মুহাম্মদ ইউনূসের আমলে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকেছে। এবার সেই সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হল। বাংলাদেশ থেকে বিগত সাত মাসে বারংবার হুমকি, উস্কানি এসেছে। কখনও সরাসরি, কখনও ঘুরিয়ে। কিন্তু ভারত কূটনৈতিক স্তরে এর প্রতিবাদ জানালেও খুব একটা কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। সেই সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের এই অন্তরবর্তীকালীন সরকারকে যে ভারত মান্যতা দিচ্ছে না, সেটাও বোঝানো হয়েছে বিভিন্ন ভাবে। এবার বাংলাদেশকে চাপে ফেলতে কড়া পদক্ষেপের পথে এগোচ্ছে ভারত সরকার। সর্বভারতীয় কয়েকটি মিডিয়ার প্রতিবেদনে এমনটাই জানা যাচ্ছে। কি ধরণের পদক্ষেপের কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার, সরাসরি যুদ্ধ নাকি অন্য কিছু? আসুন সেই বিষয়ে একটু আলোচনা করা যাক।
২৭ মার্চ লোকসভায় অভিবাসন এবং বিদেশি নাগরিক বিল, ২০২৫ পাশ হয়ে গেল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এই বিল সম্পর্কে লোকসভায় জবাবী ভাষণ দেন। সেখানে তিনি স্পষ্ট ভাষায় ভারতে বসবাসকারী অবৈধ বাংলাদেশী এবং রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি এও বলেন, ভারত কোনও ধর্মশালা নয়। জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে, এমন কাউকে এই দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে মন্তব্যের সময়ে অমিত শাহ তুলে ধরেন অসম এবং পশ্চিমবঙ্গের প্রসঙ্গও। ফলে বোঝাই যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার এবার অবৈধ বাংলাদেশী এবং রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করে বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে। উল্লেখ্য এই চিহ্নিতকরণের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এবার ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে। আর এই বিষয়ে ভারতের হাতিয়ার হবে লোকসভায় সদ্য পাশ হওয়া অভিবাসন এবং বিদেশি নাগরিক বিল, ২০২৫। এ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেআইনি অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারত এটা করলে প্রবল চাপে পড়বে বাংলাদেশ।
২৬ মার্চ ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। ওই দিনই ভারতীয় সংসদের বিদেশ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সাথে এক মতবিনিময় সভায় বসেছিলেন পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। ৩১ সদস্যের এই স্থায়ী কমিটিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাংসদরাও রয়েছেন। বিদেশ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর। পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ সাগরিকা ঘোষ। এই সংসদীয় কমিটি ভারতের বিদেশ সচিবের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করে। এর মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বর্তমান সম্পর্কও নিয়েও আলোচনা হয়েছে। সর্বভারতীয় কয়েকটি মিডিয়া দাবি করেছে, বাংলাদেশ নিয়ে ভারতে রাজনৈতিকভাবে ঐক্যমত তৈরি হয়েছে। বিরোধী সাংসদরাও এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন।
কেন ভারত মুহাম্মদ ইউনূসকে বিশ্বাস করতে পারছে না? প্রথমেই উল্লেখ করা যায় বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হয়ে চলা লাগাতার অত্যাচার। ভারত সরকার এই বিষয়ে বারবার ইউনূস সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানিয়েছে। কিন্তু তা পাত্তা দেয়নি বাংলাদেশ। উল্টে তাঁদের দাবি, ভারত মিথ্যা প্রচার করছে। এবার ইউনূস সাহেব গিয়েছেন চিনে। সেখানে তিনি বেশ কয়েকটি মৌ স্বাক্ষর করতে পারেন বলেই জানা যাচ্ছে। যার মধ্যে অন্যতম তিস্তা নদী মহাপ্রকল্প, লালমনিরহাট বিমানঘাঁটি নির্মান প্রকল্প এবং মোংলা সমুদ্রবন্দর নির্মান। এই তিনটি প্রকল্পের ভারতের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ২০২৪ সালের জুন মাসে ভারত সফরে এসেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই সময়ই মোংলা এবং তিস্তা নদী প্রকল্প নিয়ে ভারতের সঙ্গে একটা মৌ স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। কিন্তু এর পরেই হাসিনা সরকারের পতন হয় এবং এই বিষয়গুলি চাপা পড়ে যায়। যদিও ভারতের সঙ্গে মৌ স্বাক্ষরের পর হাসিনা চিন সফরে যান এবং তিস্তা প্রকল্প নিয়ে প্রবল চটে গিয়ে চিন হাসিনাকে অপমানিত করে। যা সকলেরই জানা। এটা ইউনূস সাহেবও জানেন, তাই ভারতকে চাপে ফেলতে এবার চিনের সঙ্গেই এই চুক্তি নিয়ে এগোতে পারে। যা ভারত ভালোভাবে নিচ্ছে না। ফলে এবার ভারত সরাসরি বাংলাদেশকে শিক্ষা দিতে বধ্যপরিকর। এবং এটা নিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্যমত গড়ে তুলেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। খুব শীঘ্রই অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাও জারি করতে পারে ভারত। যা ইউনূস সরকারের কাছে খুব একটা সুখকর হবে না।
Discussion about this post