একটা প্রতিবাদীকণ্ঠ। কেমন ছিল তাঁর প্রতিবাদের ঝাঁজ? একটি কবিতার কয়েকটি ছত্রের উল্লেখ করলে তার একটা ধারণা পাওয়া যাবে।
‘আমি চির দূর্দম / দুর্বিনীত, / নৃশংস, / মহা-প্রলয়ের আমি নটরাজ, / আমি সাইক্লোন,/ আমি ধ্বংস!/ আমি মহাভয় / আমি অভিশাপ পৃথ্বীর, আমি দুর্বার / আমি ভেঙে করি সব চুরমার ! / আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল / আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল / আমি মানি না কো কোন আইন, / আমি ভরা-তরী করি ভরা-ডুবি, আমি টর্পেডো, আমি ভীম ভাসমান মাইন! / আমি ধূর্জটি, আমি এলোকেশে ঝড় অকাল বৈশাখীর,/ আমি বিদ্রোহী, আমি বিদ্রোহী-সুত বিশ্ব বিধাতৃর। ’
কবিতটা কার লেখা, সেটা আমাদের প্রিয় পাঠক এবং দর্শক বুঝতে পেরেছেন। হ্যাঁ, আপনারা ঠিকই ধরেছেন। এই কবিতা নজরুলের। সংবাদের শিরোনামের সঙ্গে এই গোটা কবিতার পুরোটাই মিলে যায়। তাঁর পোশাক কেমন? নজরুলের কবিতার ধার করে বলতে হয়ে ‘আমি যুবরাজ, মম রাজবেশে ম্লান গৈরিক।’ কবিও যেমন জোর গলায় বলেছেন, ‘আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্নিশ/ আমি বজ্র, আমি ঈষাণ-বিষাণে ওঙ্কার / আমি ইস্রাফিলের শিঙ্গার মহা হুঙ্কার, / আমি পিনাক-পানির ডমরু ত্রিশূল, ধর্মরাজের দণ্ড, / আমি চক্র ও মহাশঙ্খ, আমি প্রণব-নাদ প্রচণ্ড। ’ জীবিত অবস্থায় সে ছিল ‘বিধবার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা হুতাশ আমি হুতাশীর। ’
মনে হতে পারে, এটা বোধহয় একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল। কারণ, বিদ্রোহী কবিতার যে প্রেক্ষাপট, সেই প্রেক্ষাপটের সঙ্গে হাদির মিল কোথায়? মিল একজায়গায় স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা। রাষ্ট্রের মদতে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা। এই ভারত দেখেছেন, ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যারা গর্জন করেছিল, তাদের কী পরিণতি হয়েছে। কিন্তু প্রতিবাদ থামিয়ে রাখা যায়নি, প্রতিবাদীদের দমিয়ে রাখা যায়নি। এক প্রতিবাদীর মৃত্যু জন্ম দিয়ছে বহু প্রতিবাদীর। তাঁর নিজের গলায় উচ্চারিত হয়েছে নজরুলের এই কবিতার একটি অংশ
সাবের আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতৃত্বের অনেকেই বলছেন স্বীকার করে নিয়েছেন, যে তাদের শাসনামলে ‘কিছু ভুল-ত্রুটি’ হয়েছিল। তাদের ভাষায় ওই ভুল-ত্রুটি হাদি বা হাদির মতো সমমনোভাবাপন্ন নেতাদের কাছে ছিল স্বৈরাচারী শাসনের অঙ্গ। আর সেই স্বৈরাচারী শাসনের তারা পতন ঘটিয়েছিল গত জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। ওই আন্দোলনের অগ্রভাগে যে সব নেতা ছিলেন, তাদের মধ্যে শরিফ ওসমান হাদি অন্যতম। মিডিয়ার সব আলো সে একাই শুষে নিয়েছিল। আর বন্দুকের গুলি তাঁকে দিয়ে দিল মাইলেজ। সে হয়ে উঠল লার্জার দ্যান লাইফ। সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে সেই যাত্রার পরিসমাপ্তি ঘটল। সেই সঙ্গে ইতি ঘটল একটি রাজনৈতিক অধ্যায়ের। তাঁর এই আন্দোলন নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। যুক্তি পাল্টা যুক্তি উঠে আসতে পারে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু একটা বিষয় খুব স্পষ্ট যে পদ্মাপারে সরকারের বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে কথা বলার সাহস দেখিয়েছিল এই তরুণ।
তাঁর সাম্প্রতিক কিছু ভাষণ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেই সব ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে তাকে কিন্তু একটা কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতে শোনা গিয়েছে, সেটা হল দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার বার্তা। অনেকের দাবি, এই বার্তা ভারতের উদ্দেশ্য। একটু তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে, এই বার্তা যদি ভারতের উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে, তাহলে এই বার্তা সমানভাবে পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কারণ, বাংলাদেশে পালাবদলের পর থেকে পাকিস্তানের অভ্যাস হয়ে দাড়িয়েছিল সে দেশের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা। তাঁর ওই বার্তা কি ইসলামাবাদের জন্য প্রযোজ্য হবে না।












Discussion about this post