বাংলাদেশে পালাবদলের পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক বোমা নিক্ষেপ করে চলেছেন বিতর্কিত লেখিকা তথা সমাজসেবী তসলিমা নাসরিন। এবার তাঁর ফেসবুক পেজে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন তদারকি সরকারের প্রধান মুহাম্মদ ইউনূসকে লিখলেন খোলা চিঠি। আর তা নিয়ে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। কি এমন লিখলেন এই বিতর্কিত লেখিকা?
তসলিমা ওই ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসক কয়েক বছর আগে তসলিমাকে দেশে ফেরার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তসলিমা এও মনে করিয়ে দিয়েছেন, ডঃ ইউনূস সে সময় তাঁকে বলেছিলেন, “যেতে দেবে না আবার কী? ওটা তো আপনার দেশ, আপনার দেশে আপনার যাওয়ার ও থাকার অধিকার জন্মগত। আপনাকে বাঁধা দেওয়ার রাইট কোনও সরকারের নেই”। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ থেকে বিতারিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তেমনই তসলিমা বহুকাল ধরেই ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। এই আবহেই তসলিমার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানকে দেওয়া খোলা চিঠির তাৎপর্য অনেকটাই বেশি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহল।
তসলিমা নাসরিন তাঁর ফেসবুক পোস্টে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানকে শ্রদ্ধেয় প্রফেসর ইউনূস বলে সম্বোধন করে লিখেছেন, “আপনার কি মনে আছে আমাদের দেখা হয়েছিল, একবার বা দু’বার, ইউরোপে? সম্ভবত ফ্রান্সের দোভিলে। উইমেন’স ফোরামের প্রোগ্রামে। সম্ভবত সাল ছিল ২০০৫। গালা ডিনারে অথবা লাঞ্চে এক টেবিলে আমাদের বসার ব্যবস্থা হয়েছিল, যে টেবিলে বড় বড় লোক ছিলেন। চেরি ব্লেয়ার ছিলেন, সে কথা মনে আছে। আমি সম্ভবত কী-নোট স্পিকার ছিলাম সেবার। আপনি খাবার টেবিলে বেশ কিছুক্ষণ আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, খাবার শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কিছুক্ষণ”। তারপরই তিনি লেখেন, “আপনি বার বার বলছিলেন, ”দেশে চলে আসুন, দেশে চলে আসুন”। আমি বলেছিলাম, ”কী করে যাবো? আমাকে তো দেশের সরকার যেতে দেয় না দেশে”। আপনি বলেছিলেন, ”যেতে দেয় না আবার কী? ওটা তো আপনার দেশ, আপনার দেশে আপনার যাওয়ার, থাকার অধিকার আপনার জন্মগত, আপনাকে বাধা দেওয়ার রাইট কোনও সরকারের নেই”। আমি দুঃখ করে বলেছি, ”আমি তো দূতাবাসে গেলাম কতবার, আমাকে ভিসাও দেয় না, আমার বাংলাদেশের পাসপোর্ট রিনিউও করে না”। আপনি বলেছিলেন, ”রিনিউ করবে না, বললেই হলো? দেশের মেয়ে দেশে চলে আসুন তো!” আমি বলেছিলাম, ”আপনি তাহলে চেষ্টা করুন”।
রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের মতে, মুহাম্মদ ইউনূসের উপর চাপ সৃষ্টি করতেই এই ধরণের পোস্ট করেছেন তসলিমা নাসরিন। কারণ এই পোস্টের পরবর্তী অংশে তসলিমা লিখেছেন, “এখন তো আপনি দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ধারণ করে আছেন। এখন কি আর আগের মতো বলবেন না, ” কী এত বাইরে বাইরে থাকছেন, দেশের মেয়ে দেশে চলে আসুন”? আগের মতো কি বলবেন না ”ও দেশ তো আপনার দেশ, আপনার দেশে আপনার যাওয়ার, থাকার অধিকার আপনার জন্মগত, আপনাকে বাধা দেওয়ার রাইট কোনও সরকারের নেই”? বলুন আবার আগের মতো। দেশে ফিরতে দিন। এখন তো আপনার হাতেই সব”। শেখ হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশ যে মৌলবাদীদের রমরমা বেড়েছে এ কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন তসলিমা। তিনি কটাক্ষের সুরেই মুহাম্মদ ইউনূসকে চ্যালেঞ্জ করে ফেসবুকে লিখেছেন, আপনাকে ঘিরে আছে যারা, তারা যে সবাই ইসলামী মৌলবাদি, তা তো আমার চেয়ে বেশি আপনি জানেন। আপনি কি ভয় পাচ্ছেন আমাকে সাহায্য করলে আপনার বিরুদ্ধে সরব হবে আপনার নতুন জিহাদি বন্ধুরা? শুধু আমার মুণ্ডুই নয়, আপনার মুণ্ডুও কেটে ফেলে রাখবে ঢাকার রাস্তায়?
সোশ্যাল মিডিয়ায় তসলিমার এই পোস্ট সামনে আসতেই বাংলাদেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। কারণ আগে থেকেই মুহাম্মদ ইউনূসের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড এবং নির্দেশিকা নিয়ে ধারাবাহিক সমালোচনা করে যাচ্ছেন তসলিমা। এমনকি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর আক্রমণের বিরুদ্ধেও সরব হয়েছিলেন তিনি। এবার সরাসরি মুহাম্মদ ইউনূসকে খোলা চিঠি দিয়ে কড়া চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন বাংলাদেশ থেকে বিতারিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন।
Discussion about this post