২১ নভেম্বর বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী দিবসে ঢাকার সেনাকুঞ্জে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে আসন আলো করে বসেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। বিএনপি-র চেয়ারপার্সন প্রায় এক যুগ পর এই অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন। অনুষ্ঠানে তাঁর পাশেই বসেছিলেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসও। পরে শারিরীক অসুস্থতা নিয়েও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ধন্যবাদ জানান বেগম খালেদা জিয়াকে। তাঁদের পাশাপাশি বসা একটি ছবি নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে বাংলাদেশ। কারণ বছর কয়েক আগে করা শেখ হাসিনার একটি মন্তব্য। যা নিয়ে এখন সামাজিক মাধ্যমে ট্রোলড হচ্ছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
২০২২ সালের ১৮ মে এক অনুষ্ঠানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করতে গিয়ে একটি মন্তব্য করেন। হাসিনার বক্তব্য ছিল, “খালেদা জিয়া বলেছিল জোড়াতালি দিয়ে পদ্মাসেতু বানাচ্ছে। ওখানে চড়া যাবে না, ভেঙে পড়বে। এর সাথে যুক্ত তাঁর দোসররাও। তাদেরকে কী করা উচিত? পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে পদ্মা নদীতে টুস করে ফেলে দেয়া উচিত”। এখানেই শেষ নয়, সেদিন তিনি বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। হাসিনা সেদিন বলেছিলেন, ইউনূস একটি এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর মতো প্রকল্পের টাকা বন্ধ করেছে। তাঁকেও পদ্মা নদীতে নিয়ে দুটি চুবানি দিয়ে উঠিয়ে নেয়া উচিত। মরে যাতে না যায়। পদ্মা নদীতে চুবনি দিয়ে সেতুতে তুলে দেয়া উচিত। তাহলে যদি এদের শিক্ষা হয়। ২০২২ সালের মে মাসে করা হাসিনার এই মন্তব্যই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। তাঁকে ট্রোল করে বাংলাদেশের নেটিজেনরা নানান মজার মিম ও কার্টুন তৈরি করেছেন।
ওই সমস্ত মিমে হাসিনার ওই মন্তব্য তুলে ধরে বলা হচ্ছে, কারও দিন সমান যায় না। এমনকি শেখ হাসিনার দম্ভ নিয়েও অনেকে পোস্ট করছেন। আসলে যে খালেদা জিয়াকে পদ্মা নদীতে টুস করে ফেলে দেওয়ার কথা বলেছিলেন হাসিনা, সেই বিএনপি নেত্রীই এখন বাংলাদেশে প্রথমসারিতে স্থান পাচ্ছেন। আর হাসিনা পালিয়ে বেঁচেছেন। আবার যে ইউনূসকে পদ্মা নদীতে চুবিয়ে শিক্ষা দেওয়ার কথা বলেছিলেন হাসিনা, সেই ইউনূসই এখন বাংলাদেশের ক্ষমতার শীর্ষে বসেছেন। তিনি হাসিনার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন। ফলে হাসিনার সেদিনের মন্তব্যগুলি নতুন করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনায় উঠে এল। বাংলাদেশের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল থেকে শুরু করে উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য বা বাংলাদেশের কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকও এই ট্রেন্ডে গা ভাসিয়ে ওই ছবি শেয়ার করেছেন। সকলেই চাইছেন হাসিনাকে অতীত স্মরণ করিয়ে দিতে। যদিও কেউ কেউ বলছেন, হাসিনা এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে দিল্লিতে বসে বাংলাদেশে ফেরার ছক কষছেন। ফলে তাঁকে এসব দেখিয়ে লাভ নেই। আবার অনেকে কমেন্ট করছেন হাসিনার বিপক্ষে। সবমিলিয়ে হাসিনা এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক চর্চায় উঠে এসেছেন।
প্রসঙ্গত, শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে বাংলাদেশের বিভিন্ন আদালতে। জানা যাচ্ছে, সেই টুস করে পদ্মা নদীতে চুবিয়ে দেওয়া মন্তব্য নিয়েও তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন আদালতে একটি মামলা দায়ের হয়েছে। তাতে পদ্মা সেতুতে চুবিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
Discussion about this post