বাংলাদেশ আজ এক উদ্বেগজনক সন্ধিক্ষণের মুখে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে মুহাম্মদ ইউনূসের দুর্বল কূটনীতি, শাসনব্যবস্থার ব্যর্থতা ও বহিরাগত প্রভাব যেমন চোখে পড়ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুর্বল মনোভাব ও কোনঠাসা অবস্থা এই পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলেছে। যা ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে যেমন মারাত্মক ঝুকির মুখে ঠেলে দিয়েছে, তেমনই দক্ষিণ এশিয়ার ভূ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকেও বদলে দিয়েছে। এর ফলে ভারতীয় উপমহাদেশের আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং কৌশলগত স্বার্থও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
গত বছরের ৫ আগষ্টের আগে পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক ছিল আঠার মতো শক্ত। কিন্তু রাজনৈতিক পালাবদলের পর মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের ক্ষমতা হাতে নেওয়ার পর থেকে সেই আঠা আলগা হতে করে। বর্তমানে তা কার্যত খসে পড়ার মুখে। এই পরিস্থিতিতে মুহাম্মদ ইউনূস, যিনি মার্কিন ডিপ স্টেটের রোপন করা একজন শাসক, তিনি বাংলাদেশে একটি মার্কিন সামরিক ঘাঁটি দিতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ও তাঁর সহযোগী মার্কিন নাগরিক খলিলুর রহমান মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির জন্য একটি মানবিক করিডোর দিতে উদ্যোগী। যার আড়ালে তৈরি হচ্ছে মার্কিন ঘাঁটি। যদিও এর বিরোধিতা করছেন বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান। তাঁর কড়া অবস্থানের পর সেনাবাহিনীর একটা বড় অংশও রাখাইন মানবিক করিডোরের বিরোধিতা করেছে এবং এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু তাতেও দমে যাওয়ার পাত্র নন “আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়” মুহাম্মদ ইউনূস। ফলে খলিলুর রহমানকে ব্যবহার করে এবং জামাযতে ইসলামী বাংলাদেশের সাহায্য নিয়ে তিনি সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের একটি বিরুদ্ধ গোষ্ঠী তৈরি করে ফেলেছেন। ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন আড়াআড়ি বিভক্ত। তবে, সেনাপ্রধানের সঙ্গে বেশিরভাগ অংশটি থাকার ফলে তাঁর পদ টিকে আছে, কিন্তু অবস্থান নড়বড়ে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনা বুঝিয়ে দিচ্ছে, মুহাম্মদ ইউনূস ক্রমশ তাঁর শিকড় বৃদ্ধি করে চলেছেন বাংলাদেশের মাটিতে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে নির্বাচনের একটা কোথায় বলেছেন বটে, তবে সেটা আদৌ হবে কিনা সন্দেহ। তবে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি বিএনপিকে যে ম্যানেজ করে নিয়েছেন এটা স্পষ্ট। এখন ইউনূসের সামনে একমাত্র বাঁধা বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান এবং রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। বাংলাদেশের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান বারংবার আহ্বান করে আসছেন। কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূস সামান্য কিছু সংস্কারের আছিলায় বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা করে আসছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একতরফা কিছু সিদ্ধান্ত, যেমন মিয়ানমারে প্রস্তাবিত মানবিক করিডোর এবং বাংলাদেশে বিতর্কিত স্টারলিংক সংযোগ ও চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশী সংস্থার হতে তুলে দেওয়ার মতো সংবেদনশীল বিষয়ে সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের অবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। কিন্তু সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান নির্বিকার। তিনি আরও কঠোর হতে পারতেন, কিন্তু হচ্ছেন না। তাহলে কি অন্য কোনও সমস্যায় জর্জরিত জেনারেল ওয়াকার?
বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলের দাবি, জেনারেল ওয়াকারকে কার্যত বোতলবন্দি করে ফেলেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাঁর পরপর দু-দুটি বিদেশ সফর বাতিল হওয়া, বরং সেনাপ্রধানের পরিবর্তে তাঁরই অধস্তন লেফট্যানান্ট জেনারেল কামরুল হাসানকে বিদেশে বিভিন্ন মিশনে পাঠানো। আবার যেখানে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের থাকার প্রয়োজন, সেখানে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের উপস্থিতি অনেকগুলি প্রশ্নের জন্ম দেয়। কেউ কেউ বলছেন, সেনাপ্রধানকে কার্যত একঘরে করে ফেলেছেন মুহাম্মদ ইউনূস। যার ফলে তিনি প্রধান উপদেষ্টার বিরুদ্ধে বা তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে কোনও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করতেই পারছেন না। এমনকি সেনাবাহিনীও বারবার পিছিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে আভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কার্যকর করতে গিয়ে। সবমিলিয়ে জেনারেল ওয়াকারের সামনে এখন দুটো রাস্তাই খোলা আছে। এক, এবার সরাসরি ইউনূসের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া আর দুই, ইউনূসের সামনে আত্মসমর্পণ করা। এখন দেখার কোন পথটি বেছে নেন জেনারেল ওয়াকার।
Discussion about this post