বাংলাদেশ সন্মীলিত সনাতনী জোটের মুখপাত্র এবং পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারির পর প্রায় দু-সপ্তাহ অতিক্রান্ত হয়েছে! এর পর থেকে বাংলাদেশে উত্তরোত্তর অশান্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপও। প্রথমে ভারত, এরপর একে একে ব্রিটেন, আমেরিকা একযোগে সরব হয়েছে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে। সব মিলিয়ে চিন্ময় প্রভুর গ্রেফতারি এবং সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যুতে প্রবল চাপে পড়েছে মহম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। চাপের মুখে চিন্ময় মুক্তি নিয়ে সুর কিছুটা নরম করার ইঙ্গিত মিলছে। অন্তত ইউনুস প্রশাসনের তরফে এমনটাই ইঙ্গিত। কিন্তু সমস্যা হল জামাত, হেফাজতের মতো মৌলবাদী সংগঠনের কাছে ইউনুস সরকারের হাত-পা এমনভাবে বাঁধা, যে তাদের ইঙ্গিত ছাড়া ইচ্ছা থাকলেও চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে কারাগার ছাড়তে পারছে না ইউনুস সরকার।
সংখ্যালঘু নিপীড়নের অভিযোগ নিয়ে দেশে-বিদেশে লাগাতার সমালোচনার মুখে পড়েছে মুহাম্মদ ইউনুসের অন্তর্বর্তী সরকার। এরপরই জাতীয় ঐক্যকে ঢাল করতে চাইছে বাংলাদেশ। জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনুস বুধবার ঢাকায় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তার আগে মঙ্গলবার রাতেই তিনি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতৃত্ব এবং একাধিক ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এও জানা যাচ্ছে, মুহাম্মদ ইউনূস শনিবার পর্যন্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক বলবেন। প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে জামাত-ই-ইসলামি-সহ সমস্ত ইসলামি দল ও মুসলিম ধর্মীয় সংগঠনগুলিকেও। তবে এখনও পর্যন্ত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কোনও সংগঠনকে বৈঠকে ডাকা হয়নি বলেই খবর। ফলে ইউনূস প্রশাসনের বিরুদ্ধে সেই বিভাজনকে উসকানি দেওয়ার অভিযোগই উঠেছে।
চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুতে মঙ্গলবার আদালতে হাজিরই করানো হয়নি। বরং আরও কিছু সময় চেয়ে আদালতের কাছে আর্জি জানান সরকার পক্ষের আইনজীবীরা। কিন্তু এটা ছাপিয়ে যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা হল আদালতে চিন্ময়ের তরফে কোনও আইনজীবী উপস্থিত না থাকার ঘটনা। যেখানে চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেফতারের পর প্রথমবার আদালতে হাজির করানোর সময় তাঁর হয়ে প্রায় ৫১ জন আইনজীবী হাজির ছিলেন। কিন্তু পরের শুনানিতেই কাউকে পাওয়া গেল না। আবার চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুর প্রধান আইনজীবী হাসপাতালের আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন বলে খবর। তাঁকে প্রবল মারধর করা হয়েছে। এমনকী বহু হিন্দু আইনজীবীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। তাতে আন্তর্জাতিক চাপ আরও বেড়েছে বাংলাদেশ সরকারের উপর।
অপরদিকে প্রথম থেকেই একজোট হয়ে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন সংখ্যালঘু হিন্দুরা। এতকিছুর পরও ইউনূস প্রশাসন দাবি করে আসছিল বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুরা নিরাপদ আছেন। তাঁদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করছে পুলিশ-প্রশাসন। কিন্তু সে সমস্ত দাবি নস্যাৎ হয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। ব্রিটেনের সংসদে প্রবল সমালোচিত ইউনূস প্র্শাসন। এখন আমেরিকাও সুর চড়িয়েছে। ফলে পুরোপুরি বেকায়দায় মুহাম্মদ ইউনূস। এই পরিস্থিতিতে চিন্ময়কে কোনওভাবে মুক্তি দেওয়া যায় কিনা, ভেবে দেখার ইঙ্গিত দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই পরিস্থিতিতে চিম্ময় কৃষ্ণকে নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে দেশের সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে আলোচনায় বসতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। বিএনপি যেমন এই আলোচায় থাকছে। তেমনই বৈঠকে বসবেন দেশের ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গেও। অর্থাৎ, চিন্ময় কৃষ্ণ প্রভুকে মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হেফাজত, জামাতের মতো ধর্মীয় মৌলবাদী সংগঠনের অনুমতিও নিতে হবে মুহম্মদ ইউনুসকে।
Discussion about this post