বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় রেল ট্রেন চালাবে। ইতিমধ্যেই ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সেই চুক্তি সম্পন্ন করেছেন। মূলত ‘শিলিগুড়ি করিডর” বা ‘চিকেন নেক’ এড়িয়ে কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গের দিকে মালবাহী ট্রেন পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। এবার অসম থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে নেপালের ভুখন্ড ব্যবহার করে বিহারে ট্রেন পাঠানোর পরিকল্পনা নিল ভারত। উদ্দেশ্য সেই শিলিগুড়ির চিকেন নেক এড়িয়ে যাওয়া। ভারতের নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই শিলিগুড়ি করিডর। সেই কারণেই নেপালে নতুন রেললাইন তৈরির পরিকল্পনা করল ভারতীয় রেল।
উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ির কাছে একটি অংশ অত্যন্ত সংকীর্ণ। সেখানে একদিকে বাংলাদেশ অন্যদিকে নেপাল ও ভুটান এবং পশ্চিমবঙ্গের পড়শি রাজ্য বিহার সীমান্ত। সংকীর্ণ ওই অংশটি মাত্র ২২ কিমি চওড়া। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে এই অংশটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় নিরাপত্তা জড়িত রয়েছে। এই সংকীর্ণ ভুখন্ড ‘শিলিগুড়ি করিডর’ বা ‘চিকেন নেক অফ ইন্ডিয়া’ বলা হয়। সেখান দিয়েই গিয়েছে উত্তরবঙ্গগামী রেলপথ ও ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। ফলে দেশের বড় অংশের সঙ্গে অসম সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগ এই শিলিগুড়ি করিডর দিয়েই হয়। তাই এই অংশ কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে, উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাটটি রাজ্য বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তাই এই শিলিগুড়ি করিডরের ওপর চাপ কমাতে তৎপর কেন্দ্রীয় সরকার।
সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুসারে, রেল মন্ত্রক তৎপর হয়েছে নেপালে নতুন রেললাইন পাতার কাজে। মূলত শিলিগুড়ি করিডর এড়িয়ে অসমের গুয়াহাটি থেকে পশ্চিমবঙ্গের নিউ মাল জংশন হয়ে নতুন রেললাইন চলে যাবে নেপালের মধ্যে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নেপালের বিরাটনগর হয়ে নতুন রেললাইন পৌঁছে যাবে বিহারের যোগবাণী পর্যন্ত। ফলে নিউ মাল জংশন থেকে শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি হয়ে যে লাইনটি বিহারের কাটিহার জংশন পর্যন্ত শিলিগুড়ি করিডরের মধ্যে দিয়ে যায়। নতুন রেলপথ সেই অংশ এড়িয়ে যাবে। ফলে অনেক নিরাপদে এবং কম সময়ে ট্রেন পৌঁছে যাবে দিল্লি-সহ উত্তর ভারতের যে কোনও অংশে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিউ মাল জংশন এবং বিরাটিনগরের মধ্যে ১৯০ কিলোমিটার নতুন রেলপথের ‘ফাইনাল লোকেশন সার্ভে’-র প্রস্তাবে ইতিমধ্যে অনুমোদন দিয়েছে ভারত সরকার। নেপাল সরকারের সঙ্গেও কথাবার্তা পাকা। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিহারের যোগবাণী থেকে নেপালের বিরাটনগরের মধ্যে ১৮.৬ কিমি লাইন পড়বে ভারতে। আর ১৩.১৫ কিমি রেললাইন পড়বে নেপালে। বিহারের বাথহানা থেকে নেপালের কাস্টমস ইয়ার্ড পর্যন্ত ৭.৭৪ কিমি লাইনের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছে। বাকি অংশেও কাজ চলছে। বিহারের গালগালিয়া হয়ে নেপালের ভদ্রপুর, কাজলি বাজারের মধ্যে যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে, সে জন্য আরও ১২.৫ কিলোমিটার অংশে রেললাইন পাততে হবে। যার লোকেশন সার্ভে শুরু করেছে ভারতীয় রেল।
উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের তরফে জানা গিয়েছে, উত্তর-পূর্ব ভারতে যাওয়ার জন্য প্রতিটি ট্রেনকে আলুয়াবাড়ি রোড ছুঁয়ে যেতে হয়। সেটা নিউ দিল্লি হোক বা কলকাতা, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই। ফলে সারা বছরই এই রুটে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেনের চাপ বেশি থাকে। অপরদিকে, শিলিগুড়ির ‘চিকেন নেক’ করিডর জাতীয় নিরাপত্তার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবমিলিয়ে ভারত চাইছে একদিকে বাংলাদেশ ও অন্যদিকে নেপালের মধ্যে দিয়ে ট্রেন চালাতে। এতে ওই দুই দেশও আর্থিকভাবে লাভবান হবে। ভারতেরও সুবিধা হবে।
Discussion about this post