বাংলাদেশের দুই ছাত্র নেতার উপর সম্প্রতি প্রাণঘাতী হামলা হয়েছিল। দুজনেরই মাথায় গুলি করে অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকবাজ। এরমধ্যে ইনকিলাব মঞ্চের প্রধান তথা ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যু হয়েছে। তবে খুলনায় এনসিপির এক শ্রমিক নেতা মোতালেব শিকদার এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনার পরই বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে একটা প্রবল আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছিলেন বলে জানা যায়। এই পরিস্থিতিতে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বাড়তি নিরাপত্তা প্রদান করা হবে। নিরাপত্তাগত ঝুঁকি থাকায় রাজনীতিক, সংবাদপত্রের সম্পাদক-সহ মোট ২০ জনকে নিরাপত্তা দিতে চলেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এরমধ্যে যেমন রয়েছে জামায়াতে ইসলামীর আমীর শফিকুর রহমান তেমনই রয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নাম। বিষয়টি নিয়ে এই মুহূর্তে যথেষ্টই কাঁটাছেঁড়া চলছে বাংলাদেশে। সোমবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, আইনশঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির বৈঠকে মোট ২০ জনকে সরকারি নিরাপত্তার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিরাপত্তা হিসেবে গানম্যান পাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা। এরা সকলেই জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃত্ব। অন্যদিকে জমাত প্রধান সফিকুর রহমান এবং গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁনও এই তালিকায় রয়েছেন। জানা যাচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
অন্যদিকে ইনকিলাব মঞ্চের প্রধান শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যার পর বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। হাদির হত্যাকারীরা দ্রুত গ্রেফতার না হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করার দাবি জানিয়েছিল ইনকিলাব মঞ্চ। যদিও সেই সময়সীমা অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকারীরা কোথায় আছে যদি জানা যেত তাহলে তো ধরেই ফেলতাম।
অন্যদিকে বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের মধ্য থেকেই দাবি উঠছে, জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ও ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির হত্যাকান্ড প্রমাণ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, হাদির মৃত্যুর পর বাংলাদেশ যেভাবে অশান্ত হয়ে উঠেছে, যে ভাবে আগুন জ্বলছে, সংখ্যালঘুদের উপর হামলা ও হত্যা করা হয়েছে তাতে একটা বিষয় স্পষ্ট, সরকার সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। দেশের রাজনীতিতে এক অশনি সংকেত। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা করা হয়েছে। প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন, নালন্দা বিদ্যালয়, উদীচীর কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টার আক্রমণ ও ভারতীয় হাইকমিশন আক্রমণ প্রচেষ্টা হয়েছে। যা নিয়ে জাতিসংঘ পর্যন্ত বিবৃতি দিয়েছে। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের তরফে প্রথমে ওসমান হাদির মৃত্যু এবং অশান্তি নিয়ে বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল। পরে ময়মনসিংহে এক হিন্দু যুবক দীপুচন্দ্র দাশের নৃশংশ হত্যার ঘটনা নিয়েও কড়া বিবৃতি জারি করলে জাতিসংঘ। এই আবহেই বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ ও সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে ইউনূস সরকার কার্যত এই দাবিতেই শিলমোহর দিল।











Discussion about this post