কট্টর মৌলবাদী, ভারতবিদ্বেষী এবং একটি নতুন উগ্র রাজনৈতিক দল ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদির শেষকৃত্যে সম্পন্ন হল। রাষ্ট্রীয় সম্মান, লক্ষ মানুষের ভিড়, আয়োজনে বাদ ছিল না কোনও কিছুই। শুধু তাই নয়, প্রবল বিতর্ক সত্ত্বেও বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের সমাধির পাশেই কবর দেওয়া হয় শরিফ ওসমান হাদিকে। যদিও প্রয়াত ওই ছাত্রনেতার শেষকৃত্য ঘিরেও ছড়াল বিশৃঙ্খলা! জানাজার নমাজ শেষ হতেই একদল মানুষ দৌড়ে ঢোকার চেষ্টা করল বাংলাদেশের সংসদ ভবনে। যা নিয়ে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। উত্তেজিত জনতাকে কোনও রকমে নিরস্ত্র করে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী। ফলে এ যাত্রা বেঁচে গেল বাংলাদেশের সংসদ ভবন। কিন্তু কতদিন চলবে এই বিশৃঙ্খলা? বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ভারত-বিরোধিতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যা নিয়ে চিন্তা হওয়া স্বাভাবিক। হাদির মৃত্যু এবং তাঁর শেষকৃত্যে যে চিত্র দেখা গেল, সেটা নজর আন্দাজ করা উচিৎ হবে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাহলে কেন ভারত কোনও প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে না। শুক্রবার রাতে ভারতের দুটি উপ হাইকমিশনারের কার্যালয় এবং দূতাবাসের কয়েকজন কর্মীর বাসভাবনে হামলা হয়েছে। এরপরও নয়া দিল্লি আশ্চর্যজনকভাবে চুপ। যা নিয়ে কৌতুহল সৃষ্টি হয়েছে কূটনৈতিক মহলে।
এর আগে, বুধবার, ভারতীয় হাইকমিশনের বাইরে বিক্ষোভের কারণে ঢাকার ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেই সঙ্গে খুলনা ও রাজশাহীর ভিসা আবেদন কেন্দ্রটিও বন্ধ করা হয়। যদিও একদিন পর ঢাকার কেন্দ্রটি চালু করলেও বাকি দুটি ভিসা কেন্দ্র এখনও বন্ধ রাখা হয়েছে। জানা যাচ্ছে, ঢাকার ভিসা কেন্দ্রটিও সীমিত আকারে চলছে। কিন্তু এই ভিসা সেন্টার বন্ধ ছাড়া ভারত এখনও পর্যন্ত বড় কোনও পদক্ষেপ তো দূর, সে রকম কোনও প্রতিক্রিয়াও দেয়নি। কেন ভারত চুপ, কেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বা প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং চুপ? ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন, নয়া দিল্লি কোনও বড় পরিকল্পনায় আছে। যা বাংলাদেশের জন্য খুব একটা সুখকর হবে না। কেউ কেউ দাবি করছেন, দিল্লি মুখে কোনও কথা না বললেও কয়েকটি কাজেই বুঝিয়ে দিচ্ছে দিল্লি চুপ করে বসে নেই। কি কি হচ্ছে?
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ সীমান্তে দুই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে গুলি করে বিএসএফ। ঘটনাটি শুক্রবার দুপুরের। জানা গিয়েছে, ত্রিপুরার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দমদমা ১২৬০ মেন পিলারের ২ নং সাব পিলারের ৬০০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছিল দুই বাংলাদেশি যুবক। তাঁরা সুপারি চুরি করতে ঢুকেছিল। তখনই বিএসএফ জওয়ানরা তাঁদের সাবধান করে। কিন্তু সাড়া না মেলায় সরাসরি গুলি করে বিএসএফ। একজনের দেহ বিজিবির হাতে হস্তান্তর করলেও আরেকজনের দেহ এখনও হস্তান্তর হয়নি বলেই জানা গিয়েছে। এই ঘটনা প্রমান করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে। এই ঘটনার থেকেও বড় যে বিষয়টি সামনে এসেছে সেটা হল ইস্টার্ন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং-ইন-চিফ লেফটেনেন্ট জেনারেল আরসি তিওয়ারি অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে মিজোরাম সীমান্ত পরিদর্শন করেন।
মিজোরামের আইজলের কাছে থুয়াম্পুইতে এক দিনব্যাপী সফর করেন তাঁরা। জানা যাচ্ছে, ডিমাপুর-ভিত্তিক তৃতীয় কর্পসের একটি ব্রিগেড থেকে নেওয়া একটি সেনা ব্যাটালিয়নকে একেবারে বাংলাদেশ সীমান্তে মোতায়েন করা। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দুটি আউটপোস্ট , পারভা এবং শিলসুরি পরিদর্শন করেন ইস্টার্ণ কমান্ডের আধিকারিকরা। এই দুটি আউটপোস্ট একেবারেই বাংলাদেশ সীমান্তের খুব কাছে। এই পরিদর্শনে অসম রাইফেলস এবং বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, অন্যান্য ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। অর্থাৎ, এবার চতুর্থ একটি সেনাছাউনি তৈরির তোরজোড় শুরু করে দিল ভারতীয় সেনা। এর আগে নতুন তিনটি ছাউনি চিকেন নেককে ঘিরে তৈরি করেছিল। চতুর্থ সেনাছাউনির জন্য যে জায়গাটি ভারতীয় সেনাবাহিনী বাছতে চাইছে তার অবস্থান খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের চিকেন নেক অর্থাৎ চট্টগ্রামের ফেনী নদীর খুব কাছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম লাগোয়া। জানা যাচ্ছে, শিলচর ও মিজোরাম সীমান্তের অধীনে শিলচরের তিনটি ব্যাটালিয়ন কমান্ড এলাকায় বাঙ্কার, ‘রিং বাঁধ’ বা অস্থায়ী বা স্থায়ী কৃত্রিম বাঁধ, বিস্ফোরণ-প্রতিরোধী আশ্রয়কেন্দ্র এবং ভূগর্ভস্থ অস্ত্রাগার সহ বেশ কয়েকটি অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষামূলক কাঠামো নির্মাণের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছে ভারতীয় সেনা। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, ভারত বড় কোনও পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। যে সেভেন সিস্টার্সকে নিয়ে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে চলেছে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে একাধিক ছাত্রনেতা। এবার কি তবে পাল্টা পদক্ষেপ নিয়ে বাংলাদেশকে সমঝে দিতে চাইছে ভারত? উত্তর সময়ই দেবে।












Discussion about this post