গত শনিবার পাকিস্তানের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তান সীমান্তে পাকিস্তানি সেনার উপর বড়সড় হামলা চালিয়েছিল আফগানিস্তানের তেহরিক-ই-তালিবান। তাতে ১৬ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছিল। এরই বদলা হিসেবে পাকিস্তের বিমানবাহিনী হামলা চালায় আফগানিস্তানের পূর্ব পাকতিকা প্রদেশে। সেখানে পাক সেনাবাহিনীর বোমাবর্ষণে অন্তত ৪৬ জনের প্রাণহানী হয়েছিল বলে দাবি তালিবান প্রশাসনের। তাঁদের আরও দাবি, এই হামলায় মৃতদের বেশিরভাগই মহিলা ও শিশু। যদিও পাক সেনাবাহিনী এই হামলার কথা অস্বীকার করেছে। এরপরই পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে বাড়তে শুরু করে উত্তেজনা। তালিবানও হুমকি দেয় তাঁরা পাকিস্তানের এই হামলার বদলা নেবে। শনিবারই আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাকিস্তানের এয়ারস্ট্রাইকগুলোর প্রতিশোধ নিতে আফগান তালেবান বাহিনী পাকিস্তানের কয়েকটি স্থানে আক্রমণ চালিয়েছে। তালিবানের দাবি, প্রায় ১৫ হাজার সেনা এই ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে পাক সীমান্তে। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, আফগানিস্তানের কাবুল, কান্দাহার, হিরাটসহ আফগানিস্তানের নানা প্রদেশ থেকে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া সংলগ্ন মির আলি সীমান্তের দিকে রওনা দিয়েছেন প্রায় ১৫ হাজার তালিবান যোদ্ধা। যদিও সরকারি ভাবে এখনো বিষয়টি নিশ্চিত করেনি কোনো পক্ষই।
আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, রীতিমতো যুদ্ধপরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পাক-আফগান সীমান্তে। শনিবারই বেশ কয়েকটি পাকিস্তানি সেনা ছাউনিতে হামলা চালায় তালিবানি সেনা। তাতে একাধিক পাক সেনার মৃত্যুর খবর সামনে আসছে। যদিও পাকিস্তানের কোন কোন এলাকায় তালিবানি সেনা হামলা চালিয়েছে সেটা অবশ্য কোনও পক্ষই স্বীকার করেনি। তালিবান প্রশাসনের তরফে হামলার কথা জানানো হলেও নি্র্দিষ্ট কোনও এলাকার নাম জানানো হয়নি। অপরদিকে পাকিস্তানের পক্ষ থেকেও এখনও কোনও তথ্য জানানো হয়নি। তবে পাক-আফগান সীমান্তে পরিস্থিতি অতি ভয়াবহ। সংবাদ সংস্থা জানাচ্ছে, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যবর্তী কিছু এলাকায় বিতর্কিত সীমান্ত রয়েছে। তালিবান প্রশাসন এর মধ্যে বেশ কিছু এলাকা তাঁদের বলে দাবি করে আসছিল। মূল গোলমাল এই এলাকাগুলি নিয়েই। ফলে সেখানেই প্রথম সেনা ছাউনিতে হামলা চালিয়েছিল তেহরিক-তালিবান। পরে আফগানিস্তানে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান সেনা। এবার রীতিমতো সমরসজ্জা নিয়ে পাকিস্তানের দিকে এগিয়ে আসছে তালিবান।
আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, তালিবান সরকার এখন অনেকটাই ভারতের কাছাকাছি এসেছে। কারণ, তালিবানরা কাবুল দখল করার পর ভারত আফগানিস্তানের পুনর্গঠনের জন্য প্রচুর অর্থ সাহায্য করেছে। সেই সঙ্গে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। ফলে তালিবানরা ভারতকে বন্ধু বলেই মনে করে। অপরদিকে, সীমান্ত বিবাদ নিয়ে তালিবানদের সঙ্গে পাকিস্তানের বিবাদ প্রথম দিন থেকেই চলে আসছে। ফলে এবার যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেল। গোটা পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখছে ভারত সরকার। অপরদিকে পাকিস্তান এখন বাংলাদেশকে নতুন বন্ধু হিসেবে পেয়েছে। পাকিস্তান এখন সরাসরি বাংলাদেশকে সাহায্য করছে ভারতে জঙ্গি অনুপ্রবেশ করাতে। করাচি থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে সরাসরি জাহাজ পরিষেবা শুরু করেছে। সম্প্রতি সেই জাহাজের দুটি কন্টেনারে উচ্চ মাত্রায় বিস্ফোরক পাওয়া গিয়েছে বলেই দাবি। ফলে যেখানে পাকিস্তান ভারতের সীমান্তে উত্তেজনা তৈরির পরিকল্পনা করছিল, সেখানে এখন তাঁদের নিজেদের সীমান্তই বিপদের মুখে পড়ল।
Discussion about this post