শেখ হাসিনার পতন পরবর্তী সময় থেকেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষজন দাবি করে আসছেন লাগাতার তাঁদের উপর হামলা চলছে। বাংলাদেশের কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠনগুলি নানা রকম হুমকি দিয়ে আসছে। এমনকি ইসকনের মতো আন্তর্জাতিক ধর্মীয় সংগঠনকেও নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে। যা নিয়ে ভারত প্রথম থেকেই সরব। এই আবহেই ইসকনের সন্নাসী তথা বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার ও জামিন নাকচ করার বিষয়ে দু-দেশের সম্পর্ক নতুন করে তলানিতে এসে পৌঁছেছে।
এর আগে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর হওয়া অত্যাচার নিয়ে ভারত সরকারের তরফে বাংলাদেশের তদারকি সরকারকে পদক্ষেপের আর্জি জানানো হচ্ছিল। এবার চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির পর ভারতের বিদেশমন্ত্রক কড়া প্রতিক্রিয়া জানাল। রীতিমতো ঝাঁঝালো ভাষায় লেখা সেই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, উগ্রপন্থী শক্তিগুলি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু এবং অন্যান্য সম্প্রদায়ের উপর লাগাতার হামলা চালাচ্ছে। কূটনৈতিক মহলের অভিমত, ভারতের বিদেশমন্ত্রক প্রথমবার “উগ্রপন্থী শক্তি”-র কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের ইউনূস প্রশাসনকে চাপে ফেলার কৌশল নিল। ভারতের মতো শক্তিশালী দেশের বিদেশ মন্ত্রক যখন সরাসরি এই ধরণের অভিযোগ করে, তখন বিশ্বের অন্যান্য শক্তিশালী দেশগুলিও তাতে প্রভাবিত হয়। কিন্তু পুরো বিষয়টিকে সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়ে পাল্টা বিবৃতি দিল বাংলাদেশ।
ঢাকা কার্যত নয়াদিল্লিকে বলতে চাইছে ‘নিজের চরকায় তেল দাও’। অর্থাৎ ইসকনের সাধু গ্রেফতার হওয়ার পর ভারতের দেওয়া বিবৃতিতে একেবারেই না খুশ বাংলাদেশ। তাঁদের দাবি চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেফতারির ঘটনাকে ভুল ভাবে তুলে ধরা হচ্ছে। বাংলাদেশের তরফে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের প্রকাশিত এক বিবৃতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপরও অত্যন্ত হতাশা ও গভীর দুঃখের সঙ্গে সরকার লক্ষ করছে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির বিষয়টি ভুল ভাবে উত্থাপন করছে কেউ কেউ। ভারতের এই ধনের বিবৃতি সত্যিকে ভুল ভাবে তুলে ধরছে।
পাশাপাশি দুই প্রতিবেশী দেশের বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার পরিপন্থী এই বিবৃতি’। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বাংলাদেশ পরিস্কার বোঝানোর চেষ্টা করছে, ভারত ষেন বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন বিষয়ে নাক না গলায়। ঢাকার দাবি, বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে জনগণের উপরে যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অপরাধ চলে আসছিল, বর্তমান সরকার তা শেষ করতে দৃঢ়প্রতীজ্ঞ। সংখ্যালঘুদেরও একই নজরে দেখা হয়। কিন্তু ভারতের বিবৃতিতে এই বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে বলেই আক্ষেপ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের তদারকি সরকার।
কূটনৈতিক মহলের মতে, মুহাম্মদ ইউনূস প্রশাসন চলছে কট্টরপন্থীদের অঙ্গুলীহেলনে। ফলে এখনও পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের উপর হামলা বা অত্যাচারের অভিযোগে কারও বিরুদ্ধে বড় কোনও পদক্ষেপ নেয়নি বাংলাদেশের পুলিশ বা সেনা। উল্টে সংখ্যালঘু হিন্দুদের বিরুদ্ধেই দায়ের হচ্ছে মামলা, গ্রেফতারও করা হচ্ছে। ভারত দেরীতে হলেও বাংলাদেশের উপর চাপ তৈরি করতে শুরু করল। আগামী বছরের গোড়াতেই আমেরিকার মসনদে বসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অপরদিকে আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয় লবি এবং হিন্দু সমাজের প্রতিনিধিরা ইতিমধ্যেই মার্কিন প্রশাসনের উপর চাপ সৃষ্টি করা শুরু করেছেন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আর্থিক অবরোধ জারি করার জন্য।
জো বাইডেন প্রশাসন যদি এই আর্থিক অবরোধ জারি নাও করে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই তা করতে পারেন। এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। অপরদিকে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেফতারির পর বিদেশ মন্ত্রক যে বিবৃতি জারি করেছে, সেটাকেই হাতিয়ার করে ভারত আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচার করবে। আগামী ডিসেম্বরেই ভারত-বাংলাদেশের বিদেশসচিব পর্যায়ের যে বৈঠক হওয়ার কথা, সেখানেও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সবমিলিয়ে ভারত ইউনূস প্রশাসের উপর চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করেছে। যদি তাঁরা ভারতকে পাত্তা না দেওয়ার নীতিতেই অনঢ় থাকে তবে আগামীদিনে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখী হতে হবে বাংলাদেশকে।
Discussion about this post