অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে রদবদল আনার কথা ভাবা হচ্ছে?
গত ষোলো মাস ধরে এই খবর কতবার যে চাউর হয়েছে, তা হিসেব করা যাচ্ছে না। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি একটু অন্যরকম। কারণ হাদিকাণ্ড। দিনের আলোয় প্রকাশ্যে রাস্তায় তাঁর মাথা লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে। আর তার পর থেকে তদারকি সরকার বলির পাঁঠা খুঁজে বেরিয়েছেন। অবশেষে তিনি সেটি পেয়েছেন। তাঁর বলির পাঁঠা হতে চলেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী। ওসমান হাদির মৃত্যুর পর তাঁর পদত্যাগের জোরাল দাবি ওঠে। তিনি কি পদত্যাগ করছেন ?
রবিবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির ১৮তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী। সভা থেকে বেরিয়ে আসার পর সাংবাদিকেরা তাঁর কাছে পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গির বলেন, ‘পদত্যাগ করলে এখানে বসতাম না। ’ এ বিষয়ে বুধবার সাংবাদিক সম্মেলন করেন প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, আমি এই বিষয়ে (উপদেষ্টা পরিষদে পরিবর্তন) সম্পর্কে জানি না এবং এই বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি।
২০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদভবন প্রাঙ্গনে ২০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত জানাজায় প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে হাদি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের। হাদি হত্যার দায় নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বখস চৌধুরীর পদত্যাগ দাবি করেছে। গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পদে রদবদল শুরু গত অগাস্ট থেকে। প্রথমে ওই পদে বসানো হয়েছিল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখাওয়াত হোসেনকে। তাকে সরিয়ে নিয়োগ করা হয় জাহাঙ্গির আলম চৌধুরীকে। এবার তাঁকেও সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে তদারকি সরকার প্রধান।
কিন্তু প্রশ্ন অন্য জায়গায়। যে ইস্যুতে জাহাঙ্গির আলম চৌধুরীকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ হাদি-কাণ্ড এবং তার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি, তার দায় শুধু কি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাঁধে বর্তায়? ব্যর্থতার দায় তো সরকারের ওপর বর্তায়। সেই ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে তো ইউনূসের ইস্তফা দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তিনি তো ক্ষমতালোভী। তাই, বাংলাদেশ জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে গেলেও তিনি ইস্তফা দেবেন না। ধরে নেওয়া যেতে পারে, আগামীদিনে পদ্মাপারে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে তদারকি সরকার প্রধান প্রথমেই একটি বলির পাঁঠা খুঁজবেন। তার ওপর সব দায় চাপিয়ে তিনি নিজে সেফ এগজিট নেবেন।
আততায়ীর বুলেটে বিদ্ধ হয়ে টানা সাত দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন শরিফ ওসমান হাদি। ভর্তি ছিলেন সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে। সেখানে পৌঁনে ১০টার সময় তাঁর মৃত্যু হয়। হাদির মৃত্যুর খবর বাংলাদেশে পৌঁছাতে শুরু হয় তার অনুগামীদের তাণ্ডব। প্রথম আলো, ডেইলি স্টারের অফিস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তদারকি সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, প্রথম আলোর দফতরের সামনে হাদির অনুগামীদের দেখতে পেয়ে তদারকি সরকার প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যাবতীয় সাহায্যের। কোথায় কী? হাদির অনুগামীরা নির্বিবাদে তাণ্ডব চালিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।












Discussion about this post