ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পৌঁছে গিয়েছেন আমেরিকায়। বছর শেষে তাঁর দীর্ঘ ৬ দিনের মার্কিন সফর ঘিরে বিশ্বজুড়েই তৈরি হয়েছে কৌতুহল। জো বাইডেনের সময়সীমা প্রায় শেষ, আর ২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই আবহে ভারতের বিদেশমন্ত্রী কাঁদের সঙ্গে বৈঠক করবেন, কোন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর বাড়তি তৎপরতা থাকে কিনা, সেটা নিয়েই এখন চর্চা চলছে। বছর শেষে :ছয় দিনের মার্কিন সফরে পৌঁছে গেলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ২৪-২৯ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকবেন, এই সময়কালে তিনি একাধিক বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছে বিদেশমন্ত্রক। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিদায়কাল ও পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেওয়ার এই বিশেষ সন্ধিক্ষণে এস জয়শঙ্করের মার্কিন সফর যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
আগামী ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক ভাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদের দায়িত্ব নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার আগে ভারতের বিদেশমন্ত্রীর মার্কিন সফর নিয়ে যথেষ্ট কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে কূটনৈতিক মহলে। বর্তমানে ভারতের তিন প্রতিবেশী দেশ, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ নিয়ে বিড়ম্বনায় মোদি সরকার। কারণ এককালে ভারতের বিশেষ বন্ধু দেশ বাংলাদেশ এখন ভারতের সঙ্গে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতে উদ্যোত। শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের পর মুহাম্মদ ইউনূসের তদারকি সরকার ছলে-বলে-কৌশলে ভারতকে প্যাঁচে ফেলতে চাইছে। এমনকি কারণে-অকারণে ভারতকে হুমকিও দিয়ে চলেছে। যদিও বড় প্রতিবেশী হিসেবে কূটনৈতিক শিষ্টাচার দেখিয়ে ভারত এখনও পর্যন্ত কড়া কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। কিন্তু শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন চেয়ে বাংলাদেশ এবার ভারতের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে দিল। ভারত যে কোনও মতেই হাসিনাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেবে না, সেটা ভালোভাবেই জানে মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাঁর উপদেষ্টামণ্ডলী। যে কারণে এতদিন মুখে বললেও সরকারিভাবে হাসিনার প্রত্যাবর্তন চায়নি তাঁরা। কিন্তু সম্প্রতি শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন চেয়ে নয়া দিল্লির কাছে ‘নোট ভার্বাল’ পাঠিয়েছে ঢাকা। যা নিয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে ভারত।
কূটনৈতিক মহলের মতে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নেওয়ার আগেই নিজের ক্যাবিনেট সাজিয়ে নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর তাতে বেশ কয়েকজন ভারতীয় বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিশেষ বার্তা নিয়ে তাই আমেরিকায় গিয়েছেন। যাতে ট্রাম্পের আমলে নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটনের সম্পর্ককে আরও মজবুত করা যায়। জয় শঙ্করের মার্কিন সফর নিয়ে বিদেশমন্ত্রক যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে, জয়শঙ্কর দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে অনেকগুলি বৈঠক করবেন। কূটনৈতিক মহল মনে করছেন, আঞ্চলিক বিষয় বলতে বাংলাদেশ সমস্যার কথাই বোঝানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৬ থেকে ২০২০ সালে ট্রাম্পের শাসনকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্পর্ক অতি সুমধুর ছিল। ট্রাম্প দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি মোদির নাম নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন। অপরদিকে জো বাইডেনের রাজত্বকালে আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক খুব একটা সুখকর ছিল না।
এই সময়কালে মার্কিন প্রশাসন বহুবার ভারতের বিভিন্ন আভ্যন্তরীন বিষয়ে মন্তব্য করে নরেন্দ্র মোদির বিড়ম্বনা বাড়িয়েছিল। কিন্তু আসন্ন ট্রাম্পের রাজত্বকালে এই সম্ভাবনা যাতে না তৈরি হয়, তাই আগেভাবেই ট্রাম্পের ক্যাবিনেটের কর্তাব্যাক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করতে আমেরিকা ছুঁটলেন জয়শঙ্কর। পাশাপাশি বাংলাদেশে মুসলিম মৌলবাদীদের রমরমা বৃদ্ধি, জঙ্গি কার্যকলাপ বেড়ে যাওয়া, জঙ্গিদের জেলমুক্তি এবং সে দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর ঘটে চলা নির্মম অত্যাচার নিয়েও ভারতের বক্তব্য জানানো হবে এই বৈঠকগুলিতে। পাশাপাশি বাংলাদেশের উপদেষ্টারা যেভাবে ভারতবিদ্বেষী মন্তব্য করছেন, ভারতে যুদ্ধের হুমকি দিচ্ছেন সেটা সম্পর্কেও ট্রাম্পের মার্কিন ক্যাবিনেটকে অবহিত করবেন বিদেশমন্ত্রী। মিয়ানমারের আরাকান আর্মি নিয়েও কথা হতে পারে বিভিন্ন স্ট্রাটেজিক পয়েন্ট থেকে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। ফলে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের এই ছয়দিনের মার্কিন সফরের দিকে নজর রাখছে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, চিনের মতো প্রতিবেশী দেশগুলি। আর এখন থেকেই আতঙ্কে দিন কাটানো শুরু করছেন মুহাম্মদ ইউনূস।
Discussion about this post