদ ঠিক কতটা। কিন্তু মাঝে কাঁটা শুধু পাকিস্তান। কারণ, ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য হয় পাকিস্তানের মধ্যে দিয়ে। কিন্তু পাক অধিকৃত কাশ্মীর যদি ভারতের দখলে চলে আসে, তাহলে এই সমস্যার সমাধান চিরতরে হয়ে যাবে। এখানেই আশঙ্কা পাকিস্তানের। তাঁরা মনে করছে, ভারত যদি পাকিস্তান আক্রমণ করে, তাহলে আফগান তালিবানও পশ্চিম প্রান্তে হামলা করতে পারে। এটা হলে দুটি ফ্রন্টে যুদ্ধ করতে হবে পাকিস্তানকে। যা তাঁদের পক্ষে খুবই সমস্যাজনক।
Discussion about this post