যাক, তাহলে ঝুলি থেকে বেড়ালটা অবশেষে বেরিয়েই পড়ল। বেড়ালটা প্রমাণ করল বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তান প্রেম এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। সেই প্রেম এত গভীর, তা জানাতে কোন গানের কথা ধার করতে হবে, বোঝাই যাচ্ছে না। এই গানটা কেমন হবে – ‘আরও কাছাকাছি, আরও কাছে এসো’। বোধহয় হল না।
তাহলে এই রবীন্দ্রগান –
‘আমি তোমার প্রেমের হব সবার কলঙ্কভাগী। /আমি সকল দাগে হব দাগি,/ তোমার পথের কাঁটা করব চয়ন/ যেথা তোমার ধুলায় শয়ন’।
হ-য-ব-র-ল-য়ের ফিচকে বেড়ালটা কিন্তু মাথা নেড়ে বলে দিয়েছে এই গানটা চলবে। বেড়ালটা এও বলছে, ‘প্রেমের জোয়ারে, ভাসাবে দোঁহারে, বাধন খুলে দাও’ গানটা না কি এই দুইয়ের প্রেমের সম্পর্কের ক্ষেত্রে আরও জম্পেস।
এই প্রেম বাংলাদেশের প্রতি পাকিস্তানের। প্রেম একেবারে উথলে উঠেছে। সে প্রেমের জেরে বাংলাদেশে দেখা দিয়েছে অকাল বসন্ত। গাছে গাছে পলাশ ফুটছে। পাখিরা গান গাইছে। ‘প্রেম বড় মধুর’ বলেই না এই সব হচ্ছে। আর গভীর প্রেমের জন্য এক নেতা তো আবার ভারতের বিরুদ্ধে আবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বসেছে। বলছে ভারত ভুলেও বাংলাদেশের দিকে তাকালে তারা ভারতের চোক গেলে দেবে। ভাবাই যায় না। প্রেম কত গভীর হলে একজন তৃতীয় পক্ষকে হুমকি দিয়ে চোখ উপড়ে নেওয়ার সাহস দেখাতে পারে। তারা ভারতের চোখ উপড়ে ফেলতে পারে কি না, সেটা তো পরের কথা। তার আগে দেখে নেওয়া যাক এই ‘বীর যোদ্ধা’ শির এবং শিরা ফুলিয়ে ভারতকে কী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল তাঁর দেওয়া সেই হুমকি-ভিডিও। ‘নিউজ বর্তমান’ ওই ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি। ভাষণ হিন্দু এবং উর্দু মিশিয়ে। ভারতকে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি তিনি ওসমান হাদির গুণগান গেয়েছেন। তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেছে। বলেছেন, হাদির মৃত্যু মুসলিমদের কাছে অনুপ্রেরণা শক্তি হয়ে থাকবে। আমাদের পাঠক এবং দর্শকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব সেই নেতার। তার আগে দেখা যাক ওই নেতা ঠিক কী বলেছেন।
প্রথমে হাদিকে নিয়ে। নেতা বলছেন, ‘ওসমান হাদি এক অ্যায়সা নেতা থা যো ক্যাহেতা থা কি উয়ো বাংলাদেশ কো কিসি গুলাম নহি বন্নে দেঙ্গে। আগর কোই মুসলমান আওয়াজ উঠাতা হ্যায় তো উসকো দাবা দিয়া যাতা থা। …. পাকিস্তান আঔর বাংলাদেশকা বচ্চা বচ্চা ওসমান হাদি হ্যায়। ’ বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, ‘ওসমান হাদি এমন একজন নেতা ছিলেন যিনি বলতেন বাংলাদেশকে তিনি কখনই কারও গোলামে পরিণত হতে দেবেন ন। কোনও মুসলমান গলা তুললে তাঁর কণ্ঠরোধ করা হত। …. পাকিস্তান আর বাংলাদেশের প্রত্যেকটি শিশু ওসমান হাদি’।
এই পাক নেতার নাম কামরান সাঈদ উসমানি। তাঁর দলের নাম পাকিস্তান মুসলিম লিগ। ওই পাক নেতা বলছেন, ‘ম্যাঁয় আপনে বাংলাদেশী ভাই বহনো কো ক্যাহনা চাহতা হুঁ কি হাম আপকে সাথ হ্যায়। পাকিস্তানি আওয়াম আপকে সাথ হ্যায়। আগার কোই বাংলাদেশ পর দাওয়াও ডালনে কি কৌশিস কারেগা তো পাকিস্তান আপকে সাথ খাঁড়া হ্যায়। … অগর কোই বাংলাদেশ কী সায়েত্ততা পর হামলা করনে কি কৌশিস করেগা, তো পাকিস্তান আপকে সাথ খাড়া রহেগা। আগর অব কিসি নে নিগাহে উঠাকার বাংলাদেশকে তরফ দেখা তো পাকিস্তানি আওয়াম, পাকিস্তানি ফৌঁজ আঔর মিসাইল আপসে দূর নেহি হ্যায়। ’
বাংলা করলে খানিকটা এরমকম হবে। আমি আমার বাংলাদেশের ভাই-বোনদের উদ্দেশ্যে বলছি, আমি আপনাদের সঙ্গে রয়েছি। গোটা পাকিস্তান আপনাদের সঙ্গে রয়েছে। কেই যদি বাংলাদেশকে চাপে রাখার কৌশল করে, তো পাকিস্তান আপনার পাশে দাঁড়াবে। কেউ বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত করার চেষ্টা করলে পাকিস্তান আপনাদের পাশে থাকবে। কেউ বাংলাদেশের দিকে তাকালে জেনে রাখুন পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ, পাকিস্তান সেনা মিসাইলের খুব কাছেই আপনি রয়েছে।
শুনুন তার গলায়
তবে উসমানের এই সব বক্তব্য ব্যক্তিগত ও দলীয় পর্যায়ের হলেও এখনও পর্যন্ত পাকিস্তান বা বাংলাদেশ সরকারিভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। ভারতের তরফেও এই প্রতিবেদন তৈরি হওয়ার সময় পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্লেষকদের মত, এই ধরনের বক্তব্য আঞ্চলিক রাজনীতিতে আরও উত্তপ্ত করতে পারে। তৈরি করতে পারে, কূটনৈতিক সংবেদনশীল পরিস্থিতি।












Discussion about this post