এতো বড় বিপদের মধ্যে তাঁকে যে পড়তে হতে পারে, সেটা একবারের জন্য ইউনূস সাহেব বুঝতে পারেননি। আন্দাজও করতে পারেননি আগামী ভবিষ্যতে তাঁর জন্য কী অপেক্ষা করছে। হাসিনার বিদায়ের পর থেকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি একদিকে যেমন তপ্ত হয়েছে, পাশাপাশি সে মাটি হয়েছে দ্বেষের মাটি। লাগাতার ভারত বিরোধিতা, ভারতের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক বক্তব্য, সেভেন সিস্টার্স ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি। ভারতের সেপারেটিস্টদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়ার ধমক। আর সব কিছুই হয়েছে ইউনূসের চোখের সামনে। তিনি জেনেশুনে চোখ বন্ধ করে রেখেছিলেন। যারা এই সব হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, একবারের জন্য তাদের চুপ থাকার পরামর্শ দেননি। উল্টে তাদের স্পনসরার হয়ে উঠেছিলেন। পরোক্ষভাবে তাদের মদত দিয়েছেন। এরই মধ্যে সাম্প্রতিক হিংসা, উগ্রপন্থীদের তাণ্ডব এবং হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাতারাতি যেভাবে পরিস্থিতির মোড় ঘুরে গিয়েছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে নয়াদিল্লি। কূটনৈতিকস্তরে পরিস্থিতিতির ওপর নজর রাখা হয়েছে। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির নিরিখে গত শনিবার ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার উজ জামানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন, ভারতীয় চিফ অব আর্মি স্টাফ জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী। ঢাকা টু নয়াদিল্লি আন্তর্জাতিক কল। কী কথা হল দুই সেনাপ্রধানের?
একটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, জেনারেল ওয়াকার ভারতের চিফ অফ আর্মি স্টাফ জেনারেল দ্বিবেদীকে আশ্বাস দিয়ে জানিয়েছেন, পদ্মাপারে থাকা সব ভারতীয় নিরাপদে রয়েছেন। বর্তমান অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে কোনও ভারতীয় সম্পত্তির ক্ষতি হতে দেওয়া হবে না বলেও তিনি স্পষ্টভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন। যে কোনও উপায়ে ভারতীয় নাগরকি এবং ভারতের সম্পত্তি রক্ষা করা হবে। তবে এই বার্তার পরেও কিন্তু শান্তিতে নেই পদ্মাপারের ভারতীয় নাগরিকেরা। তাদের দিন কাটছে উদ্বেগ আর আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়মনসিংহের দীপু চন্ত্র দাসের হত্যার পরেও সেখানে বসবাসকারী সংখ্যালঘু হিন্দুদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, শনিবার তাঁর হাতে লাল সুতো দেখে জামাতে-ইসলামির কয়েকজন নেতা-কর্মী তাকে মারধর করে। গণপিটুনিতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসকদের মতে, চোখ ও বুকে মারাত্মক আঘাত পেয়েছেন গোবিন্দ বিশ্বাস। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তাপ, সহিংসতা ও সংখ্যালঘু নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই দুই দেশের সেনাপ্রধানের এই সরাসরি যোগাযোগকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সামনের দিনগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।ভারতীয় ওই সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, হাদির মৃত্যুর পর দুই বাহিনী প্রতিনিয়ত নিজেদের মধ্যে য়োগাযোগ রেখে চলেছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, হঠাৎ করে কেন জেনারেল ওয়াকার ফোন করলেন আমাদের সেনাপ্রধান জেনারেল দ্বিবেদীকে? খুব সহজ উত্তর। একপ্রকার চাপে পড়ে জেনারেল দ্বিবেদীকে ফোন করেন জেনারেল ওয়াকার। গত জুলাই-অগাস্টের গন অভ্যুত্থানের পর থেকে কিন্তু ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ক চরম মাত্রা নিয়েছে। ওপর দিকে ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ক অন্যদিকে মোড় নিয়েছে। বাংলাদেশ সেনাপ্রধান ওয়াকারের সঙ্গে রীতিমতো বৈঠক করেছেন পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনির। সব দিকে নজর ছিল নয়াদিল্লির। সেই তপ্ত আবহে সেনাপ্রধান ওয়াকারকে একবারের জন্য আমাদের স্থলসেনা প্রধানকে কথা বলতে দেখা যায়নি। হাদির মৃত্যুর পর সেখানকার পরিস্থিত কার্যত ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যায়। এই আবহে জেনারেল দ্বিবেদীকে ফোন করলেন ওয়াকার।












Discussion about this post