ভারত-বাংলাদেশ কে একের পর এক ঝটকা দিয়ে চলেছে। প্রথমে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করল ভারত। তারপর গৌতমাদানীর সংস্থা বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিল। এবার সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দি হিন্দু ও বিজনেস লাইন দাবি করছে ভারত-বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি রেল প্রকল্প স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে বিনিয়োগ স্থগিত হয়ে গেল বাংলাদেশে। উৎখাত হওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ভারতের স্থলবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিকে সংযুক্ত করার জন্য বেশ কয়েকটি ট্রানজিট প্রকল্পে হাত দিয়েছিল ভারত। বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৫০০০ কোটি টাকার বেশি। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম দি হিন্দুর প্রতিবেদন অনুসারে সেগুলি স্থগিত করেছে ভারত সরকার। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, এর মাধ্যমে ভারত সরকার স্পষ্ট বার্তা দিতে চাইল যে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের তদারকি সরকারকে আর মান্যতা দিচ্ছে না নয়া দিল্লি।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য এবং সিকিম-সহ আটটি রাজ্যের যোগাযোগ দাঁড়িয়ে আছে শিলিগুড়ির কাছে সরু একফালি জায়গার মাধ্যমে। মাত্র ২০-২২ কিলোমিটার চওড়া ওই এলাকাকে ভারতের চিকেন নেক বা শিলিগুড়ি করিডোর বলা হয়। এর ফলে অনেকটা ঘুরপথে পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী গাড়ি পৌঁছতো সেভেন সিস্টার্সে। এটা এড়াতে বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে ভারতের মধ্যভাগ ও উত্তর-পূর্ব ভারত সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করেছিল মোদি সরকার। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চুক্তিও করেন নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসকরা সেই চুক্তি হিমঘরে পাঠিয়ে দেয়। এবার ভারতও পাল্টা অ্যাকশন নিয়ে ওই প্রকল্পগুলিতে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিল। অর্থাৎ পুরোপুরি স্থগিত করা হল বাংলাদেশের মধ্যে চলমান ভারতের রেল প্রকল্পগুলি। জানা যাচ্ছে, আপাতত তিনটি চলমান প্রকল্প বন্ধ করা হয়েছে। সেগুলি হল, আখাউরা-আগরতলা ক্রস বর্ডার রেল লিঙ্ক, খুলনা-মোংলা পোর্ট রেললাইন ও ঢাকা-টংগি-জয়দেবপুর রেলপথের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ। এছাড়া আরও পাঁচটি প্রস্তাবিত রেলপথের কাজও হিমঘরে পাঠানো হল। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি, ভারত সরকার স্পষ্ট করে কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি না করলেও ওই প্রকল্পগুলিতে টাকা বরাদ্দ বন্ধ করেছে। প্রায় ৫০০০ কোটি টাকার প্রকল্প ছিল সবমিলিয়ে। যা এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে বাংলাদেশ সরকারের ঘাঁড়ে বাড়তি বোঝা চাপবে। অথবা ওই রেলপথ প্রকল্প পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।
সূত্রের খবর, ভারত সরকার বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগের জন্য অন্য কয়েকটি রুট নিশ্চিত করে ফেলেছে ইতিমধ্যেই। উত্তর প্রদেশ ও বিহারে যে সমস্ত রেল লাইন আছে, সেগুলি দ্বিগুণ বা চারগুণ করার পরিকল্পনা হয়েছে। চিকেন নেকের ওপর আরও দুটি রেল লাইন বসানোর কাজ খুব দ্রুত শুরু হবে। যাতে ওই অংশে ট্রেনের চাপ কমে যায়। এছাড়া বিকল্প হিসেবে ভারত বিহারের আরারিয়া জেলার যোগবানি থেকে নেপালের মধ্য দিয়ে বাংলার জলপাইগুড়ি জেলার নিউ মাল জংশন পর্যন্ত একটি নতুন রেলপথ নির্মাণ করছে। ১৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ লাইনটি, বিদ্যমান সড়ক পথকে অনুসরণ করবে। বিশেজ্ঞরা বলছেন, নেপাল দিয়ে নতুন রেলপথটি ২২ কিলোমিটার প্রশস্ত ‘চিকেন নেক’ করিডোরকে বাইপাস করবে। ফলে এই প্রকল্ব দ্রুত বাস্তবায়িত হলে আর বাংলাদেশকে প্রয়োজনই হবে না ভারতের।
নরেন্দ্র মোদি সরকার মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকারকে বোঝাতে চাইছে ভারত বিরোধিতার লাইন থেকে সরে এসে ভারতের সঙ্গে আগের মতো সুস্থ ও স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি করুক। ভারত বরাবরই বলে আসছে, বাংলাদেশে দ্রুত নির্বাচন করাতে হবে। যা ইউনূস সরকার চাইছে না, আরও ক্ষমতার লোভে। মুহাম্মদ ইউনূস চিনকে পাশে পেতে চাইছেন ভারতকে চাপে ফেলার জন্য, কিন্তু চিন উল্টে নরেন্দ্র মোদির দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি মোদিকে বেজিং সফরের জন্য আমন্ত্রণও পাঠিয়েছে শি জিংপিন সরকার। এদিকে ভারতের দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের জন্য বাংলাদেশের ঘাঁড়ে বাড়তি ২০০০ কোটির বোঝা চেপেছে বাণিজ্য খাতে। আবার আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ দেওয়া বন্ধ করেছে। তাতেও বাংলাদেশের বহু এলাকা বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পড়েছে। এবার বাংলাদেশে ৫০০০ কোটির রেল প্রকল্প স্থগিত করে আরও বড় বার্তা দিল ভারত। এখন দেখার মুহাম্মদ ইউনূস এই বিষয়গুলি কিভাবে মোকাবিলা করেন।
Discussion about this post